দালালদের নিয়ে পরামর্শ দিলো পাসপোর্ট অধিদপ্তর

সারা দেশের পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের দালাল চক্রের বিষয়ে সতর্ক থাকতে সাধারণ জনগণদের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা জানায়, সম্প্রতি কিছু ঘটনা পাসপোর্ট অধিদপ্তরের গোচরীভূত হয়। যাতে দেখা যায় যে, দালাল বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের দ্বারা সাধারণ মানুষজন প্রতারিত হচ্ছেন। যার সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসসমূহের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গ্রিস প্রবাসী সালমান ফারসিকে একই জেলার জনৈক মঞ্জু মিয়া (মঙ্গল মিয়ার ভাতিজা) পাসপোর্টের সমস্যার সমাধান করে দেবে বলে ২ লাখ টাকা চুক্তি করে এক লাখ টাকা অগ্রিম নেন। কিন্তু এক বছর অতিক্রম হওয়ার পরেও তার পাসপোর্টের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় সালমান ফারসির পরিবারের পক্ষ থেকে উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, আবেদনকারী সালমান ফারসির ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে ২টি পাসপোর্ট ছিল। এক্ষেত্রে আবেদনকারী নিজে অথবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দাখিল করলে আবেদনটি তাড়াতাড়ি নিষ্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তারা সেটি করেনি বরং দালালের শরণাপন্ন হয়েছেন। এক পর্যায়ে আবেদনকারী সালমান ফারসি বুঝতে পারেন যে, দালাল তার নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর সাথে পাসপোর্ট অফিসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অতএব সে তার ভুল বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যদের অবগত করার পর পরিবার থেকে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দাখিল করে পাসপোর্টের বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।
আরও পড়ুন
পাসপোর্ট অধিদপ্তর আরও জানায়, ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ,আগারগাঁও, প্রধান কার্যালয়ের ভিসা শাখায় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও সরকারি ফি দিয়ে আবেদন দাখিল করতে হয়। আবেদন দাখিলের পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করে নির্ধারিত তারিখে বিদেশি নাগরিকের অনুকূলে বর্ধিত ভিসা ইস্যু করা হয়। ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিদেশি নাগরিকের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা ভিসা অফিসে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় বলে কোম্পানির কাছে থেকে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করছে, যা মোটেও সত্য নয়। ভিসা শাখায় সরকারি ফি এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দিতে হয় না। অর্থাৎ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ভিসা শাখার নাম ব্যবহার করে অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎ করছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
সংস্থাটি জানায়, পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তা অথবা প্রধান কার্যালয়ের ১০ম তলায় স্থাপিত হেল্প ডেস্ক ও কল সেন্টার (১৬৪৪৫) এর সহযোগিতা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ব্যতীত কোনো তৃতীয় পক্ষ তথা দালাল কিংবা অবাঞ্ছিত ব্যক্তির সাথে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন হতে বিরত থাকার অনুরোধ রইল।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সিস্টেম এনালিস্ট মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান মহাপরিচালক মহোদয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থানের কারণে অধিদপ্তরের কেউ অবৈধ লেনদেন করার সাহস পায় না। ইতোমধ্যে মাল্টিপল/তথ্য পরিবর্তনের বেশিরভাগ আবেদন সমাধান হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দালালচক্র আমাদের নাম ভাঙিয়ে অসহায় প্রবাসীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে আমরা শুনতে পাই এবং তার কিছু প্রমাণও পেয়েছি। এখন একটি নির্দিষ্ট সময় পর কিছু প্রসিডিউর মেনে অটোমেটিক এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু দালালরা বলে যে সে অফিসের সাথে যোগাযোগ করে এ কাজটি করেছে। এভাবে বলে টাকা নেয় তারা।
তিনি জানান, প্রবাসীরা হলো রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তাদের এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য নির্দিষ্ট শাখা খুব আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তাই দালালদের সাথে যোগাযোগ না করে সরাসরি নির্দেশিত ডেস্কে যোগাযোগ করবেন এবং সরকারের ফি’র অতিরিক্ত একটি টাকা কোথাও দেবেন না। দালালের কাছে গিয়ে প্রতারিত হবেন না।
এসআর/এমএ