১৯ বছরে এনটিভি
আজ ৩ জুলাই (শনিবার) বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র দেড় যুগ পূর্তি হলো। সেই সঙ্গে এটি পদার্পণ করল ১৯ বছরে। ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’- স্লোগান সামনে রেখে ২০০৩ সালের ৩ জুলাই এনটিভি যাত্রা শুরু করেছিল। সেই হিসাবে, দেড় যুগ পেরিয়ে উনিশে পদার্পণ করেছে এই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানটি।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণীতে প্রতিষ্ঠানটিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সরকারি দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন এনটিভিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন এনটিভির ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ, কলাকুশলী, সংবাদকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের বিকাশ, জনমত গঠন এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমান সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। গণমাধ্যম যাতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা একান্ত অপরিহার্য। পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোকে দেশের সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ অনুষ্ঠান প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমসমূহ দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অধিকতর দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারি মোকাবিলায় গণমাধ্যমের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমি জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ করোনাবিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনটিভি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ১৮তম বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি এনটিভির পরিচালনা পর্ষদ, সাংবাদিক, কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।’
আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় গণমাধ্যমের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরাই দেশে প্রথম বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চালুর অনুমোদন দিই। আমাদের সরকার রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য অর্জনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সাল থেকে গণমাধ্যম, তথ্য ও তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ৪৫টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন করেছি। বর্তমানে দেশের সব চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
২০২০ সালকে তাৎপর্যপূর্ণ বছর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আমরা পরিকল্পনামাফিক অনুষ্ঠানসমূহ উদযাপন করতে পারিনি। জনগণের সার্বিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে জনসমাগম হয়, এমন অনুষ্ঠান স্থগিত করেছি। টেলিভিশন, বেতার এবং ডিজিটাল মাধ্যমে কিছু কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে।’
এনটিভিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এনটিভি পরিবারকে আমি অভিনন্দন জানাই। প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ। এনটিভি সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতি লালন করার ক্ষেত্রে, নতুন প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করার ক্ষেত্রে এবং বাঙালি সংস্কৃতি পালন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঊর্ধ্বে ধরে রাখতে কাজ করার চেষ্টা করেছে। আজ করোনা মহামারির মধ্যেও সাংবাদিকরা, বিশেষ করে সব মাধ্যমের সাংবাদিকেরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এনটিভির অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও টেলিভিশনগুলোর মালিকপক্ষ, পরিচালনা পরিষদ চালু রেখেছে। এ জন্য তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।
নিজেদের দর্শক, কেবল অপারেটর, বিজ্ঞাপনদাতা ও সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এনটিভির প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এনটিভি দুই দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। শুক্রবার (২ জুলাই) সম্প্রচার হয় প্রথম দিনের আয়োজন। আজ শনিবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে প্রচার হয় বিশেষ বাংলা ছায়াছবি ‘প্রেমে পড়েছি’। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে প্রচার হয় বিশেষ টেলিফিল্ম ‘ব্যাচ ২৭ দ্য লাস্ট পেজ’। দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে সরাসরি সম্প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘প্রত্যাশার আগামী’। রাত ১১টা ৩০ মিনিটে সরাসরি সম্প্রচার হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘এ লগন গান শোনাবার’-এর বিশেষ পর্ব।
পিএসডি/এইচকে