আম জনতা ও জনতার দলের জন্য বিধি ভেঙেছে ইসি?

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আবেদন চূড়ান্তভাবে নামঞ্জুর করার পরও সাতটি দলের আবেদন পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে আইন এবং বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশন ‘ইনহেরেন্ট পাওয়ার’ প্রয়োগ করলেও এটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিষয়টি নজরে আনলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, কমিশন তাদের সহজাত ক্ষমতা (ইনহেরেন্ট পাওয়ার) প্রয়োগ করছে।
তবে নির্বাচন ব্যবস্থা ও আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আরপিও’র বাইরে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে ‘আম জনতার দল’-এর সদস্য সচিব তারেক রহমানের দল নিবন্ধনের আবেদন নামঞ্জুর করায় তিনি নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন। দল নিবন্ধন না পাওয়ার প্রতিবাদে ইসির সামনে চলমান অনশনে বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরা একাত্মতা প্রকাশ করেন। সর্বশেষ বিএনপি তারেক রহমানের প্রতি সমর্থন জানালে নির্বাচন কমিশন ‘আম জনতার দল’-সহ সাতটি দলের নিবন্ধন আবেদন পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই সাতটি দলের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, গণতান্ত্রিক পার্টি, জাসদ-শাহজাহান সিরাজ, জাতীয় জনতা পার্টি, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি, আমজনতার দল ও জনতার দল।
পুনর্বিবেচনার অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ে যাচাই শেষে ‘আম জনতার দল’ ও ‘জনতার দল’-এর নিবন্ধনের বিষয়ে দাবি-আপত্তি আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো দাবি বা আপত্তি না এলে দল দুটিকে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন দেওয়ার কথা জানিয়েছে ইসি।
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও নামঞ্জুর বিষয়ে বিধিমালায় যা বলা হয়েছে
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সংক্রান্ত বিধিমালার বিধি ৪-এর অধীনে কোনো আবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) আবেদনপত্র, তাতে উল্লেখিত তথ্য এবং বিধি ৬ অনুযায়ী সংযুক্ত দলিলাদির সঠিকতা যাচাই করবে। একই সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) আর্টিকেল ৯০ই অনুযায়ী নিবন্ধনের শর্তাবলি পূরণ করা হয়েছে কি না, তাও পরীক্ষা করবে।
৫-এর উপ-বিধি (১) এর অধীন যাচাই শেষে কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে- (ক) নিবন্ধনের আবেদন যথাযথভাবে পূরণ করা হয়নি; অথবা (খ) আর্টিকেল ৯০ই অনুযায়ী নিবন্ধনের শর্তাবলি পূরণ করা হয়নি; অথবা (গ) বিধি ৬-এ উল্লিখিত প্রয়োজনীয় দলিলাদি আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি- তাহলে কমিশন আবেদনকারী দলকে অনূর্ধ্ব ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবরাহসহ অন্যান্য ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দিয়ে লিখিতভাবে অবহিত করবে।
ওই পত্র পাওয়ার পর আবেদনকারী দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করলে কমিশন বিধি ৪-এর উপ-বিধি (২), (৩) ও (৪)-এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আবেদনটি মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করতে পারবে।
অন্যদিকে, ৭-এর উপ-বিধি (৫) এ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদনকারী দল কোনো পদক্ষেপ না নিলে কমিশন সংশ্লিষ্ট দলকে নিবন্ধনের অযোগ্য বিবেচনা করে আবেদনটি চূড়ান্তভাবে নামঞ্জুর করবে।

নামঞ্জুরের পর পুনর্বিবেচনা : আরপিওতে কী বলা আছে
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নামঞ্জুরের বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। আরপিওর ৯০ঙ(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন নাকচ করা হলে সাত কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দলকে তা অবহিত করতে হবে।
আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন ‘আম জনতার দল’-সহ যেসব দলের নিবন্ধন আবেদন নামঞ্জুর করেছে, সেসব দলকে সাত কার্যদিবসের মধ্যেই নিবন্ধন না পাওয়ার বিস্তারিত কারণ লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়।
তবে আইনজ্ঞদের মতে, চূড়ান্তভাবে নামঞ্জুরের সিদ্ধান্ত জানানোর পরও আরপিও বহির্ভূতভাবে সাতটি দলের আবেদন পুনর্বিবেচনা করেছে নাসির উদ্দিন কমিশন। অতীতে কোনো দলের নিবন্ধন আবেদন নামঞ্জুর হলে সংশ্লিষ্ট দল সরাসরি আদালতের দ্বারস্থ হতো। কিন্তু এবার কমিশন আইন বহির্ভূতভাবে পুনরায় যাচাই-বাছাই করে দুটি দলকে (আম জনতার দল ও জনতার দল) নিবন্ধন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
