ফাগুন আর ভালোবাসার আগুন ফুলের বাজারে

আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, তুমি আমার; ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান। গানগুলোর গুঞ্জনই বলে দেয় আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। মাঘের বিদায়, ফাগুনের বাতাস আর ভালোবাসা দিবসের আমেজ। দিনটি মাথায় রেখে লাল ও হলুদসহ নানা রঙের চোখ জুড়ানো তাজা ফুলে সেজেছে রাজধানীর ফুলের দোকানগুলো।
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে মিল রেখে পাঞ্জাবি-শাড়িতে ফুলের দোকানে ভিড় তরুণ-তরুণীদের। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের ঘ্রাণের বিপরীতে বাড়ছে দাম। তাই বলে থেমে নেই ফুল কেনাবেচা।
বাংলা মাসের হিসাবে এবারের ভালোবাসা দিবসে নতুন মাত্রা পেয়েছে পহেলা ফাল্গুন। এ দিনগুলোতে ভালোবাসা বিনিময়ের অন্যতম উপহার ফুল। আর সে ফুলের মধ্যে পছন্দের শীর্ষে গোলাপ। দিনটিতে অধিকাংশ তরুণীর হাতে, খোপায় দেখা যায় লাল রঙের গোলাপ। সে লাল গোলাপের দামেই যেন আগুন লেগেছে।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানভেদে ফুলের দোকানগুলোতে প্রতি পিস গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০-৫০ টাকার করে। এছাড়া রজনীগন্ধার দাম প্রতি পিস ১৫ টাকা। এদিকে, গ্ল্যাডিওলাস ফুলের প্রতি স্টিক ২৫ টাকা করে, চন্দ্রমল্লিকা ফুল ১০ টাকা পিস, ক্যালেন্ডার ফুল প্রতি পিস ৫ টাকা, গাঁদা ফুলের মালা ৪০ টাকা ও দেশে চাষ হওয়া অর্কিড প্রতি স্টিক ১০০-১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
আগারগাঁও এর খুচরা ফুল বিক্রেতা মো. ইলিয়াস বলেন, পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের বিক্রি স্বাভাবিক। তবে করোনার মহামারি না থাকলে বেচাকেনা হয়ত আরও বেশি হত। তবে সব মিলিয়ে ভালো বলা যায়।
মো. মিজান নামে এক ক্রেতা বলেন, ফুলের দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। বিশেষ করে গোলাপ ও রজনীগন্ধার ফুলের দাম। এছাড়া বাকি সব ফুলের দাম ঠিক আছে।

এর আগে (শনিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পাইকারি ফুলের বাজার ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, দুই দিবস একদিনে হওয়ায় হরেক রকমের ফুলের পসরা নিয়ে বসেছে পাইকাররা। নিজস্ব নার্সারির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে-পিকআপে এসেছে ফুল। এরমধ্যে দামে ও চাহিদার শীর্ষে ভালোবাসার প্রতীক লাল গোলাপ। আরও ছিলো, হলুদ-কমলা রঙের গাঁদা ফুলের ও রজনীগন্ধার মালা। স্তূপ করে রাখা হয়েছে ছোট-বড় লাল, সাদা, হলুদ গোলাপ। বালতি ভর্তি দেখা গেছে বেশ কয়েক রঙের জারবেরা। খুচরা বিক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
পাইকারি বাজারটিতে ৫০ পিস গোলাপ একসঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। যেখানে প্রতি পিসের দাম পড়ছে ৮/১০ টাকা। তবে এক পিস লাল গোলাপ কিনতে গেলেই গুণতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গাঁদা ফুলের ২০টি মালায় এক ঝেঁপো বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। জারবেরা ১০/২০ টাকা পিস। গ্লাডিওলাসের পিস ১০/১৫ টাকা। রজনীগন্ধা ৫০ পিস ৫৫০ টাকা।

ওইদিন বাজারে কথা হয়, আলমগীর নামে এক বিক্রেতার সঙ্গে। হাতে ৫০টি লাল গোলাপের তোড়া। দাম হাঁকাচ্ছেন ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, কাল (আজ) ভালবাসা দিবস সঙ্গে ফাল্গুন। লাল গোলাপের আকর্ষণ, চাহিদা দুটোই বেশি। তাই দামটাও বাড়তি।
সবুজ নামে ফুল দোকানি বলেন, এই বাজারে ফুলের দাম সবসময় উঠানামা করে। এবার করোনার কারণে ফুলের বাজারে খরা গেছে। তবে আজকে বাজার জমেছে। অনেক ফুল বেচা হচ্ছে। টাটকা ফুলের আগ্রহ খুচরা ক্রেতাদের।
আগারগাঁওয়ের ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আলম বলেছিলেন, ট্রাক-পিকআপ থেকে ফুল নামানোর আগেই শুরু বেচাকেনা। বাজার ভালো থাকলে দিনব্যাপী চলবে বেচাকেনা। এ বাজারে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, দোলনচাঁপা ও অর্কিড পাওয়া যায় সারাবছর। এছাড়া মৌসুমি ফুলও ওঠে।
জেইউ/এমএসি/এমএইচএস