বার বার মনে হচ্ছিল এই বুঝি সব শেষ

রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় হাজী মুসা ম্যানসনের আগুনের খুব কাছ থেকে বেঁচে ফিরেছেন জেসমিন আক্তার ও তার পরিবার। ভবনটির দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা তারা। আগুনের সূত্রপাত নিচ তলার কেমিক্যাল গোডাউন থেকে।
ঢাকা পোস্টকে বেঁচে ফেরা জেসমিন আক্তার বলছিলেন, ‘বার বার মনে হচ্ছিল এই বুঝি সব শেষ! কিছুই আর ভাবতে পারছিলাম না। মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি।’
তিনি বলেন, এভাবে আগুনের কাছে থেকে বেঁচে ফিরব ভাবিনি। নতুন করে সবকিছু পেলাম, আমার সন্তানরা এতিম হয়নি।
আরও পড়ুন : দগ্ধ ২১ জন শেখ হাসিনা বার্নে, শ্বাসনালী পুড়েছে ২০ জনের
শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে কথা হয় জেসমিন আক্তারের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সেহরির জন্য উঠেছি, খাওয়া-দাওয়ার পর তখনো কেউ ঘুমাইনি। বাচ্চারা খেলছিল। হঠাৎ মেয়ে বলে উঠে ‘আম্মু তোমরা কিছু করছো, ধোঁয়া আসতেছে কেন?’ বাইরে দরজা খুলতেই দেখি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। প্রথমে আগুনে কোনো গন্ধ পাইনি। আমার স্বামী ঘরের প্রধান দরজা লাগিয়ে দেয়। বিদ্যুৎ চলে যায়, ধোঁয়া বেড়ে গেলে গন্ধ আর ধোঁয়ায় নিশ্বাস নেওয়া কষ্ট হচ্ছিল, চোখ জ্বালাপোড়া করছিল। বেডরুমে দুই ছেলে মেয়ে কান্না করছিল। ওরা ভয়ে চিৎকার করছিল, এক পর্যায়ে আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়।’
আরও পড়ুন : ঘুম থেকে ওঠার সুযোগ হয়নি রাসেলের
আতঙ্কিত জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছিল না। আমি বার বার বলছিলাম ঘরে থাকলে ধোঁয়ায় মারা যাব। ঘর থেকে যেকোনোভাবেই হোক বের হতে হবে। পরে আগুন যখন কমল, সূর্য ওঠায় আশপাশে যখন আলো আসল তখন আমরা বের হওয়ার চেষ্টা করি। ওড়না পেঁচিয়ে আমি কোনোমতে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসি। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে ছিলেন সাতজন। তারা জানালা ভেঙে কাঠের টুকরা দিয়ে সিঁড়ি বানিয়ে নিচে নেমে যায়।’
জেসমিন আক্তারের স্বামী আব্দুস সালাম বলেন, আমরা এ ভবনে উঠেছি বেশিদিন হয়নি। স্ত্রী ছেলে মেয়েকে নিয়ে এ ধরনের ভবনে ওঠা ছিল জীবনের বড় ভুল। আল্লাহর শুকরিয়া, বেঁচে ফিরেছি।
আরও পড়ুন : ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছিল না আরমানিটোলার গোডাউনটির
সন্তান, নাতিসহ ৬ জনেক নিয়ে ভবনটির পাঁচতলা সি ব্লকে থাকতেন হেনা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে জেগেই ছিলাম। ধোঁয়া দেখে প্রথমে মনে করেছিলাম রান্নার ধোঁয়া। কেউ একজন কলিং বেল চাপে। শব্দ পেয়ে দরজা খুলে দেখি পুরো ভবনে ধোঁয়া। পরে পশ্চিম পাশের গ্রিল কেটে মই দিয়ে বাইরে বের হই।’
আরও পড়ুন : বাঁচার জন্য জানালার কাঁচ ভেঙে চিৎকার করছিলেন বাসিন্দারা
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টা ১৮ মিনিটে আরমানিয়ান স্ট্রিটের হাজী মুসা ম্যানসনে আগুন লাগে। ওই ভবনের দোতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত লোকজন বসবাস করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২১ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
জেইউ/এসকেডি/জেএস
