খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকদের বিচার দাবি

খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
সোমবার (২১জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষকদের শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো জয়।
লিখিত বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, গত ২৭ জুন রথযাত্রার মেলায় অংশ নেওয়ার পর সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরতে না পেরে খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া বাজারে উন্নয়ন বোর্ডের বাসভবনের পাশে এক আত্মীয়ের ভাড়া বাসায় রাত্রী যাপনের সময় রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ৬ জন সেটলার বাঙালি দ্বারা ১৪ বছর বয়সি ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত খাগড়াছড়ি সদর থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত আসামি ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫) ও এনায়েত হোসেন (৩৫), শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (৩২), বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল ইসলাম (২৩)।
আরও পড়ুন
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী ছাত্রী সামাজিক লজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে প্রথমে পরিবারকে কিছু জানায় নি। ফলে ঘটনাটি সবার কাছে অজানা থেকে যায়। পরে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গত ১২ জুলাই বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর গত ১৬ জুলাই মেয়েটি পরিবারের লোকজনকে ধর্ষণের বিষয়টি জানায়। পরে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় ৬ জনের নামে মামলা করলে সেদিন রাতে পুলিশ অভিযুক্তদের মধ্য থেকে চার জনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু মামলা হওয়ার ৫ দিন অতিক্রম হলেও বাকি পলাতক দুই আসামিকে এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সংঘবদ্ধ এ ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানি হলে সহপাঠী শিক্ষার্থী ও পার্বত্যবাসীসহ ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে গত ১৭ জুলাই মুনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও ভাইবোনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শত শত শিক্ষার্থী রাজপথে নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন এলাকার যুব-নারী-জনতাও। বিক্ষোভ- প্রতিবাদ ভাইবোনছড়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবন, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহীতে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে ঢাকা থেকে আগত প্রতিনিধি দলের সদস্য নৃবিজ্ঞানী ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নাসরিন সিরাজ বলেন, ভিকটিমের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমরা জানতে পেরেছি ধর্ষণের ঘটনার ২৫ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত ধর্ষণের কোনো মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য পুলিশ প্রশাসন থেকে পদক্ষেপ নেয়নি। এতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নানা অজুহাতে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন ও গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে। যা ধর্ষকদের রক্ষা এবং ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের বিচার ও শাস্তি পাওয়ার পরিবর্তে বেকসুর খালাস পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।।
সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবি জানানো হয় :
১.খাগড়াছড়ি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে এবং ধর্ষকদের ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে’ দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক সাজা কার্যকর করতে হবে।
২. সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার স্কুল ছাত্রীর চিকিৎসার ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তাসহ পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. পাহাড়-সমতলে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্টের ওপর সরকারি বিশেষ সংস্থার গোপন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
৫. পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তার হুমকি সেনা-সেটলার প্রত্যাহার করতে হবে।
আরএমএন/এআইএস