স্ত্রীসহ পুলিশের ওসির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

পৌনে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাতক্ষীরা কলারোয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী জেসমিন সুলতানার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদের মধ্যে নিজ ও স্ত্রীর নামে সাভারে ৯ তলা ও ৪ তলা দুটি বাড়ির তথ্য রয়েছে।
বুধবার (১ মার্চ) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ১৯৮৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। তার প্রথম স্ত্রী রিতা বেগমের সঙ্গে ২০০৩ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তিনি দ্বিতীয়বার ২০০৬ সালে জেসমিন সুলতানাকে বিয়ে করেন। তিনি পেশায় একজন গৃহিণী।
>> পৌনে ৩ কোটি টাকার সম্পদে ফাঁসলেন স্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তা
তিনি ও তার স্ত্রী জেসমিন সুলতানার নামে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার দিয়াখালীর সাড়ে ১০ শতাংশ জমির ওপর (জেবা ম্যানশন নামীয় পাঁচ ইউনিট) ৯তলা বাড়ি এবং আশুলিয়ায় ৪ তলা বাড়িসহ ৮.২৫ শতাংশ জমি। যার বিপরীতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ওই বাড়ি দুটি নির্মাণ করেছেন। ওই বাড়ি নির্মাণের সময় তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে ৮৭ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন। অথচ তার স্ত্রীর আয়ের কোনো বৈধ উৎস বা ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই।
অনুসন্ধানকালে মোফাজ্জল হোসেনের নামে ৫ কোটি ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৬ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তাদের যৌথ নামের দুটি বাড়ি নির্মাণের পর ২০২১-২২ কর বর্ষে আয়কর নথি খোলেন। যেখানে অতীত জীবনের সঞ্চয় ১ কোটি ৩২ লাখ ২৮ হাজার ১৮৪ টাকা, ব্যাংক ঋণ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ও ফ্ল্যাট বন্ধক ৬০ লাখ টাকাসহ ৪ কোটি ৩৮ লাখ ২৭ হাজার ৯৫৭ আয়ের উৎস প্রদর্শন করেছেন। এর মধ্যে ফ্ল্যাট বন্ধকের ৬০ লাখ টাকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। মোট ৩ কোটি ৭৮ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৫ টাকার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়। মোট ১ কোটি ৩২ লাখ ৪১ হাজার ১৭১ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। যা দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অন্যদিকে অনুসন্ধানকালে জেসমিন সুলতানার নামে ২ কোটি ২ লাখ ৮০ হাজার ৯৭৯ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্যসহ মোট ৩ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৯৭৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে ঋণ, সঞ্চয় ও বাড়ি ভাড়াসহ ২ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৬ টাকার আয়ের উৎস পাওয়া যায়। তবে ১ কোটি ৩৮ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৫ টাকা বাদে অন্য কোনো আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, জেসমিন সুলতানা একজন গৃহিনী। তার নামে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। তার আয়ের কোনো বৈধ উৎসও নেই। স্বামী মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ওসি হিসেবে পুলিশে কর্মরত থাকাকালে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারাই সম্পদ অর্জিত হয়েছে।
যে কারণে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
আরএম/ওএফ