বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি গঠন জরুরি

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবনে বসবাস নিরাপদ করতে অতি দ্রুত বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, মানুষের জীবন ও সম্পদকে যথোপযুক্ত গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে নাগরিকদের নগর এলাকায় বসবাস নিরাপদ করতে অতীতের দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপদ নগর গড়তে রাষ্ট্র, নগর কর্তৃপক্ষ, সেবা সংস্থা, শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) কর্তৃক অনলাইনে আয়োজিত ‘নগরে নাগরিকদের বসবাস ঝুঁকি ও জীবনের নিরাপত্তা : নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং নগর সংস্থাসমূহের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, মানুষের জীবন অমূল্য, নগরে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে আইন ও বিধি বিধানের কোনো অভাব নেই, প্রয়োজন আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে ভবন মালিক ও সেবাসংস্থাগুলোকে বাধ্য করতে হবে। আমাদের সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ ও অগ্নি দুর্ঘটনাগুলোর নির্মোহ তদন্তের মাধ্যমে করণীয়গুলো ঠিক করতে পারলে এ ধরনের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ভবিষ্যতে এড়ানো সম্ভব।
আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড.আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগর এলাকায় ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার ব্যত্যয় করে যেসব অনুমোদনহীন ও বিপজ্জনক ব্যবহার আবাসিক এলাকায় বর্তমানে বিদ্যমান আছে, সেগুলো অপসারণপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বহুতল ভবনে কিংবা আবাসিক এলাকায় বিপজ্জনক মিশ্র ব্যবহার অতি দ্রুত বন্ধ করা এবং অনুমোদিত মিশ্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি করা দরকার। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি পরিষেবা সংশ্লিষ্ট নিম্নমানের যন্ত্র, পাইপ, উপকরণ প্রভৃতির উৎপাদন ও ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, নগর এলাকার ভবনগুলোসহ সামগ্রিকভাবেই নগর যে বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে তার দায় পেশাজীবীদেরও নিতে হবে। নগর ও নাগরিকদের নিরাপদ জীবনকে বিপর্যস্ত করতে পেশাজীবীদের কেউ কেউ গোষ্ঠীস্বার্থের পক্ষে অবস্থান নেয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত বলেন, সিঙ্গাপুরে একজন শ্রমিকের পঙ্গুত্বের জন্য দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে ১০ কোটি টাকা। অথচ আমাদের দেশের এ ধরনের অপরাধে শাস্তির পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য, যার কারণে শ্রমিকসহ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার ব্যাপারে মালিকেরা দিনের পর দিনের উদাসীনতা দেখিয়ে যাচ্ছেন।
আইপিডি পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, নির্মাতা বা ভবন মালিকেরা ইমারত নির্মাণের খরচ কমাতে ভবনে বসবাসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। ভবনের অভ্যন্তরীণ ডিজাইনে নান্দনিকতা বাড়াতে গিয়ে ভবনে আবদ্ধ জায়গা ও নেগেটিভ স্পেস তৈরি হচ্ছে। যেখানে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভবপর হয় না, ফলে ভবনে অগ্নিকাণ্ড ও বসবাসের ঝুঁকি বাড়ছে।
এএসএস/এসএসএইচ/