আজন্ম কষ্ট বঙ্গমাতাকে অসাধারণ নারীতে রূপান্তরিত করেছিল : পরশ

আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, ফাস্ট লেডি হওয়া সত্ত্বেও অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। আজন্ম কষ্ট, বঞ্চনা এবং বিয়োগব্যথা তাকে এক অসাধারণ মানবিক নারীতে রূপান্তরিত করেছিল। তার কোনো চাকচিক্য ছিল না। তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে ‘প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়লক্ষ্মী নারী’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
পরশ বলেন, বঙ্গমাতার চালচলনে ছিল শাশ্বত বাঙালির মধ্যবিত্ত নারীর আটপৌরে রূপ। ছিল না কোনো লোভ-লালসা বা সখ-আহ্লাদ। জীবনে কোনো কিছুর আবদার করেননি স্বামীর কাছে বা শ্বশুরের কাছে। নিভৃতে সব কষ্ট সহ্য করেছেন। বঙ্গমাতাকে কাছ থেকে দেখার সামান্য সৌভাগ্য হয়েছে আমার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে সেই মানবিক ও চারিত্রিক গুণাবলি দেখে আমরা বিমোহিত হই। তার সবগুলো গুণাবলি অর্জন করেছেন তার মাতা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বঙ্গমাতা দেশগঠনে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে কাজ করেছেন, গরীব-এতিম-অসহায় মানুষদের সাহায্য করেছেন, বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে তিনি বিশেষ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, রেখেছেন সক্রিয় ভূমিকা। বীরাঙ্গনাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার মতো মহৎ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। শিশুদের প্রতিও ছিল তার অগাধ ভালবাসা। আমি মনে করি এসব মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও সক্রিয় করে তুলেছিলেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর অসুখ হলে তাকে সাহায্য করা, যারা বন্দি তাদের পরিবারগুলোকে দেখা, কার বাড়িতে বাজার হচ্ছে না এর খোঁজ-খবর নেওয়া, প্রয়োজনে নিজের গয়না বিক্রি করে নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের একটি মন্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এ সময়ের বেগম রোকেয়া, এ সময়ের চন্দ্রাবতী।
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বঙ্গমাতার অবদান আরও বেশি প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম ও ত্যাগের মহিমা তুলে ধরে তার আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, যার অন্যতম হোতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে নির্বিচারে নারী-শিশু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শত্রুরা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল বাঙালি জাতির ওপর। কাজেই জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার আজ এ প্রজন্মের সময়ের এবং নৈতিক দাবি। জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এবং অচিরেই সাজাপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ পথপরিক্রমায় থেকে থেকে জাতির পিতা হওয়ার পেছনে যে মানুষটির সবচেয়ে বেশি অবদান তিনি হলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। ৬ দফার সময় যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেসময় তিনি কীভাবে দল চালিয়েছেন, নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন তা সত্যিই অভিভূত হতে হয়। একজন সাধারণ নারী থেকে আওয়ামী লীগের মতো এত বড় একটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সব ক্ষেত্রে একত্রিত রাখা সত্যিই তার নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় গুণ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যেভাবে দেশকে ভালোবেসেছিলেন, বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে দেশকে সেভাবেই ভালোবেসেছিলেন। আমরা বঙ্গমাতার কাছ থেকে শিখতে পারি কীভাবে আদর্শগতভাবে সৎ থাকতে হয়, কীভাবে করুণ দুঃসময়ে অবিচল থেকে মোকাবিলা করতে হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশের সৃষ্টির লগ্নে অনেকের অবদান লেখা আছে। কিন্তু বঙ্গমাতার বিষয়ে সেভাবে লেখা হয়নি, তার অবদানকে সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। বর্তমানে তাকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হওয়ার কারণে আমরা বঙ্গমাতার অবদান সম্পর্কে জানতে পারছি। সম্প্রতি আরও বেশ কিছু লেখা হচ্ছে তার ওপরে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের। সাধারণত ক্ষমতার কাছে থাকা নারীদের মধ্যে হিংসা কাজ করে। কিন্তু বঙ্গমাতার রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে কোনো লোভ-লালসা ছিল না, হিংসা ছিল না। তিনি সর্বদা মানুষের জন্য কাজ করেছেন।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মুক্তা আক্তার।
কেএ