পাওনাদারকে মেরে ১৬ ফুট বালির নিচে পুঁতে রাখেন তারা

মাটি কাটার ভেকু মেশিন দিয়ে ব্যবসা করার জন্য রিপন মন্ডলের মাধ্যমে নয়ন মন্ডলকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেন জুয়েলারি ব্যবসায়ী অনুপ বাউল। পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় অনুপের সঙ্গে বিরোধ হয় নয়নের।
এক পর্যায়ে অনুপকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন নয়ন। পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুপকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বালির নিচে পুঁতে রাখেন নয়ন ও তার সহযোগীরা। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ মাস পর অনুপের মরদেহ ১৬ ফুট বালির নিচ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়নসহ চার জনকে পিবিআই গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য তিনজন হলেন, রিপন মন্ডল, পিযুষ করাতি ও দিলীপ চন্দ্র রায়। বৃহস্পতিবার (২ জুন) বিকেলে ধানমন্ডির পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, গত ৪ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকা থেকে শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুর যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন অনুপ বাউল। পরদিন ৫ জানুয়ারি তার ছোট ভাই বিপ্লব বাউল সিরাজদিখান থানায় একটি জিডি করেন।
তিনি বলেন, পরে বিপ্লব বাউল বাদী হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ মামলাটি প্রায় তিন মাস তদন্ত করে। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে গত ২১ এপ্রিল পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার পায়।
তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক মো. সালেহ ইমরানকে। তিনি প্রথমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত রিপন এবং ড্রামে করে মরদেহ বহনকারী অটোচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য, গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে রিপন মণ্ডলকে চিহ্নিত করা হয়। তারপর অনেকটা নিশ্চিত হয়ে আসামি রিপন, পিযুষ, নয়ন ও দিলীপকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লাশ গুমের স্থান চিহ্নিত করা হয়। বুধবার সিরাজদিখান এলাকার বোয়ালখালী এলাকা থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে ১৬ ফুট গভীর বালির নিচ থেকে অনুপ বাউলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, অনুপ বাউলের স্বর্ণ ব্যবসার পার্টনার নয়ন মন্ডল। তাদের দুজনের মধ্যে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে নয়ন মন্ডল স্বর্ণ ব্যবসায়ী অনুপ বাউলকে খুনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী নয়ন তার চাচাতো ভাই রিপন, পিযুষ ও দিলীপের সাহায্য নিয়ে অনুপ বাউলকে হত্যা করেন।
গত ৪ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে নয়ন মন্ডল অনুপ বাউলকে পাওনা টাকা দেওয়া এবং মাদারীপুরে স্বর্ণের অর্ডার পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জয়েনপুরে ডেকে নিয়ে আসেন। জয়েনপুরে রিপন মন্ডলের গ্যারেজে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন পিযুষ ও দিলীপ। সঙ্গে রিপন মন্ডলও ছিলেন। নয়ন সেখানে অনুপকে নিয়ে গেলে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।
এক পর্যায়ে চারজন মিলে অনুপ বাউলকে গ্যারেজের খাটের মধ্যে ফেলে কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর মরদেহ একটি ড্রামে ভরে রাখেন। পরে বিকেল ৩টার দিকে একটি অটোতে করে আসামিরা মরদেহভর্তি ড্রামটি মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদী খান থানার বোয়ালখালীর বিসিক এলাকায় বালুর মাঠের কাছে নিয়ে যান। ড্রাম রেখে অটোচালক চলে গেলে আসামিরা ড্রামটিকে বালুর মাঠে নিয়ে যান। তারপর মরদেহ পুঁতে রাখেন।
পিবিআই প্রধান বলেন, মরদেহ পুঁতে রাখার পর নয়ন তার প্রতিবেশী পিংকুর বাসায় গিয়ে গোসল করেন। যেহেতু নয়নের সঙ্গে অনুপের মাদারীপুর যাওয়ার কথা ছিল, তাই স্বজনরা নয়নের কাছে অনুপের বিষয়ে জানতে চান। নয়ন অনুপের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং নিখোঁজ অনুপকে খোঁজাখুঁজিতে অংশ নেন। বিভিন্ন সংস্থা ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও নয়ন হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
আসামিদের আদালতে সোপর্দ করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান।
এমএসি/আরএইচ