ফায়ারের গাড়ি ঢুকতে ‘বাধা ছিল’ দাবি অনেকের, ‘সত্য নয়’ বলছে কর্তৃপক্ষ

সামান্য আগুনে শুরু। ক্ষণে ক্ষণে ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদেরও প্রথমে অনুমতি মেলেনি বলে দাবি করছেন অনেকে। সবমিলিয়ে দীর্ঘ সময়ের আগুনে ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ। পুড়ে ছাই হয়ে যায় হাজার কোটি টাকার মালামাল।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন লাগা ভবন থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। ঠিক বাইরেই ধ্বংসস্তূপে নিজেদের পণ্যের শেষ চিহ্ন খোঁজার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী। ভোর থেকে এখানে অপেক্ষমাণ থাকলেও এখনও ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি মেলেনি তাদের।
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আট নম্বর ফটকের সামনে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় আগুন লাগে। প্রথমদিকে সামান্য ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। ওই সময় এখানে কর্মরতরা তেমন গুরুত্ব দেননি বিষয়টিকে।
তাদের দাবি, যে আগুন ছিল তা আধা ঘণ্টার মধ্যেই নেভানো সম্ভব ছিল। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এলেও অনুমতির জন্য অনেকক্ষণ তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যা পরবর্তী সময়ে আশপাশে গড়ায়। শুরুতে গুরুত্ব দিলে এমনটা হতো না বলে মনে করেন তারা।

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে নিয়মিত আসা-যাওয়া করা কুইক এক্সপ্রেসের কর্মী সাঈদ বলেন, দুপুর সোয়া ২টার দিকে কার্গো ভিলেজের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের কেমিক্যাল গোডাউনে প্রথম আগুন দেখতে পাই। কিছুক্ষণ পর দেখি ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি গাড়ি আসে। কিন্তু ৮ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারছিল না এসব গাড়ি। কী কারণে যেন প্রায় আধা ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে ছিল। শুক্র-শনিবার ছুটির দিনে মালামাল খালাস বন্ধ থাকে। এর মধ্যেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে।
একটি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আল-আমিন নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কার্গো ভিলেজে আমার প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাত টন পণ্য ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছি, কারণ এখনও কোনোকিছুর হদিস পাইনি। এতে আমাদের বহু ক্ষতি হয়েছে। যা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দর থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। ভেতরে হয়তো বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বা কোনো কেমিক্যাল থেকে লাগতে পারে। এটা আমরা এখনও জানি না, আমাদের জানানো হয়নি। তবে আগুন লাগার পর যেভাবে দেরি হয়েছে, তাতে বোঝা যায় ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতি ছিল।
একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলমগীর নামে আরেকজন জানান, প্রথমে অল্প আগুন ছিল। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস এসে অনুমতির জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। তখনই যদি তারা কাজ শুরু করত, এত বড় ক্ষতি হতো না। পরে যখন আগুন ভয়াবহ হয়ে যায়, তখন তারা অনেক ইউনিট পাঠায়। তবে একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এত বড় আগুন লাগলেও তাড়াতাড়ি নেভানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
সুপ্রিম স্টিচ লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টস কোম্পানির কর্মী বলেন, আমাদের পাঁচটা শিপমেন্ট ছিল। সব পুড়ে গেছে। প্রতিটি চালানে এক থেকে দেড় টন ফেব্রিক্স ছিল। এগুলো দিয়ে স্যাম্পল তৈরি হতো। নতুন অর্ডারের কাজ চলছিল। এখন পুরো ফ্যাক্টরি ঝুঁকিতে। কোটি কোটি টাকার মাল পুড়ে গেছে। ইন্স্যুরেন্স থাকলেও এই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়।

ওরিয়ন গ্রুপের এক প্রতিনিধি বলেন, আমাদের অরিয়ন ফার্মার কেমিক্যাল ছিল এখানে। যাকে ওষুধের কাঁচামাল বলা হয়। এসব মালামাল ভেতরেই ছিল। ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল টিমের আনোয়ারকে জিজ্ঞেস করার পর জানালেন ওখানে কোনো মালামাল অক্ষত নেই। বাইরে কিছু রক্ষা করতে পেরেছে। বাকিগুলো পুড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় আরএইচ ফ্লাইটে মালামাল নেমেছে। ১টার দিকে গেট বন্ধ হয়ে যায়। এক ঘণ্টা পর আবার গেট খোলা হয়। তখন বিভিন্ন এজেন্সির লোকজন ভেতরে ঢোকেন। এর ১০-১৫ মিনিট পরই আগুন দেখা যায়। কুরিয়ারের পাশে আগুন লাগে। তখন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি একটা ছিল। কিন্তু তারা কোনো কার্যক্রম চালাতে পারেনি।
অবশ্য আগুন নেভাতে আসা ফায়ারের গাড়ি ঢুকতে কোনো ধরনের বাধা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসকে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ বিষয়ে ডিজি স্যারও বলেছেন ‘এটা মিথ্যা’।
এমআরআর/এসএম