বাজার মনিটরিং নয়, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতেই জোর

রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তবে চলতি বছর এ ধরনের অভিযানে গুরুত্ব দিচ্ছে না ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তারচেয়ে সরকার ঘোষিত চলমান সর্বাত্মক বিধিনিষেধে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে বেশি জোর দিচ্ছে সংস্থা দুটি।
জানা গেছে, রোজা শুরুর আগে মাংসের দাম নির্ধারণে সভা ডেকেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু এটার কার্যকরী ফলাফল নির্ধারণে মাঠে নামেনি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ বা বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযানের বদলে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক বিধিনিষেধের আওতায় আরোপিত নির্দেশনা তদারকিতে একযোগে প্রতিটি অঞ্চলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। তাদের অভিযানে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করা, স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা, অনুমোদনহীন দোকানপাট খোলা রাখা ও মশার লার্ভা পাওয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। সে তুলনায় বাজার নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্যদ্রব্যে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে অনেক কম।
এদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ বা বাজার মনিটরিং না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। হাবিবুর রহমান নামে বাড্ডা বাজারের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার করোনাকালে নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো মনিটরিং নেই। যে যার মতো করে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। আগে বাজারে প্রতিদিন পণ্যের দাম ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এবার তা নেই। রমজানে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হতো সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এবার এ ধরনের কার্যকরী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ সুযোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো বাজারে গরুর মাংস প্রতিকেজি ৬০০, কোথাও ৫৮০ আবার কোথাও ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলো নির্ধারণে সিটি করপোরেশনের কোনো অভিযান চোখে পড়েনি এবার।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ অমান্য করা, লাইসেন্স ব্যতীত ও লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে ব্যবসা করা, মাস্ক না পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাসার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অভিযানে ১৫টি মামলায় ১৫ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক বিধিনিষেধের আওতায় আরোপিত নির্দেশনা তদারকিতে অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও। অভিযানে ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় একযোগে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের।
তিনি জানান, অভিযানে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করা, স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা, অনুমোদনবিহীন দোকানপাট খোলা রাখা ও মশার লার্ভা পাওয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ৫৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
বাজার দর বা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিংয়ে অন্যবারের মতো কেন সিটি করপোরেশনের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের এক ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব এবং সর্বাত্মক বিধিনিষেধের কারণে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরিচালিত অভিযানগুলোয় জনগণের স্বাস্থ্যবিধির প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা, লাইসেন্স ব্যতীত ও লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে ব্যবসা করা, মাস্ক না পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে মোবাইল কোর্ট বেশি পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে অন্যবার রমজানে যেমন বাজার মনিটরিং, ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছিল এবার তা কম হচ্ছে।
এএসএস/এসকেডি