জব্বারের মেলা : ঐতিহ্যবাহী পণ্যে পুরোনো দিনের স্মৃতি

ছোটবেলায় বাবা হাত ধরে এ মেলায় আনতেন। বাতাসার প্যাকেট, মাটির পুতুল আর নাগরদোলার সেই প্রথম চড়া এখনো মনে গেঁথে আছে। আজ আমি নিজের ছেলেকে এনেছি মেলায়। যেন শিকড়টা না হারায়। কথাগুলো বলছিলেন ষাটোর্ধ সোলতান আহমেদ। শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের মেলায়।
একশ পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা জব্বারের মেলা কেবল চট্টগ্রামের নয়, বরং পুরো দেশের লোকজ সংস্কৃতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এ মেলার সূচনা করেন। শুরুটা ছিল কুস্তির আয়োজন দিয়ে। তবে সেই বলী খেলার বাইরেই আজকের মেলার বিস্তার। কালের পরিক্রমায় বলী খেলার পাশে দাঁড়িয়ে এখন যে মেলা, তা হয়ে উঠেছে বাঙালির মাটির টানে ফিরে আসার উৎসব।

প্রতিবছর বৈশাখে লালদিঘী ময়দান ঘিরে বসে এ মেলা। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। এখানকার কিছু পণ্য হয়ে উঠেছে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর আবেগের প্রতীক। অনেকে এই মেলা থেকে বিশেষ জিনিসপত্র কিনতে অপেক্ষা করেন। যেগুলো কারো কারো কাছে শুধু কেনাকাটা নয়, বরং একটি ঐতিহ্য, একটি স্মৃতি।
আরও পড়ুন
সবশেষ এবারের বলী খেলায় লালদিঘী মাঠ ঘিরে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সারি করে দোকান বসতে দেখা যায়। শত শত দোকানি সড়ক-গলিতে তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। মাটির হাঁড়ি, পুতুল, হস্তশিল্প, বাঁশের ঝুড়ি, পানের কৌটা, পাটের ব্যাগ, কাঠের তৈরি রান্নাবাটি, গ্রামীণ খেলনা, কাঠের তৈরি পুতুল ও রঙিন পাটের ব্যাগসহ নানা ধরনের দেশীয় তৈজসপত্রসহ কি পাওয়া যায় না এ মেলায়? ঐতিহ্যবাহী এসব পণ্য কিনতে প্রতিদিন মেলায় ভিড় করছেন হাজার হাজার ক্রেতা।

মেলার একটি দোকানে পাওয়া যায় হাতে তৈরি কাপড়, বিছানার চাদর ও কাঁথা। যেগুলো বাজারে সচরাচর পাওয়া যায় না। উপস্থিত লোকজন আগ্রহ নিয়ে এসব পণ্য দেখছিলেন। দোকানি জানান, এই পণ্যগুলো একেবারে হাতে তৈরি এবং প্রতিটি পণ্যের পেছনে থাকে শ্রম আর মেধা।
নগরের বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে এসে প্রতিবার বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করি। ছোটবেলায় মা-খালা সবাই মিলে মাটির জিনিসপত্র এনে বাড়িতে সাজাতেন। এবারও এরকম কিছু কিনেছি।

রুহুল আমিন নামের এক দোকানি বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে আমি এ মেলায় আসছি। আমাদের তৈরি মাটির হাঁড়ি, পুতুল ও রান্নাবাটির সেট এখনো মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। অনেক পুরোনো ক্রেতা আছেন যারা প্রতি বছর এসে আমাদের কাছ থেকে জিনিস কেনেন। এই মেলা আমাদের বছরের বড় বিক্রির জায়গা। শুধু বেচাকেনা না, এই মেলার সঙ্গে আমাদের একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে।
মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, মেলায় প্রতিদিন কয়েক লাখ ক্রেতার সমাগম হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে এবার মেলায় শত কোটি টাকার ব্যবসা হবে।
এমআর/এসএসএইচ