নতুন কারিকুলামে বই পাচ্ছে চার শ্রেণির শিক্ষার্থী

নতুন কারিকুলামে ছাপা হবে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম, দ্বিতীয়, ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নতুন কারিকুলামে এ চার শ্রেণির বই আলাদাভাবে ছাপাতে চায় এনসিটিবি। এজন্য পৃথক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে শ্রেণিকক্ষে ব্যবহারিক কার্যক্রমের ওপর জোর দিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কারিকুলামে পরিবর্তন আনা হবে। সে হিসেবে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে এ কারিকুলামের কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে তা বাতিল করা হয়।
এনসিটিবি কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে নতুন কারিকুলামে চার শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। পরের শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের সপ্তম, ৮ম শ্রেণির বই তুলে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে নবম এবং উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই পাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণির কারিকুলামে। এ স্তরে বিভাগ বিভাজন তুলে দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হবে। ফলে এ স্তরে বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য নামে কোনো বিভাগ থাকবে না। সবাইকে সব বিষয় পড়তে হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে সব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করবে।
রঙিন হচ্ছে মাধ্যমিকের পাঠ্যবই
নবম-দশম শ্রেণির পর মাধ্যমিক স্তরের বাকি শ্রেণির বই চার রঙে ছাপানো হবে। এখাতে দেড়গুণ খরচ বাড়বে। আগামী শিক্ষাবর্ষেই ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির রঙিন বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বর্তমানে যাচাই-বাছাই চলছে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব শ্রেণির বই ছাপানো শেষে মাঠ পর্যায়ে সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে নতুন পাণ্ডুলিপি তৈরি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রটি জানায়, মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপা নিয়ে গত ১৪ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। সভায় অষ্টম ও নবম শ্রেণির (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), এসএসসি ভোকেশনাল, ইবতেদায়ির তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, দাখিল অষ্টম ও নবম এবং দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরির (ট্রেড) ১২ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭টি বই ২৮৫ লটের মাধ্যমে ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য খরচ হবে ৪৩৩ কোটি ৫০ হাজার ৫৫৭টাকা।
দরপত্রের কার্যাদেশ দেওয়ার পর ঠিকাদারদের ৮৮ দিন সময় দিয়ে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে বই ছাপানো শেষে মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করতে হবে। ইবতেদায়ির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি, মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) ও দাখিলের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫১টি বই ২০৩ লটের মাধ্যমে টেন্ডার দেওয়া হবে। এতে ৩৬৩ কোটি ৭২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। প্রাক প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের ব্রেইল ৯১৯৬টি বই ১৪ লটের মাধ্যমে টেন্ডার দেওয়া হবে। খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। মাধ্যমিক স্তরের মোট ২৪ কোটি ১২ লাখ ২১ হাজার ৭৪৬টি বই ছাপার কাজ তদারকি করতে পরিদর্শন এজেন্ট নিয়োগ দিতে আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সময়াবদ্ধ বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা (এটিপিপি) এখনও অনুমোদন হয়নি। গত সপ্তাহে একটি সভা হয়েছে। তাতে দুই দফায় বই সরবরাহের প্রস্তাব করেছি। নবম ও দশম শ্রেণির বই অক্টোবরের মধ্যে ছাপানো শেষে সরবরাহের প্রস্তাব করেছি। ইবতেদায়ির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ছাপা শেষ করার টাইম লাইন নির্ধারণ করেছি। প্রাথমিকের বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে যথাসময়ে বই সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকের বই আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি সরবরাহ করতে চাই। সিডিউল অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু হবে।
রঙিন বই ছাপানোর বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, সবাই পাঠ্যবই দৃষ্টিনন্দন করার সুপারিশ করেছেন। লেখকদের দাবি, বইয়ের ভেতরের ছবি রঙিন না করলে স্পষ্ট বোঝা যায় না। শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে না। এরই প্রেক্ষাপটে বইগুলো রঙিন করে ছাপানোর প্রস্তাব করেছি। তারপরেও আমরা যাচাই-বাছাই করছি ছাপা খরচ কেমন হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আগে আম সংখ্যা নিয়ে কাজ করেছি। এখন মান নিয়ে ভাবছি। বই রঙিন ছাপালে শিক্ষার্থীদের বুঝতে সুবিধা হবে। সবাই চায় রঙিন বই। খরচ বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি যাচাই-বাছাই করতে এনসিটিবিকে নির্দেশ দিয়েছি। দেখা যাক কত টাকা বাড়তি দরকার হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এনএম/এসকেডি/এমএমজে
