বাসাবাড়ির ময়লা নেওয়া বন্ধের হুমকি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের

শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের ব্যবসার জন্য বর্জ্যের টেন্ডার বন্ধ না করলে বাসাবাড়ির ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রাথমিক ময়লা সংগ্রহ ও সেবাদানকারীদের সংগঠন পিডব্লিউসিএসপি আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ হুমকি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ৬ দফা দাবিও জানিয়েছেন তারা।
তাদের দাবি গুলো হলো- প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের হাতে গড়া ফাউন্ডেশন প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারের (পিডব্লিউসিএসপি) প্রত্যয়ন ফিরিয়ে দেওয়া; ময়লা সংগ্রহ কাজের অধিক দামের টেন্ডারে বন্ধ করা; সুষ্ঠু নীতিমালা করে স্বল্প সেবামূল্য নির্ধারণ করে তাদেরকে অনুমোদন দেওয়া; ময়লা সংগ্রহের কাজে কাউন্সিলরদের দখলবাজি বন্ধ করা; প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত সংগঠনগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রতিমাসে অন্তত দুই মেয়রকে আমাদের সঙ্গে বসে মতবিনিময় করা। মানববন্ধনে অন্তত দুই শতাধিক পরিচ্ছন্নকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, আপনারা জানেন, ঢাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন পিডব্লিউসিএসপি সুসংগঠক প্রয়াত মেয়র মো. আনিসুল হক। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর তিনি ২০১৫ সালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওয়ার্ডভিত্তিক সব সংগঠনকে একত্রিত করে ময়লা নিয়ে কাজ করার জন্য এই ফাউন্ডেশনকে প্রত্যয়ন দেওয়ার ক্ষমতা দেন। কিন্তু প্রয়াত মেয়রের সেই উদ্যোগকে ধ্বংস করে ১৯ হাজার বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হরণ করে শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের ব্যবসার জন্য এখন ময়লা সংগ্রহের কাজকে টেন্ডারে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাকার বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটি শুধু নির্ধারিত কন্টেইনার থেকে ল্যান্ডফিলে ময়লা অপসারণের কাজ করছে। তাদের যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা সম্ভব না। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শুধুমাত্র শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ঝাড়ু দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের পিডব্লিউসিএসপির প্রায় ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নাগরিকদের বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের কন্টেইনারে পৌঁছে দেয়। এজন্য শুধুমাত্র সেবা মূল্য হিসেবে আমরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে নিতাম। যা দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও অফিস ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হতো।
পরিছন্নকর্মীদের এই সভাপতি বলেন, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য যে, নগরবাসী তাদের হোল্ডিং করের সঙ্গে মোট করের দুই শতাংশ বর্জ্যের জন্য বিল দিয়ে থাকেন। তার সঙ্গে আবার নতুন করে ১০০ টাকা ধার্য করে টেন্ডারের মাধ্যমে এই কাজ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে যেসব বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা এখন কর্ম হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। এরই মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের ময়লা সংগ্রহের কাজ টেন্ডারে দিয়ে দিয়েছে। এতে দক্ষিণ সিটিতে আমাদের ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এখন কর্ম হারিয়ে বিভিন্ন অপরাধকাণ্ডে জড়িত হচ্ছেন।
নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, ময়লা সংগ্রহের এই সেবামূলক পুরো কাজ এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। টেন্ডারে দেয়ার কারণে দক্ষিণ সিটিতে নাগরিকদের হয়রানি আরও বেড়েছে। ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ময়লার বিল ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাধর কাউন্সিলর বা ঠিকাদারদের লোকজন সেই ১০০ টাকার পরিবর্তে কোথাও কোথাও ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। সিটি করপোরেশন কৌশলে তাদের কাউন্সিলরদের হাতে এই সেবামূলক কাজকে ব্যবসায় রূপান্তর করে কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দিয়েছে। এতে যেমন অতিরিক্ত করের চাপে পড়ছে নগরববাসী, ঠিক একইভাবে এই করোনাকালে কর্ম হারাতে বসেছেন আমাদের বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দুই মেয়রের আচরণে হতবাক হয়েছি। নগরের বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরা যখন এই শহরকে পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করে আসছি ঠিক সেই কর্মীরা গত দুই বছর ধরে দুই মেয়রের সঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু আমাদেরকে কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। আমরা বহুবার মেয়রকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনও কর্ণপাত করেননি। আমাদের কোনো কথাও শুনতে রাজি হননি। তারা চান, এই ময়লা সংগ্রহের সেবামূলক কাজকে টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিণত করে কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। এর প্রতিবাদে আমরা যখন গত ১২ জানুয়ারি এই জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি, তখন মেয়র আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাজি হলেন। তিনি ডেকে নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলে দিলেন, আমাদের অনুমোদন দিয়ে দিতে। তখন আমরা সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করি। এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদেরকে বললেন, মেয়র নাকি তাকে কিছুই বলেননি। অপরদিকে বর্তমানে আমাদের কোনো অনুমোদন না থাকায় সব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও তাদের সন্ত্রাসীরা আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ড দখল করে নিয়েছে। আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, কাউন্সিলরদের চাপের কারণে এই টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে।
এইচএন/এফআর