ট্রেনে ঘুরে ঘুরে মুক্তিপণ দাবি

বাবা হজে থাকায় ভাড়াটিয়ার পরিকল্পনায় শিশু সালমান অপহরণ

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৮ জুলাই ২০২৩, ০২:৫৬ পিএম


বাবা হজে থাকায় ভাড়াটিয়ার পরিকল্পনায় শিশু সালমান অপহরণ

বাবা মাওলানা ইমদাদুল্লা হজে থাকার সুযোগে তার শিশুসন্তান সালমানকে অপহরণ করে চক্রের সদস্যরা। অপহরণকারীরা সালমানকে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। ট্রেনে ঘুরে ঘুরে সালমানের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে তারা।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে পরিবারের সঙ্গে বসবাসকারী চার বছরের শিশু সালমানকে অপহরণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাব বলছে, ট্রেনে চড়ার কথা বলে সালমানকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর ট্রেনে ঘুরতে ঘুরতে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।

গ্রেপ্তাররা হলেন, শাফায়েত হোসেন আবির ও আল আমিন। একই ঘটনায় জড়িত আরও দুজনের নাম জানতে পেরেছে র‍্যাব। তারা হলেন, হেলাল ও আইয়ুব। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

র‍্যাব জানায়, শনিবার (১৫ জুলাই) মমিনবাগ এলাকা থেকে ট্রেন দেখানোর কথা বলে সালমানকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে যায় তিন অপহরণকারী। 

পরদিন রোববার (১৬ জুলাই) অজ্ঞাত এক ব্যক্তি সালমানের পরিবারকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। পরে সালমানের পরিবার স্থানীয় থানা পুলিশ ও র‌্যাব-১০-কে বিষয়টি জানায়। পরে র‍্যাব চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় অপর দুজন পালিয়ে যায়।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

dhakapost

তিনি বলেন, চার বছরের শিশু অপহরণ ও মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় অপহৃত শিশুকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১০। অপহরণ চক্রের মূলহোতা শাফায়েত হোসেন আবির ও আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গত রাতে র‌্যাব-৭ ও ১০ এর সদস্যরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা, ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের সদরঘাট আইস ফ্যাক্টরি রোড এলাকায় যৌথ অভিযান চালায়। 

গ্রেপ্তার শাফায়েত ও আল আমিন ছিলেন শিশু সালমানের পাশের বাসার ভাড়াটিয়া। তিন মাস আগে সালমানকে বাসার সামনে খেলাধুলার সময় তাকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তারা। এরপর শিশুটির বাবা সৌদি আরবে হজ পালনে গেলে শিশু সালমানকে অপহরণে চেষ্টা করতে থাকে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, আল আমিন শিশু সালমানকে বিভিন্ন সময়ে চিপস, চকলেট ও খেলনা কিনে দিয়ে তার সঙ্গে সখ্যতা ও বিশ্বস্ততা অর্জন করে। গত ১৫ জুলাই শিশুটিকে বাসার সামনে থেকে অপহরণ করে কামরাঙ্গীরচরের মাদবর বাজার এলাকায় অন্য এক সহযোগী হেলালের কাছে নিয়ে যায় আল আমিন।

পরে হেলাল শিশু সালমানকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায় এবং শাফায়েত ও আল আমিনকে চট্টগ্রামে যেতে বলে। চট্টগ্রামে গিয়ে হেলালের পরিচিত আইয়ুবের বাসায় সালমানকে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপহরণের বিষয়টি জানায়। এসময় ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। শিশুটির পরিবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারীদের পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করে।

আলাপচারিতার একপর্যায়ে অপহরণকারীরা পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সালমানকে ফেরত দিতে রাজি হয়। পরে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় আসতে বলে চক্রটি। অপহরণকারীদের কথা মতো ভুক্তভোগীর পরিবার তাদের আশ্বস্ত করে, তারা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছে এবং শিশুটির যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, শিশুটির পরিবার মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আসতে দেরি করায় চক্রটি অবস্থান পরিবর্তন করে। আল আমিন ও শাফায়েত শিশু সালমানকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনযোগে ফেনী-চট্টগ্রাম যাতায়াত করে। অপহরণকারী শাফায়েত ও আল আমিন শিশু সালমানকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আইয়ুবের কাছে রেখে যায়। পরে মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় যায়। পরে র‍্যাব তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এরপর র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আইয়ুব চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় শিশুকে একা রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়।

ট্রেনে ঘুরে ঘুরে কেন অপহরণ ফাঁদ পাতা হয়েছিল? এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা জানতে পেরেছে এক জায়গায় বসে মুক্তিপণ চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সহজে শনাক্ত করে ফেলতে পারে। এজন্য তারা একেক সময় একেক ট্রেনে ঘুরে ঘুরে অপহরণের টাকা দাবি করছিল। তারা অভিনব পন্থা অবলম্বন করছিল, তবে র‍্যাব তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

জেইউ/কেএ

Link copied