বন্ধুত্ব-প্রেম, বাসায় ডেকে অশ্লীল ভিডিও’র ফাঁদ

প্রথমে পরিচয়। তারপর বন্ধুত্ব অর্জনে মুঠোফোন, ফেসবুকে যোগাযোগ, মাঝেমধ্যে সাক্ষাৎ। এরপর বাসায় দাওয়াত। বন্ধুত্ব বা প্রেম ভেবে যারাই দাওয়াতে বা দেখা করার ডাকে বাসায় গিয়েছে, তারাই প্রতারণার শিকার হয়েছে। ফাঁদে পড়ে খুইয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
সম্প্রতি রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তিন নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের একটি দল।
গ্রেফতাররা হলেন- লামিসা বিনতে জাকির অর্থী (২১), তাসফিয়া বিনতে আশরাফ সারা (২০) ও তাদের সহযোগী মোসা. আসুহা আবেদীন রোজা (২২), ইমরান আহমেদ নাজিম হোসেন (২১), খালিদ বিন মাইতুল ফাহিম (২৩) এবং আসিফুল ইসলাম ওরফে আসিফ (২১)।
আদালতের নির্দেশনায় একদিনের রিমাণ্ডে রয়েছেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদে বন্ধুত্ব, প্রেম, বাসায় ডেকে জিম্মি ও ছবি-ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায় করার ব্যাপারে প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করেছেন তারা।
ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম ইনচার্জ এডিসি আশরাফউল্লাহ বলেন, লামিসা এবং সারা মামলার বাদী মেহেদির (ছদ্মনাম) সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। তাদের ফোনে কথা হয়, কুশল বিনিময় হয়, মাঝে মধ্যে দেখাও হতো।
বন্ধুত্বের বিশ্বস্ততা অর্জনের পর বাসায় ডেকে নেয়া হয় মেহেদিকে। চলতি রমজান মাসেই তাকে বাসায় ডেকে নেয় আসামিরা। যেখানে আগে থেকেই পেতে রাখা ছিল প্রতারণার ফাঁদ।
লামিসা ও সারার ভাড়া বাসায় ইফতারের দাওয়াত দেওয়া হয়। মেহেদি সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, চক্রের সদস্যরা হাজির হয়। তারা মেহেদিকে জিম্মি করে। তারা মেহেদির জামা কাপড় খুলে ছবি-ভিডিও ধারণ করে। এরপর হয় লামিসাকে বিয়ে নয়ত পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। মারধরও করা হয়।
চক্রের সদস্যরা ‘তুই খারাপ কাজ করছিস, এখন তোর লামিছাকে বিয়ে করা লাগবে, না হয় পাঁচ লাখ টাকা দে’ বলে বাদীকে হুমকি দেয়।
বাদী টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারে এবং বাদীর প্যান্ট খোলার চেষ্টা করে। বিষয়টি নিয়ে আসামিদের সঙ্গে এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় রফাদফা হয়। ওই টাকা নিতে চারটি বিকাশ নাম্বার দেওয়া হয়। বাদী তার অফিস স্টাফ এবং পরিচিত বিকাশের দোকান থেকে টাকা পাঠায়। টাকা পেয়ে ভুক্তভোগীকে ছেড়ে দেয় চক্রটি।
তবে আসামিরা তাদের কাছে থাকা ভিডিওটি ভাইরাল না করার শর্তে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। অন্যথায় বাদীর ভিডিও ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী শাহজাহানপুর থানায় মামলা করার পর চক্রটির ওই ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে সাতটি মোবাইল ফোন, ১০টি সিম কার্ড এবং বাদীর আপত্তিকর ধারণ করা ভিডিও এবং টাকা জন্য দাবি করা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং উদ্ধার করা হয়।
এডিসি আশরাফ উল্লাহ বলেন, চক্রটির মূলহোতা মো. ইয়াসিন ইমন (২৫)। তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মামলায় গ্রেফতার লামিসা বিনতে জাকির অর্থী ও তাসফিয়া বিনতে আশরাফ সারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের পুলিশ রিমান্ডে ডিবি হেফাজতে রয়েছে। তারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষকে আটকে টাকা আদায় করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
জেইউ/এসএসএইচ