থার্টি ফার্স্ট নাইটে প্রকাশ্য স্থানে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা পুলিশের

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বছরজুড়ে সব অনুষ্ঠানেই গেছে নানা বাধা। এ অবস্থায় দোরগোড়ায় এখন ইংরেজি নববর্ষ।
ভিড় এড়াতে নববর্ষের অনুষ্ঠানের ওপরও তাই নানা বিধি-নিষেধ আরোপিত হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নগরীর সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থের কারণে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, ভবনের ছাদে এবং প্রকাশ্য স্থানে কোনো ধরনের জমায়েত, সমাবেশ, উৎসব করা যাবে না।
ঘরোয়া আয়োজনের দিকে গতবার নজরও ছিল পুলিশের। বলা হয়েছিলো ছাদে আয়োজন না করতে। তারপরও ছাদে মানুষ আনন্দ-উৎসব হই-হুল্লোর করেছিলেন।
একইসঙ্গে এবার রাত ৮টার পর গুলশান, বনানী ও হাতিরঝিলে বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতবছরও এমন নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছিল।
৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা মহানগরীর কোনো বার খোলা রাখা যাবে না বলেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রাত ১০টার মধ্যে সব ফাস্টফুডের দোকান বন্ধ করতে হবে।
উৎসব উদযাপনের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ঐতিহ্যবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
পুলিশের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আতশবাজি করা যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বার্তায় বলেন, ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে নির্ধারিত অনুষ্ঠানগুলো হবে। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। উৎসব উদযাপনের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ঐতিহ্য বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে থাকে। কতিপয় ব্যক্তি আনন্দের আতিশয্যে পটকাবাজি, আতশবাজি, অশোভন আচরণ, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানোর মাধ্যমে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা/দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়। ক্ষেত্র বিশেষে প্রকাশ্যে অভদ্রজনোচিত আপত্তিকর আচরণ করে থাকে।
এসব নৈতিক মূল্যবোধ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা সৃষ্টি করে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশের পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, এমতাবস্থায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া গাড়ি, মোটরসাইকেল চালনোসহ যেকোনো ধরনের অশোভন আচরণ এবং বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হলো। ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনকালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির যেকোনো ধরনের আশঙ্কা রোধকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে নির্দেশনাগুলো মেনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছে ডিএমপি।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছরই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রচুর মানুষ সেসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আনন্দ-উৎসব করেন। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিবছরই পুলিশের পক্ষ থেকে নানা কড়াকড়ি আরোপ করা থাকে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হলো না।
পুলিশের নির্দেশনা
১. রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায়, ভবনের ছাদে এবং প্রকাশ্যে স্থানে কোনো ধরনের জমায়েত, সমাবেশ, উৎসব করা যাবে না।
২. উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান বা সমবেত হওয়া যাবে না বা নাচ, গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।
৩. আতশবাজি বা পটকা ফাটানো যাবে না।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে নীলক্ষেত ক্রসিং দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে পারবে।
৬. গুলশান ও বনানী এলাকায় রাত ৮ টার পর বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে এসব এলাকায় বসবাসরত নাগরিকরা নির্ধারিত সময়ের পর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং দিয়ে পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন।
৭. এই সময়ের মধ্যে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বহিরাগতদের গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় গমনে নিরুৎসাহিত করা হলো।
৮. রাত ৮টার পরে হাতিরঝিল এলাকায় কাউকে অবস্থান করতে দেয়া হবে না।
৯. গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে অনুরোধ করা হলো।
১০. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা মহানগরীর কোনো বার খোলা রাখা যাবে না।
১১. রাত ১০টার পর সকল ফাস্টফুড দোকান বন্ধ থাকবে।
১২. সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সীমিত আকারে আবাসিক হোটেলগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে। তবে কোন ক্রমেই ডিজে পার্টি করতে দেয়া যাবে না।
১৩. ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি ভোর ৬ টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেঁস্তোরা, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সকল প্রকার লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না।
বেপরোয়া-মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালেই ব্যবস্থা
নববর্ষ ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এবার কেউ বেপরোয়া, মদ্যপ ও বিপজ্জনক অবস্থায় গাড়ি চালালে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবে ট্রাফিক পুলিশ।
ট্রাফিক ডাইভারশন ও পুলিশের পরামর্শ
১. ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে পরদিন অর্থাৎ নতুন বছরের ভোর ৫টা পর্যন্ত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় যানবাহনযোগে প্রবেশের জন্য কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে গুলশান, বনানী ও বারিধারায় বসবাসরত নাগরিকদের রাত ৮টা মধ্যে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে হবে।
২. রাত ৮ টা থেকে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাখালী এলাকা-ফিনিক্স রোড ক্রসিং, বনানী ১১ নং রোড ক্রসিং, চেয়ারম্যান বাড়ি ক্রসিং, ঢাকা গেট, শুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা-ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং ও নতুন বাজার ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে না। তবে এসব এলাকা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।
শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে ঢাবি এলাকায় প্রবেশে দেখাতে হবে এনআইডি কার্ড
৩. একইভাবে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত শুধুমাত্র শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিচয় প্রদর্শন এবং সনাক্তকরণ পূর্বক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। এজন্য পরিচয়পত্র সাথে রাখার জন্য সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৪. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে টিএসসি, রোমানা স্কয়ার, ঢাকা মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ভাঙ্কর্য ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং, বকশী বাজার ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং এবং শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করবে না, শুধু বের হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।
৫. হাইকোর্ট ক্রসিং থেকে আগত সকল প্রকার যানবাহন দোয়েল চত্বর থেকে বামে মোড় নিয়ে শহিদুল্লাহ হল হয়ে চাঁনখারপুল ক্রসিং দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে।
৬. কেউ বেপরোয়া, মদ্যপ ও বিপজ্জনক অবস্থায় গাড়ি চালালে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেইউ/এনএফ