নিবন্ধন নামঞ্জুরের চিঠিতে ইসির বক্তব্য
নিবন্ধন নামঞ্জুরের বিষয়ে পাঠানো চিঠিতে নির্বাচন কমিশন উল্লেখ করে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮-এর শর্তাবলি যথাযথভাবে পূরণ না করায় ‘আম জনতার দল’-এর নিবন্ধনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘আম জনতার দল’-এর ২০ এপ্রিল এর নিবন্ধন আবেদনটি আরপিও, ১৯৭২-এর ৯০খ(১)(ক)(ই) ধারার আলোকে যাচাই করা হয়েছে।
নিবন্ধন না দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসির পাওয়া ঘাটতিগুলো
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, প্রাথমিক যাচাইয়ে দলটির আবেদনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এর একাধিক শর্ত পালনে ঘাটতি পাওয়া গেছে।
ইসির মতে, আরপিওর ৯০খ(১)(ক)(ই) ধারার শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করা হয়নি। প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তরের জন্য বাড়ি ভাড়ার রসিদ, চুক্তিপত্র বা মালিকানাসংক্রান্ত দলিল সংযুক্ত করা হয়নি। একইভাবে প্রয়োজনীয় ১০০টি উপজেলা/থানায় কমিটির তালিকা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বাড়ি ভাড়ার রসিদ, চুক্তিপত্র বা মালিকানার দলিলও দাখিল করা হয়নি।
দলের নামে ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত তথ্য ও তহবিলের উৎসের বিবরণ জমা দেওয়া হয়নি। নিবন্ধনের আবেদন দাখিলের জন্য দল কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র সংযুক্ত করা হয়নি। গঠনতন্ত্রে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্যপদ সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়নি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পেশাজীবী ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে কোনো সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন না থাকার বিধানও গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এছাড়া দলটি সংবিধান পরিপন্থী কোনো কার্যক্রমে জড়িত নয় এবং দলে দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি নেই- এ মর্মে দলের প্রধানের ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্রও দাখিল করা হয়নি।

তদন্ত ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
ইসির চিঠিতে জানানো হয়, উল্লিখিত ঘাটতি পূরণের জন্য দলটিকে ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলটি সংশোধিত কাগজপত্র দাখিল করে। এরপর নির্বাচন কমিশন সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের তথ্য সঠিক পাওয়া গেলেও সরবরাহকৃত ২২টি জেলার মধ্যে মাত্র ২০টিতে কার্যকর অফিসের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা যায়। বাকি ২টি জেলায় সঠিক ও কার্যকর অফিস পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া ১০০টি উপজেলা/থানা অফিসের মধ্যে মাত্র ৩৩টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর অফিস এবং ন্যূনতম ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট উপজেলা ও থানাগুলোতে কার্যকর অফিস ও প্রয়োজনীয় সদস্যসংখ্যার তথ্য পাওয়া যায়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ইসির সিদ্ধান্ত
তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০(ক) ও ৯০খ(১)(ক)(ই) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এর শর্তাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় দলটিকে নিবন্ধনযোগ্য বিবেচনা করা হয়নি। ফলে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৭-এর উপ-বিধি (৬) অনুযায়ী ‘আম জনতার দল’-এর নিবন্ধন আবেদন নামঞ্জুরপূর্বক নিষ্পত্তি করা হয়।
নতুন দলের দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তিতে অনাগ্রহ ইসির
এদিকে, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি ইসির যাচাই-বাছাইয়ে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হলেও দাবি-আপত্তির কারণে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আটকে যায়। ইসির গণবিজ্ঞপ্তির পর দলটির বিষয়ে একাধিক দাবি-আপত্তি জমা পড়ে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, এসব দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরং সর্বশেষ আইন বহির্ভূতভাবে বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে ইসি। অথচ অতীতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়া বা না দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার কোনো নজির নেই বলে জানিয়েছেন ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি বিষয়ে বিধিমালার নির্দেশনা
