মাদক মামলার আসামি জাল সনদ দিয়ে হলেন বিদ্যালয়ের সভাপতি!

মাদক মামলার চার্জশিটভুক্ত এক আসামিকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত আলীর জমা দেওয়া অনার্সের সনদটি জাল বলছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর সই করা এক চিঠিতে বোয়ালখালীর উত্তর গোমদণ্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠন করার বিষয়টি জানানো হয়। বোর্ডে জমা থাকা নথি অনুযায়ী, মোহাম্মদ আলী মাদ্রাসা বোর্ড থেকে ১৯৯৭ সালে সেকেন্ড ডিভিশনে দাখিল ও ১৯৯৯ সালে থার্ড ডিভিশনে আলিম পাস করেন। এরপর তিনি ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে একটি সনদ জমা দেন। যেটিতে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার।
কিন্তু সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের এ নামে কোনো বিভাগ কখনোই ছিল না। তবে ইসলামিক স্টাডিজ নামে একটি বিভাগ চালু হয়েছে ২০১০ সালে।
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার নামে কোনো বিভাগ অতীতেও ছিল না এবং এখনো নেই। যদি কেউ এই বিভাগের নামে কোনো সনদ ব্যবহার করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে এটি জাল বলে ধরে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, জাল সনদটি বাদ দিলে মোহাম্মদ আলীর শিক্ষাগত যোগ্যতা দাঁড়ায় আলিম পাস। অথচ সবশেষ নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। এই যোগ্যতা পূরণ করতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মোহাম্মদ আলী। আবার মাদকের মতো নৈতিক স্খলনজনিত গুরুতর মামলার চার্জশিটভুক্ত হলে এসব পদে থাকার সুযোগ নেই।
তারা আরও জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগে প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনো হাত নেই। বিদ্যালয় থেকে প্রথমে প্রস্তাব যায় ইউএনওর দপ্তরে। পরে যাচাই-বাছাই শেষে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রস্তাব যায় শিক্ষা বোর্ডে। সেখান থেকে শুধু প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাল সনদ ব্যবহার কিংবা ফৌজদারি মামলার আসামি– বিষয়গুলো আমাদের যাচাই করার সুযোগ থাকে না। তবে অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে নিয়োগ বাতিল করে দেই।
জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর বোয়ালখালীতে এক হাজার লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বোয়ালখালী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন কান্তি দে বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে এসআই রহমত উল্লাহ চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানামূলে ২০২২ সালের ২২ জুলাই মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। বর্তমানে মাদক মামলাটি বিচারাধীন।
মোহাম্মদ আলী নিজেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন। তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, সভাপতি নিয়োগ পাওয়ার পর গোমদণ্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে কয়েকবার অংশ নিয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু মাদক মামলায় কারাভোগ করার বিষয়টি নতুন করে জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি নয়, ১৭টি মামলা আছে। মাদকের মামলাটিও রাজনৈতিক। আমি ঘটনা জেনেছি চার্জশিট হওয়ার কয়েক মাস পর। সম্প্রতি ভিন্ন সমস্যাকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে মাদক মামলাটি সামনে আনা হয়েছে।
বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে এটি আমি বোয়ালখালীতে যোগ দেওয়ার আগে ঘটেছে। নিয়মানুযায়ী এখন শিক্ষা বোর্ড থেকে নথি এলে আমরা তদন্ত করে দেখব।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র স্থানে একজন মাদক কারবারিকে তাও আবার জাল সনদে সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে কী বার্তা যাচ্ছে। মাদক কারবারি স্কুলের সভাপতি হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়াবে কীভাবে?
এমআর/এসএসএইচ