বাসে বাসে বাগবিতণ্ডা

করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকার ১৮টি জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ সিট ফাঁকা রাখার কথা বলা হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহের জন্য গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যা বুধবার (৩১ মার্চ) সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাসে বাসে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা।
সকালে মালিবাগ থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার জন্য তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন। অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে বাসটি গন্তব্যে যাচ্ছিল। বাড়তি ভাড়া হিসেবে ২৫ টাকার জায়গায় ৪০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছেন কন্ডাকটর। বাসটি মালিবাগে আবুল হোটেল স্টপেজের কাছে আসতেই দৌড়ে উঠে পড়েন কয়েকজন যাত্রী। হেল্পারও তাদের তুলে নেন। এতে বাসের অন্য যাত্রীরা ক্ষেপে যান। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা।
যাত্রী সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তারা যেই ভাড়ার কথা বললো সেই ভাড়াই দিলাম, কিন্তু কেন দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী তুললো? এটা মেনে নেওয়া যায় না, যে কারণে কন্ডাকটরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেছি।’
এই চিত্র শুধু তুরাগ পরিবহনের বাসেই নয়, ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পর সকাল থেকেই রাজধানীর প্রায় প্রতিটি রুটে বাসের যাত্রীদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।
রামপুরা থেকে নতুন বাজার যাওয়ার জন্য রাইদা পরিবহনের বাসে উঠেছেন আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী হুমায়ুন কবীর। তিনিও ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলায় তিনিও কান্ডাকটর ও চালকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন।
এ যাত্রী বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচার জন্য আমরা নিরাপদে থাকতে চাই, ওরা ভাড়া বাড়িয়েছে, সমস্যা হলেও আমরা তা মেনে নিয়েছি। ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি দিচ্ছি, তারপরও কেন তারা অতিরিক্ত যাত্রী নেবে? যাত্রীরা এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ না করলে তারা ঠিক হবে না। আমরা সাধারণ যাত্রীরাই যাঁতাকলে পড়েছি সবদিক থেকে।’
এদিকে রাজধানীতে সকাল থেকেই বাস সংকট দেখা দিয়েছে। এতে গন্তব্যে যেতে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর গন্তব্যে যেতে যে বাস পাচ্ছেন তাতেই তারা উঠে পড়ছেন।
যা বলছেন বাস চালক-সহযোগীরা
সাভার থেকে মহাখালী, গুলশান হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত চলাচল করা বৈশাখী বাসের কন্ডাকটর রাজু বলেন, ‘৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পর আজ সকাল থেকে বার বার যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছে। সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। ভাড়া আদায় করা যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমনি কোনো কারণে যদি দু’একজন অতিরিক্ত যাত্রী বাসে উঠে পড়েন, তাতে অন্য যাত্রীরা আমাকে মারতে আসছেন, গালাগালি করছেন। প্রায় সব বাসেই আজ যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে।’
তুরাগ বাসের চালক বাচ্চু মিয়া জানালেন একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা। মালিবাগ থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত কথা হয় এই বাস চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়েই গাড়ি চালাতে। কিন্তু প্রতিটি স্টপেজে অতিরিক্ত যাত্রী গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কোথাও কোথাও জোর করে যাত্রী উঠে যাচ্ছেন। তখন অন্য যাত্রীরা আমাদের মারতে আসছেন, কন্ডাকটরের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছে, রাগ করে ভাড়া দিতে চাইছেন না যাত্রীরা। এই অবস্থায় বিপদে পড়েছি আমরা।’
বিড়ম্বনায় স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা
গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড স্টপেজে অপেক্ষা করছেন অসংখ্য যাত্রী। অফিস সময় হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু তারা অসহায়ের মতো অপেক্ষা করছেন, কারণ কোনো বাসের দরজা খুলছে না। আগেই অর্ধেক যাত্রী পূর্ণ হওয়ায় বাসগুলো গেট বন্ধ রেখে চলে যাচ্ছে, মাঝের স্টপেজে থামছে না। এতে অফিসগামী যাত্রীরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা এক যাত্রী নাঈম আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আমরা এখানে অপেক্ষা করছি। বাসে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের আদেশ আজ থেকে কার্যকর হওয়ার কারণে সব বাস যাত্রী পরিপূর্ণ করে গেট বন্ধ করে চলে যাচ্ছে। আমরা যারা মাঝপথ থেকে স্বল্প দূরত্বে যাব তারা পড়েছি বিপদে।’
হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন স্টপেজে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না। একই দৃশ্য দেখা গেল রামপুরা ব্রিজ স্টপেজেও।
যাত্রীদের এমন ভোগান্তি বিষয়ে নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গণপরিবহনের ৫০ শতাংশ আসন শূন্য রাখার সিদ্ধান্ত যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়াবে। গতবছর যখন এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেই সময় অফিস-আদালত রেশনিং পদ্ধতিতে চলছিল। এর ফলে সড়কে ও গণপরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম ছিল। এবার করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ আসন শূন্য রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক হয়নি।’
বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না
৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়ায় ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি যেসব স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হয়েছে সেসবের অধিকাংশ বাসে মানতে দেখা যায়নি। যাত্রীদের জন্য রাখা হয়নি হ্যান্ডস্যানিটাইজার। অনেকে আবার মাস্ক ছাড়াই বাসে উঠছেন।
এএসএস/জেডএস/জেএস
