‘মাঙ্কিপক্স নয়, হতে পারে পুরোনো চর্মরোগ’

মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত সন্দেহে ঢাকায় যে তুর্কি নাগরিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তিনি আসলে কোনো চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, শরীরে যে র্যাশের কারণে তাকে মাঙ্কিপক্স রোগী বলে সন্দেহ করা হয়েছে, সেগুলো দীর্ঘদিনের চর্মরোগ। তার চিকিৎসার ইতিহাস পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে এটা পুরোনো চর্মরোগ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক এসব কথা বলেন।
এর আগে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আজ দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান ওই তুর্কি নাগরিক। এরপর বিমানবন্দরে তার কিছু উপসর্গে মাঙ্কিপক্স সন্দেহ হলে কর্তৃপক্ষ তাকে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে ইতোমধ্যে তার নমুনা সংগ্রহ করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, মাঙ্কিপক্স সন্দেহে তুরস্কের যে নাগরিককে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি তার শরীরে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ নেই। তারপরও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করেছে, আরটিপিসিআর টেস্টের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টায় নিশ্চিত হওয়া যাবে ওই রোগী ম্যাক্সিপক্সে আক্রান্ত কি না।
পাসপোর্ট অনুযায়ী ম্যাক্সিপক্সে আক্রান্ত সন্দেহভাজন ৩০ বছর বয়সী ওই তুর্কি নাগরিকের নাম আক্কোশ আলতে।
দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কোনো রোগী নেই : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
এদিকে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত সন্দেহে ওই তুর্কি নাগরিককে হাসপাতালে ভর্তির খবর গণমাধ্যমে আসার পর ‘দেশে বিদেশি একজন নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্সের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে’ বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।
বিভ্রান্তি নিরসনে বিকেলে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেউ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমসহ দেশের বেশকিছু অনলাইন ও ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে ‘দেশে বিদেশি একজন নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্সের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে’ মর্মে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। যা আসলে সঠিক নয়। দেশে মাঙ্কিপক্সে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হননি। ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তির আক্রান্তের ঘটনা কখনো ঘটলে তা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। এই মুহূর্তে দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি নেই।
যা বলছে টার্কিশ এয়ারলাইন্স
টার্কিশ এয়ারলাইন্স বলছে তাদের পক্ষ থেকেও দুজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখান থেকেও এটি মাঙ্কিপক্স না হওয়ারই ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই যাত্রীর বিষয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্স তুরস্কের দুইজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন, এটা এক ধরনের দাদ রোগ। তুরস্কে অনেকের মধ্যেই এই রোগ রয়েছে। তাছাড়া ওই ব্যক্তির হাত, পা ও মাথায় চুলের নিচে এই দাদের মতো চিহ্ন দেখা গেছে। মাঙ্কিপক্স সাধারণত মাথার চুলের নিচে হওয়ার কথা নয়।
এদিকে ওই বিমানে মোট ২১৬ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে মনিটরিং করছে টার্কিশ এয়ারলাইন্স।
মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স এক ধরনের ভাইরাস জনিত ইনফেকশন, যে ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকা ও মধ্য আফ্রিকার জঙ্গলের ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর মধ্যে থাকে।
গত ৭ মে যুক্তরাজ্যে নাইজেরিয়া ফেরত এক ব্যক্তির দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস শনাক্ত হয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
অল্প সময়ের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দেশে নানা গোষ্ঠীর মধ্যে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাবনায় ফেলেছে। বড় আকারে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তবে বিজ্ঞানীরা এ কথাও বলছেন যে, আমাদের এখনই এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই।
টিআই/এনএফ