শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের বন্ধু, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য (ভিডিওতে ধারণকৃত) প্রচার করা হয়। বর্তমানে তিনি কম্বোডিয়া সফরে রয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান শেখ কামালের কর্মময় জীবনের নানাদিক স্মৃতিচারণ করে বলেন, শেখ কামাল বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন, শেখ কামাল যদি বেঁচে থাকতেন, আজ আমরা (বাংলাদেশ) যে জায়গায় পৌঁছেছি, তা অনেক আগেই অর্জন সম্ভব হতো।
ড. মোমেন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম ক্রীড়া সংগঠক ও বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। মাত্র ২৬ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে এ দেশকে তিনি অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। ক্ষমতার বলয়ের খুব কাছে থেকেও তিনি ছিলেন নিজ গুণে উজ্জ্বল। মুক্তিবাহিনীর সুদক্ষ নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের মধ্য থেকে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত ৬১ জনের মধ্যে শেখ কামাল ছিলেন অন্যতম। তিনি মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বাহিনীর সংগঠনে ও তাদের প্রশিক্ষণে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনরুদ্ধারে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কাজ করেছেন।
ড. মোমেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের ভলিবল ও হকিতে শেখ কামালকে সম্পৃক্ত করার স্মৃতিচারণ করে বলেন, প্রবল ক্রীড়ানুরাগীও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব ছিলেন শেখ কামাল। স্কুলজীবন থেকেই তিনি ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, দেশের যুবকদের যুবশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে শেখ কামালের যে অবিস্মরণীয় অবদান তা ইতিহাসের পাতায় তাকে দিয়েছে এক স্বকীয় মর্যাদা। কেবল অর্থনৈতিক মুক্তি নয়, মেধা-মননের উন্নয়ন ছাড়া কোন দেশের উন্নয়ন যে টেকসই হয় না সেটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। এ দেশের যুবসমাজের উন্নয়নে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন।
মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা। একটি উন্নত যে উন্নত, সমৃদ্ধশালী, স্থিতিশীল অসাম্প্রদায়িক অর্থনীতি যেখানে ধনী ও দরিদ্রের আকাশসম পার্থক্য থাকবে না। যেখানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য নিশ্চিত হবে। এই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের সাফল্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে, বাংলাদেশের জনগণের সাফল্য বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা, মননশীলতা তুলে ধরতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিদেশের মিশনগুলো প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শেখ কামালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যার বয়স ছিল একুশ বছর, তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার পিতাকে গ্রেপ্তার করে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়ার পরে তিনি (শেখ কামাল) সুকৌশলে তাদের বাড়ি থেকে লুকিয়ে চলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, যে বাড়িতে তখন শেখ কামালই ছিলেন বয়ঃজ্যেষ্ঠ পুরুষ, তিনি কিন্তু দেশের টানে, দেশের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের জন্য তার পরিবারের অন্য সদস্যদের একপ্রকার অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি শেখ কামালের নির্মোহ ও সাধারণ জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিশুকাল থেকে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সবসময়, খুবই সাধারণ একজন শিশু, সাধারণ একজন তরুণ হিসেবেই আমরা তাকে দেখেছি।
তিনি বলেন, শেখ কামালকে নিয়ে অনেক অপপ্রচার করা হয়েছে।..... ভুল সময়ে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম, আমরা কিন্তু জানতাম না যে, শেখ কামাল সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি যে মুক্তিবাহিনীর সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর এডিসি ছিলেন। ..... শেখ কামাল যে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন, এটা কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের সময় কখনও বলা হয়নি। বরং মুছে ফেলা হয়েছে।
স্মরণ সভায় শেখ কামালের কর্মময় জীবনের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং শেখ কামাল এবং ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টে শাহাদাত বরণকারী সবার রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এনআই/এসএসএইচ