ফেসবুকে জাল টাকার কারবার, ৫০ হাজারের বান্ডেল বিক্রি ১১ হাজারে

জাল টাকা তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে থাকার অভিযোগে খিলগাঁওয়ের গোরান শান্তিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে খিলগাঁও থানা পুলিশ। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, আল আমিন (২২) ও কাশেম আলি (২২)। এ সময় আল আমিনের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়, ল্যাপটপ, প্রিন্টার।
পুলিশ জানায়, চক্রের সদস্যরা জাল টাকাকে প্রোডাক্ট বা মাল হিসেবে ডাকে। ৫০ হাজারের বান্ডেল বিক্রি করেন ১১ হাজার টাকায়। এ চক্রের কয়েকজন সদস্যকে চিহ্নিত করা গেছে।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কে.এন. রায় নিয়তি জানান, জাল টাকা তৈরি চক্রের মূল হোতা আল আমিন। এ টাকা কেনার জন্য কাশেম আলি গাজীপুর থেকে আল আমিনের কাছে আসেন। তাদের যোগাযোগ হয় ফেসবুকের মাধ্যমে।
তাদের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত, গোপন তদন্তে জানা যায়, ফেসবুকে ফেক আইডির মাধ্যমে গ্রুপ খোলা হয়। অর্থাৎ আইডি খোলার সময়ে ভুয়া মোবাইল ফোন নম্বর, ভুয়া ই-মেইল ব্যবহার করা হয়, যাতে এ আইডি ডিটেক্ট হলেও তাদের কেউ চিহ্নিত করতে না পারে। গ্রুপ খোলা হয়ে গেলে ক্রেতার খুঁজে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে থাকে। সেখানে এসে যোগ দেন এ ধরনের অসৎ ব্যবসায় ইচ্ছুক উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিছু যুবক।
গ্রুপের কমেন্টে প্রাথমিক কথাবার্তা হলে আরও যোগাযোগ বাড়াতে তারা মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো যোগাযোগ অ্যাপসগুলোর সহায়তা নেয় তারা। এরপর শুরু হয় তাদের দরদাম ও কেনাবেচা।
জাল টাকাকে তারা ডাকে বিভিন্ন নামে যেমন, প্রোডাক্ট, মাল বা প্যাকেট নামে। প্রোডাক্ট ভালো হলে মার্কেটে তৈরিকারকের বিশ্বস্ততা বাড়তে থাকে। এক সময় পুরনো কাস্টমাররাই প্রোডাক্টের নতুন কাস্টমার নিয়ে আসে।
প্রাথমিক তদন্তে আরও জানা যায়, তাদের এ সাপ্লাই- চেইন কয়েকটি ধাপে চলে। তৈরিকারকের কাছ থেকে পাইকারি বা খুচরা বিক্রেতার কাছে পৌঁছায়। এতে তৈরিকারক অধিক পরিচিতি হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিজেকে কিছুটা রক্ষা করতে পারেন। প্রথম দিকে পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি প্রোডাক্ট গ্রহণ করলেও বিশ্বস্ততা বাড়লে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের সহায়তায় বিলি করতে থাকেন। বেচাকেনা বাড়াতে নোটগুলো খুবই সুলভমূল্যে বাজারে ছাড়ে তারা। যেমন- ১০ হাজার টাকার এক বান্ডেল ১৮০০ টাকা। ৫০ হাজার টাকার এক বান্ডেল প্রোডাক্ট ১১ হাজার টাকা।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, পুলিশের নজর এড়াতে ছোট নোটকেই টার্গেট করেছে। কারণ, ছোট নোটে অভিযোগ দেওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তাছাড়া, জাল নোটগুলোকে স্বাচ্ছন্দ্যে চালিয়ে দেওয়ার জন্য রাতে বিনিময় করার পরামর্শ দেয় তারা।
তাৎক্ষণিকভাবে হাতেনাতে ধরা পড়ার ঝুঁকি এড়াতে তারা অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষকে টার্গেট করে। ঈদুল ফিতরের পর ভারত থেকে উন্নতমানের সিকিউরিটি পেপার এনে আপডেট ভার্সনের জাল টাকা প্রিন্ট করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
কে.এন. রায় নিয়তি আরও জানান, এ চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকার জাল নোটের পাইকারি ক্রেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেইউ/এসকেডি