শহুরে বইমেলায় গ্রামীণ ছোঁয়া

বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। এবারের মেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দিয়েছে বাংলা একাডেমি। এসব স্টল ও প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়ায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে আকাশ প্রকাশনী। পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণে এই স্টলে আনা হয়েছে গ্রামীণ ছোঁয়া। ঘরের আকৃতিতে বাঁশের তৈরি স্টলটি এরই মধ্যে মেলায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ কারণে স্টলটি দেখতে প্রতিদিন পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে।
বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্টল। মনে হচ্ছে যেন গ্রামের কোনো বইমেলার দৃশ্য। এছাড়া বাঁশের চটি দিয়ে তৈরি ভোরের শিশির প্রকাশনীর উপরিভাগে শোভা পেয়েছে দূর্বাঘাসের উপর ঝিরিঝিরি শিশিরের ছোঁয়া। যা সহজেই আকৃষ্ট করে শহুরে জীবনের যান্ত্রিক মানুষকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বইমেলায় ভিন্নতা আনতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিক্রি কম হলেও পাঠক-দর্শনার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় খুশি তারা। অন্যদিকে এমন ভিন্নতায় খুশি দর্শনার্থীরাও। তারা বলছেন, এটা যে বাংলাদেশের বইমেলা সেটা আরেকবার মনে করিয়ে দেয় এ স্টলগুলো।
এমন উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবীন আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা একটু ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছি। বইমেলায় স্টল-প্যাভিলিয়নগুলো সাধারণত বিদেশি সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে তৈরি করা হয়। আমরা চেয়েছি এটা যে বাংলাদেশের মেলা সেটা ফুটিয়ে তুলতে। তাই গ্রামীণ আবহে স্টল তৈরি করেছি। দর্শনার্থীরা বেশ উপভোগও করছেন। রোদ, বৃষ্টি কিংবা ঠান্ডা বাতাস সবকিছু থেকে মুক্ত থাকবে আমাদের স্টল।
শ্রাবণ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সাদিয়া মেহজাবিন তুষির সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্রি খুবই কম হচ্ছে। বেশিরভাগ দর্শনার্থীই আসেন ছবি তুলতে। প্রতিদিন সাংবাদিকরাও আসেন আমাদের স্টলে। এমন ভিন্ন একটা স্টলে কাজ করতে পেরে ভালোই লাগছে।
আকাশ প্রকাশনীর স্টলের দায়িত্বে থাকা জুয়েল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগেও আমাদের স্টল খোলামেলা ছিল। এবার আমরা চেয়েছি ঘরের মতো করতে। আমরা ভাবলাম যদি একটা গ্রামীণ পরিবেশ আনতে পারি তাহলে পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পারব। বিক্রিটা আমাদের মূল টার্গেট নয়, প্রচারই আমাদের মূল টার্গেট। সে জায়গা থেকে আমরা সফল। অনেক দর্শনার্থী আসছেন, ছবি তুলছেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন।
আকাশ প্রকাশনীর সামনেই বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলছিলেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া। তিনি বলেন, এমন স্টল আগে কখনো দেখিনি। গ্রামীণ পরিবেশের এই স্টল দেখে তাই ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারিনি। এই স্টলগুলো মেলাকে ভিন্ন আমেজ উপহার দিয়েছে।
শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে বই কিনছিলেন জামিন ইসলাম নামে একজন বই প্রেমী। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এটা যে বাংলাদেশের বইমেলা সেটা মনে করিয়ে দেয় এই স্টলগুলো। মেলায় ঢুকতেই দৃষ্টি আকর্ষণ হলো। অনেকেই দেখছি ছবি তুলছে। আমি দুইটি বই কিনলাম।
আজ বুধবার অমর একুশে বইমেলার ৮ম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ১১৪টি।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি গুপ্তাদ আলি আকবর খান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কমল খাপিন এবং আলী এফ. এম. রেজওয়ান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেখ সাদী খান।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন হাবিব আনিসুর রহমান, গাজী আজিজুর রহমান, রাসেল রায়হান, ইসমত শিল্পী।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, জাহিদ হায়দার, স্মৃতি আক্তার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তি শিল্পী মো. শাহাদাৎ হোসেন, এনামুল হক বাবু এবং চৈতালী হালদার। ফয়জুল্লাহ সাঈদের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শিল্পবৃত্ত’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, আলম দেওয়ান, মমতা দাসী বাউল, মো. আবুল বাশার, ফারজানা আফরিন ইভা, পাগলা বাবলু, মো. আনোয়ার হোসেন এবং সন্ধ্যা রানী দত্ত। যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), আনোয়ার সাহাদাত রবিন (কী-বোর্ড), সুমন কুমার শীল (দোভারা), মো. শহীদুল ইসলাম (বাঁশি)।
আগামীকালের সময়সূচি
আগামীকাল বৃহস্পতিবার অমর একুশে বইমেলার ৯ম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি : কবীর চৌধুরী এবং জন্মশতবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি : সাংবাদিক-সাহিত্যিক জহুর হোসেন চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবদুস সেলিম ও জাহীদ রেজা নূর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, খায়রুল আলম সবুজ, মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং মুস্তাফিজ শফি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শফি আহমেদ।
এইচআর/এসকেডি