আকস্মিক বন্যায় সব এলোমেলো হয়ে গেল তাদের

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম

১০ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৩৯ পিএম


আকস্মিক বন্যায় সব এলোমেলো হয়ে গেল তাদের

টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলা সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। টানা তিন দিন এসব উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) থেকে ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে ভেসে উঠছে একের পর এক ক্ষতচিহ্ন। 

বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ কাঁচা বাড়ি ভেঙে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বসতবাডির আসবাবপত্র। বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত। স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে সড়কের কোনো কোনো অংশ। একাধিক স্থানে ভেঙে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এছাড়া, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার মাছের প্রজেক্ট। 

সবমিলিয়ে আকস্মিক এক ভয়াবহ বন্যা তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের জীবন এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। চিরচেনা ভিটেমাটি এখন তাদের কাছে অনেকটাই অচেনা। কবে নাগাদ এ ক্ষতি সামাল দিয়ে উঠতে পারবেন জানেন না ভুক্তভোগীরা।

সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ৮২ বছর বয়সী আসহাব মিয়া বলেন, আমার জীবদ্দশায় এত পানি দেখিনি। এ বছর বর্ষা অনেক আগে শুরু হলেও বৃষ্টির দেখা মিলছিল না। আষাঢ় মাসে দুয়েকবার বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু শ্রাবণ শেষের দিকে এসে বৃষ্টি শুরু হয়। এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে মঙ্গলবার বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। আমরা ঠাকুরদিঘী এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাই। আজ (বৃহস্পতিবার) পানি নামার পর বাড়িতে এসে দেখি কিছুই নেই। মাটির বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে।

dhakapost

ছদাহা ইউনিয়নের চাষি মো. শাহ আলম বলেন, ৩ কানির মতো জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে সব ভেসে গেছে। এছাড়া বাড়িঘরেও কিছু অবশিষ্ট নেই।

খাবার, সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ সংকট

বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ বাড়িতে এখন রান্নার মতো পরিস্থিতি নেই। শুকনা খাবারও অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলোতে বাজারও বসছে না ঠিকমতো। খেত-খামার তলিয়ে যাওয়ায় মিলছে না তেমন সবজি। নেই বিশুদ্ধ পানি। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের আওতায় এসেছে হাতেগোনা কিছু লোক। বাকিরা অসহায় দিনাতিপাত করছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যার কারণে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬০ টন চাল এবং সাড়ে ৩ লাখ নগদ টাকা ও সঙ্গে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। চন্দনাইশ উপজেলায় ৪৫ টন চাল ও আড়াই লাখ নগদ টাকা সঙ্গে শুকনা খাবার এবং লোহাগাড়া উপজেলায় ৫০ টন চাল ও ৩ লাখ নগদ টাকা সঙ্গে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।

dhakapost

এদিকে, বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। পানিতে তলিয়ে গেছে সাবস্টেশন। এ কারণে টানা চারদিন ধরে বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। নেই মোবাইল ফোনের সংযোগও। স্বজনরা কেউ কারও খোঁজ নিতে পারছেন না। সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে এলাকাজুড়ে। এরই মধ্যে গতকাল (বুধবার) দিবাগত রাতে সাতকানিয়া উপজেলার একাধিক এলাকায় ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। 

দুদিন পানির নিচে ছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার বুক চিরে যাওয়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ। সড়কটির কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি ওঠে। এ কারণে মঙ্গলবার ও বুধবার দুদিন এটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। তবে বুধবার রাত থেকে পানি নেমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ভেসে আসছে একের পর এক মরদেহ

চন্দনাইশ, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ায় তিন দিনে পাঁচজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের জনকল্যাণ এলাকা থেকে জুনায়েদুল ইসলাম জারিফ নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন বুধবার একই উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের চুনতিপাড়া এলাকা আসহাব মিয়া (৬৫) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি উপজেলার উত্তর আমিরাবাদ চট্টলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। একই দিন বিকেলে সাতকানিয়া পৌরসভার মির্জাখীলের বার্মা মার্কেট এলাকা থেকে তানভীর উদ্দিন (২০) নামে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

dhakapost

এছাড়া চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী এলাকা থেকে (বৃহস্পতিবার) সকালে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া আবু সৈয়দ (৮৩) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই এলাকা থেকে ও ওই বৃদ্ধের নাতি নাতি আনাসের (১০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল গতকাল (বুধবার)। 

এমআর/এসকেডি

Link copied