রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বাহারি ইফতার আয়োজন, তবে দাম চড়া

ইফতার আয়োজনে ভোজনরসিকদের কাছে বাহারি পদগুলো রোজার বিশেষ মুহূর্তকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। তাই ইফতার টেবিলে ঐতিহ্যবাহী এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি নানান পদের খাবারের চাহিদা অনেক। সে অনুযায়ী প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর সব এলাকাতে ইফতার আয়োজনে স্থান পেয়েছে বাহারি সব পদ। প্রতিটি এলাকা ও মহল্লার মূল সড়ক, গলিসহ মোড়গুলোতে অস্থায়ী দোকান ও রেস্টুরেন্টে ইফতারির ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে। তবে গতবারের তুলনায় এবার ইফতারের সব পদের দামই বাড়তি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর, মাটিকাটা, মানিকদী, ইসিবি চত্বরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইফতার আয়োজনে স্থান পেয়েছে ছোলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ডিম চপ, দই বড়া, ডাবলির ঘুঘনি, মিষ্টি, শাহী হালিম, গরু-মুরগি-খাসির হালিম, কাবাব, সবজি পাকোড়া।
আর মিষ্টি ও ভারী পদের মধ্যে রয়েছে— রেশমি জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, বুন্দিয়া, দই, রেশমি কাবাব, গ্রিল চিকেন, গরুর কালো ভুনা, কাচ্চি, মগজ ভুনা, চিংড়ি বল, পরোটা, লুচি, চিকেন তান্দুরি, চিকেন বটি কবাব এবং দই চিড়া। এরসাথে পানীয়ের মধ্যে রয়েছে পেস্তা বাদাম শরবত, বেলের শরবত, তরমুজের শরবত।
আবার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টে রয়েছে বিশেষ ইফতার আয়োজন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - হালিম, ফালুদা, সেমাই, চপ, কাবাব, সালাদ, পিঠা, পায়েস, জিলাপি, পুডিং, শিক ও বটি কাবাব, গরু-খাসির বিরিয়ানি ও কাচ্চি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রতিবছর শুধু রোজার মাসেই ইফতারের এসব বাহারি ও সুস্বাদু পদগুলোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে দাম নির্ধারণে ভোক্তা পর্যায়ে যেন সহনীয়তা বজায় থাকে সে চেষ্টা করা হয়। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে গতবছরের চেয়েও এবার সব ইফতার আইটেমের দামই কিছুটা বেড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারের প্রচলিত খাবারগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ভাজাগুলো প্রায় অধিকাংশ জায়গায় সর্বনিম্ন প্রতিটি ১০ টাকা দাম থেকে শুরু হচ্ছে। কিন্তু গতবছরও এসব ভাজা আইটেম অধিকাংশ জায়গায় প্রতিটি ৫ টাকা দামে পাওয়া গেছে। এছাড়া দোকানগুলোতে ডিম চপ ২৫ টাকা, দই বড়া বাটি মানভেদে ২০০-৩০০ টাকা, ডাবলির ঘুঘনি (ওজন অনুযায়ী) ১৫০ টাকা কেজি, শাহী হালিম বাটি ও মাটির পাত্রের আকার অনুযায়ী ১৫০-১২০০ টাকা, গরু-মুরগি-খাসির হালিম ১০০-৬০০, কাবাব ৩০০-৮০০ টাকা, সবজি পাকোড়া ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর সঙ্গে সাধারণ জিলাপি ২৫০-৩০০ টাকা, রেশমি জিলাপি ২২০-৫০০ টাকা, ফালুদা বাটিপ্রতি ২৫০ টাকা, দুধ-ডিম ও ডাবের পুডিং ২৫০ টাকা, কাস্টার্ড ২০০ টাকা, শিক কাবাব ১৪০-১৮০ টাকা, বিরিয়ানি ১৫০-২২০ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানি ২৫০-৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
ইসিবি চত্বরের মুসলিম সুইটসের ইফতার বিক্রয়কর্মী ফয়সাল বলেন, আগের বছরের চেয়ে সবকিছুর দামই বেড়েছে। কারণ, ইফতার তৈরির সব উপকরণের দামই অনেক বেশি। চিনি, আটা, ময়দা, কাঁচামরিচ, সয়াবিন তেলসহ সবকিছুর দামই বেশি। সেজন্য ইফতারের বিভিন্ন আইটেমের দামও বেড়েছে। আসাদের এখানে সর্বনিম্ন ১০ টাকায় পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, আর সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা দামে হালিম এবং এর মধ্যে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন কাবাব আইটেম পাওয়া যাচ্ছে।
মানিকদী সড়কের নবাব বিরিয়ানি হাউজের রাসেল মিয়া বলেন, স্বাভাবিক বিরিয়ানির সঙ্গে কাচ্চি ইফতারে বেশ চাহিদা পায়। আর আমাদের এখানে শাহী হালিমের ব্যবস্থা রয়েছে। ৫টি বিভিন্ন আকৃতির মাটির হাঁড়িতে এই শাহী হালিম বিক্রি করা হচ্ছে। সবচেয়ে ছোট ১ হাড়ি শাহী হালিম ১৫০ টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে ২৫০, ৩৫০, ৫০০ এবং ৬০০ টাকায় হালিম বিক্রি করা হচ্ছে। চাহিদা বেশ ভালোই। সামনে এখনও পুরো রোজাই পড়ে আছে। আস্তে আস্তে বিক্রি আরও বাড়বে।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, দরদাম যেমনই হোক না কেন প্রয়োজন ও সাধ্য দুটো বিবেচনায় নিয়েই তারা ইফতারে বিভিন্ন আইটেম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
আব্দুল গফুর নামের এক ক্রেতা বলেন, ইফতারে দই-চিড়া আমার পরিবারের পছন্দ। সেজন্য দই কিনতে দাম যেমনই হোক সেটি কখনও চিন্তা করিনা। আবার বাইরের অন্যান্য তৈরি খাবারও কম নেওয়ার চেষ্টা করি।
হালিম কিনতে আসা আব্দুল লতিফ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ইফতারে ঘরে তৈরি করা বিভিন্ন খাবারই যথেষ্ট। তারপরও সবাই হালিম খেতে পছন্দ করে। সেজন্য হালিম কিনেছি। দাম প্রতিবছরই বাড়ে। এটা ব্যবসায়ীদের অভ্যাস। তারপরও এবছর সবকিছুর দামই একটু বেশি মনে হচ্ছে।
আরএইচটি/জেডএস