‘মজিদ চাচা’ প্রতীকী নাম, আর্থিক স্বচ্ছতা আছে : বিদ্যানন্দ

Mani Acharjya

১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:২৭ পিএম


‘মজিদ চাচা’ প্রতীকী নাম, আর্থিক স্বচ্ছতা আছে : বিদ্যানন্দ

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা কারণে আলোচিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গরিব-দুঃখী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটি সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। মানব সেবায় তাদের ভালো ভালো কাজ দেখে দেশ-বিদেশ থেকে এসেছে বহু মানুষের বিপুল অর্থ সহায়তা।

মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার অর্থ দিয়ে বিদ্যানন্দ ১ টাকায় আহারসহ নানা সেবামূলক কর্মসূচি পালন করে। রমজান মাসে তারা বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ, গরু জবাই করে সুবিধাবঞ্চিতদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন করোনা মহামারিসহ নানা প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে তারা বিভিন্নভাবে সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠানটি নানা কারণে মানুষের সমালোচনার মুখে পড়েছে। বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় দিয়ে অলঙ্কার তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয় বিদ্যানন্দ। পোস্ট দেওয়ার পর ছবিগুলো নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

দেখা যায়, ছবিগুলো অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে বঙ্গবাজারের আগুনে পোড়া কাপড়ের অলঙ্কার বলে চালিয়ে দেয় তারা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এক পর্যায়ে বিদ্যানন্দ বাধ্য হয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেয় এবং এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চায়।

এরপরও বিদ্যানন্দকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় থামেনি, তা আরও বাড়ছে। বিদ্যানন্দের নতুন-পুরোনো অনেক পোস্ট নিয়ে অনলাইনে চলছে সমালোচনা ও ট্রল। বিশেষ করে গরু জবাই করে সুবিধা বঞ্চিতদের খাওয়ানোর একাধিক পোস্টে একই গরুর ছবি বারবার ব্যবহারের অভিযোগ করছেন সমালোচকরা।

আরও পড়ুন : গরিবের সুপারশপে’ ১০ টাকায় মিলেছে পছন্দের পণ্য

তিন থেকে ৬ মাস আগের একই রকম কয়েকটি পোস্ট-এর স্ক্রিনশট নিয়ে মানুষ ফেসবুকে পোস্ট করছে আর প্রশ্ন করছে একই গরু কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন সময় বিদ্যানন্দ জবাই করেছে? এছাড়া ‘মজিদ চাচা’ নামে একটি নাম নিয়েও চলছে ট্রল। বিদ্যানন্দ বিভিন্ন সময়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষজনকে সহযোগিতা করার পর ‘মজিদ চাচা’ নামটি ব্যবহার করেছে। মানুষের প্রশ্ন, এ  ‘মজিদ চাচা’ কে? যার নাম বার বার বিভিন্ন সময় সহযোগিতার নামে ব্যবহার করছে বিদ্যানন্দ। এছাড়া বিদ্যানন্দের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অনেকে পরিষ্কার অভিযোগ এনে বলছেন, বিদ্যানন্দ আসলে চ্যারিটির নামে দাতাদের অর্থ আত্মসাৎ করছে। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কোনো স্বচ্ছতা নেই।

এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কমিউনিকেশনস সালমান খান ইয়াসিনের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট। গত কয়েক দিন ধরে চলা নানা বিতর্কের বিষয়ে বিদ্যানন্দের অবস্থান জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিষ্ঠান অনেক বড় হয়ে গেছে, অনেকে সেটা সহ্য করতে পারছে না

বিদ্যানন্দকে নিয়ে কেন এত সমালোচনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান খান ইয়াসিন বলেন, বিদ্যানন্দকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মানুষ বিদ্যানন্দের কার্যক্রমকে বিশ্বাস করবে কি না তা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। অনলাইনে আমাদের নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে এটা আমরা জানি। এটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। যেহেতু বিদ্যানন্দ চ্যারিটির কাজ করে, প্রতিষ্ঠান অনেক বড় হয়েছে, অনেকে হয়তো এটা সহ্য করতে পারছেন না। এ  জন্যই বিদ্যানন্দের বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন : কক্সবাজার সৈকতে ‘বর্জ্য দৈত্য’ 

তিনি বলেন, বিদ্যানন্দের ভালো কাজ দেখে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে মাটিতে নামানোর জন্য একটা গোষ্ঠী কাজ করছে। বিদ্যানন্দ যেসব চ্যারিটির কাজ করছে সেগুলোকে ঠিক বিপরীতভাবে, বিকৃতভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরার অপচেষ্টা করছে তারা। মানুষ এসব তথ্য যাচাই-বাছাই না করে গুজবের ফাঁদে পা দিচ্ছে। আর মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করতে ভালোবাসে। তাই তারা কোনো কিছু না বুঝে তথ্য যাচাই ছাড়াই ট্রল করছে।

