একের পর এক হত্যাকাণ্ড : অধরা সাজ্জাদ বাহিনীর রায়হান, ঘুম হারাম পুলিশের

চট্টগ্রামের রাউজানে যুবদল নেতা মো. সেলিম (৪২) হত্যাকাণ্ডে সাজ্জাদ বাহিনীর রায়হানের নাম উঠে এসেছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রায়হানের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। ঘটনার দিন বোরকা পরিহিত অবস্থায় ঘটনাস্থলে কিলিং মিশন পরিচালনা করেন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন।
জেলা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, রায়হান ছোট সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড। সাজ্জাদ কারাগারে যাওয়ার পর থেকে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ৫ আগস্টের পর থেকে চট্টগ্রাম জেলা ও উপজেলায় সংঘটিত আটটি হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত চারটি হত্যা মামলার এজাহারে তার নাম রয়েছে। বাকিগুলোতে তদন্তে নেমে পুলিশ কর্মকর্তারা তার সম্পৃক্ততা পেয়েছেন।
নগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে ঢাকা পোস্টকে জানান, ছোট সাজ্জাদ ও রায়হানরা মূলত নগরের আলোচিত সন্ত্রাসী ও এইট মার্ডারের আসামি বড় সাজ্জাদের গ্রুপের। বিদেশে পলাতক থাকা গুরু সাজ্জাদের নির্দেশে চট্টগ্রামে মিশন বাস্তবায়ন করে থাকেন তারা। সাজ্জাদ ও রায়হানের গ্রুপে রয়েছেন খোরশেদ, হাসান, মোহাম্মদ ও ইমন। তাদের মধ্যে ছোট সাজ্জাদ, খোরশেদ ও হাসান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ছোট সাজ্জাদ কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বড় সাজ্জাদের গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রায়হান। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পরও অধরা এই রায়হানকে নিয়ে এখন ঘুম হারাম পুলিশের। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন নগর ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন
গত বছরের ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় মোহাম্মদ আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়সারকে (৩২)। এরপর ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার শমসেরপাড়া এলাকায় প্রকাশ্যে গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী তাহসিন। নিহত তাহসিন ইট ও বালুর ব্যবসা করতেন।
গত ৩০ মার্চ রাতে নগরের বাকলিয়া থানাধীন এক্সেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে গুলি করে আব্দুল্লাহ ও মানিক নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। গত ২২ এপ্রিল উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাজীপাড়ায় মো. ইব্রাহিম (২৮) নামের এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গত ২৩ মে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ঢাকাইয়া আকবরকে হত্যা করা হয়।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকে সাতটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাজ্জাদ বাহিনীর লোকজন। তাদের কয়েকজন কারাগারে গেলেও বাইরে রয়েছেন অনেকেই। যারা কথায় কথায় গুলি করে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের মিশন বাস্তবায়ন করছেন।
রাউজানে বোরকা পরে অটোরিকশায় গিয়ে কিলিং মিশন বাস্তবায়ন
রাউজানে নিহত সেলিম বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির এই নেতার অনুসারী আলম গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে সেলিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা। এদিকে, ঘটনার দিনের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায়, যুবদল নেতা সেলিম হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন সাতজন। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তারা ঘটনাস্থলে যান। তাদের মধ্যে চারজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে এবং তিনজন ছিল বোরকা পরিহিত।
জানা গেছে, রোববার (৬ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ঈষাণ ভট্টের হাটে সেলিমকে হত্যা করে অটোরিকশায় করে সটকে পড়েন খুনিরা। কিছুদূর গিয়ে হযরত আশরাফ শাহ (র.) এর মাজার গেট সংলগ্ন এলাকায় অটোরিকশা পাল্টে ফেলেন তারা। পরে আরেকটি অটোরিকশায় উঠে কমলার টিলা নামক স্থান দিয়ে নির্জন পাহাড়ের দিকে চলে যান খুনিরা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে রায়হান ও ধামা ইলিয়াস নামে দুই সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এমআর/এসএসএইচ