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালায় দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পদ্ধতি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। বিধিমালার বিধি ৩-এর উপ-বিধি (২) অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো আপত্তি পাওয়া গেলে কমিশন দরখাস্তকারী দল ও আপত্তিকারী উভয় পক্ষকে শুনানির সুযোগ দিয়ে আবেদনটি মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করতে পারবে। কিন্তু নাসির উদ্দিন কমিশন বিধিমালার এই ধারাগুলো অনুসরণ না করে উল্টো বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তিতে আইন অনুসরণ না করে প্রশাসনিক মতামতকে গুরুত্ব দেওয়াকে আইনজীবীরা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে কমিশন তাদের সহজাত ক্ষমতা (ইনহেরেন্ট পাওয়ার) প্রয়োগ করছে। যদিও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সংক্রান্ত আইন- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)- এ বিষয়ে সরাসরি কোনো বিধান নেই, তবুও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার আলোকে এই ক্ষমতা প্রয়োগের আইনগত ভিত্তি রয়েছে।
ইসি সচিব জানান, বর্তমানে সাতটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আবেদন পুনরায় পর্যালোচনার আওতায় রয়েছে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আইনি ভিত্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরপিওতে সরাসরি বিধান না থাকলেও কমিশনের নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দুটি নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুটো আদালতের দুটো আদেশ আছে- একটি এরশাদ, আরেকটি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে। সেগুলো দেখলে বোঝা যাবে যে ইসির কিছু ইনহেরেন্ট পাওয়ার থাকে। আপিল করার অধিকার যেহেতু মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ, তাই নির্দিষ্ট বিধান না থাকলেও কমিশন পর্যালোচনা করার অধিকার রাখে।
আরপিও অনুযায়ী, কোনো দলের নিবন্ধন নামঞ্জুর করার পর সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দলকে লিখিতভাবে জানানোই কমিশনের দায়িত্ব। এরপর সাধারণত আবেদনকারী দল আদালতের শরণাপন্ন হয়। আরপিওতে বলা আছে, সাত কর্মদিবসের মধ্যে দলকে নামঞ্জুর করে চিঠি দিতে হবে। কিন্তু এরপর কী করতে হবে, সে বিষয়ে আরপিওতে কিছু বলা নেই। এই শূন্যতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঠিক আছে, না থাকলে নাই। সেই কারণেই ইনহেরেন্ট অথরিটি প্রয়োগ করে নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। পুনরায় পর্যালোচনার পর যদি কমিশনের কাছে মনে হয় আবেদনগুলো বিবেচনার যোগ্য, তখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও আদালতের ভূমিকা
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও আদালতের ভূমিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ড. মো. শাহজাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালার বাইরে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘ইনহেরেন্ট পাওয়ার’ বা সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের বিশেষ ক্ষমতা ক্ষেত্রবিশেষে কেবল আদালতই প্রয়োগ করে থাকে।
ড. শাহজাহান আরও বলেন, আরপিও’র ৯০ঙ(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন নাকচ করা হলে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দলকে তা জানাতে হয়। একবার নিবন্ধনের আবেদন নামঞ্জুর করে চিঠি দেওয়ার পর কমিশনের এখতিয়ার সেখানেই শেষ হয়ে যায়। সেই দলের বিষয়ে কমিশনের আর কিছু করার থাকে না।
তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী, এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। আদালত যদি মনে করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত আইনসম্মত নয়, তবে আদালতই কমিশনকে সংশ্লিষ্ট দলকে নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। অতীতে আদালতের রায়ের মাধ্যমেই একাধিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন লাভ করেছে।
আম জনগণ দলের দাবি-আপত্তি শুনানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালার বিধি ৭-এর উপ-বিধি (৩) এর (২) অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো দাবি-আপত্তি পাওয়া গেলে নির্বাচন কমিশনকে দরখাস্তকারী দল ও আপত্তিকারী উভয় পক্ষকে শুনানির সুযোগ দিতে হবে। শুনানি শেষে কমিশন আবেদনটি মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে শুনানি না করে কমিশন কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাইলো এটা তারাই বলতে পারবে। একটা দলকে নিবন্ধন দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বিধিমালায় বলা আছে। কাজেই কমিশন আরপিও এবং বিধিমালা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এসআর/এমএসএ