ছোট ছোট মানুষ বড় কাজ করছে বলে প্রতিহিংসা

বিদ্যানন্দকে নিয়ে কেন ষড়যন্ত্র হবে? এ প্রশ্নের জবাবে সালমান খান ইয়াসিন বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। কেন এবং কারা আমাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তা আমরা বুঝতেও পারছি না। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে একটি চক্র আমাদের নিয়ে বিনা কারণে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এ বিষয়ে তদন্ত করে তাহলে তারা হয়তো জানতে পারবে কারা, কেন বিদ্যানন্দের বিষয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে মানুষের জন্য কাজ করি। খুবই ছোট ছোট কিছু মানুষ, গড় বয়স হিসেব করলে ২২-২৫ বছর বয়সী কিছু মানুষ। তারা এত বড় বড় কাজ করছে সেটা হয়তো অনেকে মানতে পারছেন না। কারণ, যাদের মূলত এসব কাজ করার কথা, তারা কোনো কারণে তা করছেন না। তাই তারাই বিদ্যানন্দকে মাটিতে নামানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। আমরা মনে করছি খুব অল্প সময়ে বিদ্যানন্দ জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে আসায় অনেকে প্রতিষ্ঠানটিকে নিচে নামানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছেন।

প্রসঙ্গ যখন ‘মজিদ চাচা’

সালমান খান ইয়াসিন বলেন, আমাদের ফেসবুক পেজে যা লিখি তা অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো ফর্মাল বা আনুষ্ঠানিক কিছু নয়। আমরা লিখি মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও বঞ্চনার গল্প। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে আমরা এই গল্পগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করি। আমরা যখন মাঠে-ঘাটে কাজ করতে যাই, তখন এসব গল্প আমরা পাই। সেসব মানুষের চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে সরাসরি নাম ব্যবহার না করে প্রতীকী নাম ব্যবহার করি। এমন কিছু নাম ব্যবহার করা হয় যে নামগুলো সবার পরিচিত। যাতে মানুষ নামগুলো পড়ে নিজেদের সঙ্গে মেলাতে পারে। তেমন একটি নাম মজিদ চাচা। এই নামটি সবার সঙ্গে পরিচিত নাম। সে জন্য আমাদের বিভিন্ন গল্পে প্রতীকী অর্থে মজিদ চাচার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতীকী নামের বিষয়ে বিভিন্ন সময় আমরা বলেছি। আমরা এমন নাম ব্যবহার করি যেন কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হয়।

কমিউনিকেশন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে

সালমান খান ইয়াসিন বলেন, আমরা যেসব ছবি কিংবা লেখা ফেসবুক পেজে পোস্ট করি তার মূল উদ্দেশ্য আমাদের  কার্যক্রমের বিষয়ে মানুষকে জানানো। তবে যেহেতু বেশ কিছু ছবি ও গল্প নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলেছে তাই কমিউনিকেশন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে আর বিতর্কের সৃষ্টি না হয়।

গরুর ছবি নিয়ে কী বক্তব্য?

সালমান খান ইয়াসিন বলেন, আমরা তো বলছি না ছবিতে ব্যবহার করা গরুটি আমরা আজ জবাই করে খাওয়াচ্ছি। আমরা যদি তথ্য শেয়ার করতাম তাহলে সেটা মিথ্যা হতো। আমরা এখানে একটা গল্প শেয়ার করছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা গল্পের জন্য ব্যবহার করতে একটি ছবি ইন্টারনেট থেকে নেব নাকি আমাদের কালেকশনে থাকা ছবি থেকে নেব। নেট থেকে নিলে বলবে আমরা অন্যের ছবি নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছি।

আরও পড়ুন : নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে বিদ্যানন্দের উদ্যোগ

যেমন, এখন একটি এতিম বাচ্চাকে নিয়ে গল্প বলা হচ্ছে। ছবিতে বলা হয় ওই বাচ্চাটা এতিম এবং সে ইফতার খাচ্ছে। যখন এতিমখানার বাচ্চাদের নিয়ে কোনো পোস্ট করছি তখন ওই এতিম বাচ্চাটার ছবি ব্যবহার করছি। আবার যখন ইফতার নিয়ে পোস্ট করছি, তখনও সেই ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করছি। কারণ ছবিতে ওই বাচ্চাটা ইফতারও খাচ্ছে। এখানে আমাদের দোষটা কোথায় সেটা বুঝতে পারছি না। মানুষ আসলে ভুলভাবে এসব বিষয় ব্যাখ্যা করছে।

অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে সমালোচনার কী জবাব?

সালমান খান ইয়াসিন বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার বিষয়ে মানুষ যাচাই করবে না। এটা যাচাই করবে প্রশাসন ও অডিট টিম। আমরা ঠিকভাবে অডিট করছি কি না এবং আমরা প্রশাসনকে জবাবদিহি করছি কি না এগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখবে। সব মানুষ তো জানে না কীভাবে অডিট করতে হয় বা যাচাই করতে হয়। আর দাতা, যে কিনা বিদ্যানন্দকে দান করছে তাকে সঠিকভাবে জবাব বা হিসাব দেওয়া হচ্ছে কি না সেটা তো আমাদের এবং দাতার বিষয়। দাতা যদি তথ্য চায় তাকে সেটা দিতে আমরা বাধ্য। তারপরও কারো যদি বিদ্যানন্দের স্বচ্ছতা নিয়ে মনে প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সম্পর্কে আরও তথ্য জেনে বক্তব্য দেওয়া উচিত। অন্ধভাবে কোনো কিছু বলা উচিত নয়।

তিনি বলেন, মানুষ বিশ্বাস না করলে বিদ্যানন্দকে এভয়েড করবে। আমরা তো ব্যবসা করছি না। বিদ্যানন্দ বন্ধ হয়ে গেলে যাবে, তাতে আমাদের কিছুই হবে না। তবে মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করা একটা দল হারিয়ে যাবে।

এমএসি/এসকেডি 

Link copied