এয়ারবাসের ৪ উড়োজাহাজ কিনতে তাগাদা দিতে পারে ব্রিটেন
ইউরোপীয় কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কিনবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ব্রিটেন থেকে চারটি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। ব্রিটেনের প্রস্তাব নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। চলমান আলোচনায় গতি আনতে ঢাকাকে তাগাদা দেবে ব্রিটেন।
মঙ্গলবার (৭ মে) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ব্রিটেনের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মারি ট্রিভেলিয়ান। এক বছর ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় ঢাকা সফরে এসে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে বৈঠক করে দেশটি থেকে উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি তুলবেন ট্রিভেলিয়ান।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চতুর্থ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ব্রিটেন থেকে প্রথম কোনো মন্ত্রীর এটি প্রথম ঢাকা সফর। আর আইপিএস বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর এটি এক বছর ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় ঢাকা সফর হতে যাচ্ছে। তার সফরে জলবায়ু অর্থায়ন বা রোহিঙ্গাদের সহায়তার প্রসঙ্গ আলোচনায় থাকলেও মূল ফোকাস হবে এয়ারবাস কেনার বিষয়টি। এয়ারবাস থেকে চারটি উড়োজাহাজ বিক্রির বিষয়ে চলমান আলোচনায় গতি আনতে তাগাদা দেবেন ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে (সেপ্টেম্বর, ২০২৩) এয়ারবাস থেকে বাংলাদেশের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার কথা হয়েছে। ব্রিটেন বাংলাদেশের কাছে চারটি উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায়। ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী উড়োজাহাজটি নিয়ে বেশি কথা বলবেন। এয়ারবাস একটা ফোকাস হবে। উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে আমাদের এক ধরনের সমঝোতা আছে। ওটার ফলোআপ হতে পারে। এগুলো নিয়ে আলাপ হবে। ওরা উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে তাগাদা দিতে পারে।
২০২৩ সালের মে মাসের শুরুতে এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয় বিমানের পরিচালনা পর্ষদ। এর দিন দুয়েকের মাথায় লন্ডনে ‘অ্যাভিয়েশন পার্টনারশিপ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের মধ্যে যৌথ কমিউনিক স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে এয়ারবাস থেকে যাত্রী ও কার্গো বিমান বা উড়োজাহাজ ক্রয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পরবর্তী চার মাসের মাথায় সেপ্টেম্বরে (২০২৩) বাংলাদেশ সফর করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তার সফরে এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
গত জানুয়ারির শেষের দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই এবং জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রয়েস্টার। দুই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতি সায় দিলে ইউরোপীয় কোম্পানি এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ কিনবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ৭-৯ মে ঢাকা সফর করবেন। সফরের শুরুর দিন তার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান এবং শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। পরদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া, ঢাকা সফরকালে ট্রিভেলিয়ান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এদিকে, প্রতিমন্ত্রী ট্রিভেলিয়ানের সফর নিয়ে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন বলছে, দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসে প্রতিমন্ত্রী দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদারে গুরুত্বারোপ করবেন। তার সফরের মধ্য দিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অভিবাসন, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়বে।
প্রতিমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় আলোচনায় ব্রিটেন-বাংলাদেশ অভিবাসন খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
ট্রেভেলিয়ান ঢাকা সফরের সময় মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার যে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির ভিত্তি, তা তিনি আলোচনায় তুলে ধরবেন।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার কর্মকাণ্ডে তরুণ ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে ব্রিটেনের নতুন সহায়তার ঘোষণা করবেন।
ঢাকার এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ট্রিভেলিয়ান খুব একটা এজেন্ডাভিত্তিক কথা বলবেন বিষয়টি এমন নয়। জলবায়ু পরিবর্তনে অর্থায়ন, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা আসতে পারে। তবে, এয়ারবাসটা একটা ফোকাস হতে পারে।
আইপিএস নিয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না? জানতে চাইলে এ কূটনীতিক বলেন, ব্রিটেন ওদের কার্যক্রমের সঙ্গে আমাদের যুক্ত করতে চায়। আমাদের একটা ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক আছে। আমরা অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট কোনো সহেযাগিতা বা যুক্ত হওয়ার বিষয় থাকলে আমরা সেটিকে স্বাগত জানাই।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন অ্যান-মারি ট্রিভেলিয়ান।
এনআই/কেএ