ইরানের হটলাইনে অন্য প্রবাসীদের ফোন, জানতে চান ‘আমিরাতের ভিসা খুলবে কবে!’

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর তৃতীয় দিন ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের যোগাযোগের সুবিধার্থে তেহরান দূতাবাস জরুরি হটলাইন চালু করেছে। তেহরানের একদিন পর ঢাকা থেকেও একটি হটলাইন চালু করা হয়। ইরান প্রবাসীদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে এসব হটলাইন চালু করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইরান প্রবাসীদের জন্য চালু করা এ দুই হটলাইনে একের পর এক ফোন করছেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে থাকা প্রবাসীরা। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, লেবানন, জর্ডান, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরব থেকে বহু ফোন আসছে। প্রবাসীরা ভিসা, পাসপোর্ট, আকামা (কাজের অনুমতিপত্র), দেশে ফিরতে চাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরছেন এবং নানা তথ্য জানতে চাচ্ছেন।
মূলত তেহরানের পরিস্থিতি বিবেচনায় সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। এমন অবস্থায় ইরান ছাড়া অন্য দেশ থেকে প্রবাসীদের ফোন তেহরান এবং ঢাকায় হটলাইনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
আরও পড়ুন
তেহরানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্টারনেটের সমস্যা থাকায় ইরানে বসবাসরতরা সরাসরি ফোনে বেশি যোগাযোগ করছেন। চলমান পরিস্থিতিতে ইরানে থাকা বেশ কিছু বাংলাদেশি যোগাযোগ করেছেন। তাদের মধ্যে বৈধ, অবৈধ, শিক্ষার্থী, চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশি রয়েছেন। পাশাপাশি আমিরাত, সৌদি আরব, ইরাক থেকে কিছু প্রবাসীও ফোন করছেন।
ইরান প্রবাসীদের স্বজনদের সুবিধার্থে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সোমবার একটি হটলাইন নম্বর চালু করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই নম্বরে ইরান প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও দেশে থাকা তাদের স্বজনরা ফোন করছেন। এ সময়ে ইরান সংক্রান্ত শ’খানেকের বেশি ফোন এসেছে হটলাইনে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, লেবানন, জর্ডান, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরব থেকে বেশকিছু প্রবাসীর ফোনও পাচ্ছেন তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, হটলাইন চালু করা হয়েছে ইরান প্রবাসীদের জন্য। ইরান থেকে প্রবাসীরা ফোন করছেন, তাদের স্বজনদের অনেকে বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু বেশকিছু ফোন আসছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের কাছ থেকে। আমিরাত থেকে এক প্রবাসী ফোন করে জানতে চাইল, ভিসা কবে খুলবে? ইরাক থেকে এক প্রবাসী ফোনে জানিয়েছেন, তিনি দেশে ফিরতে চান। এভাবে কেউ পাসপোর্ট, ভিসা, আকামাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলার জন্য ফোন করছেন। এটি আমাদের কাজের ক্ষতি করছে।
আরও পড়ুন

ইরানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের চিত্র
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির মধ্যে শ’খানেকের বেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকের বেশি তেহরান থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, অন্য কূটনীতিকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ৪০ জন নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আটজন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশি রয়েছেন।
ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। ২০০-এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া মানবপাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সবসময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন কর্মী ভিসা কার্যত স্থগিত রয়েছে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ভিসা জটিলতার কোনো কার্যকর সমাধান হয়নি।
এনআই/এমজে
