টিকাদান সহজ করতে ব্যবস্থাপনা মহড়ার পরামর্শ

দেশে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে টিকা প্রয়োগে জাতীয় নীতিমালা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নীতিমালা গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায়ও। তবে টিকা আসার আগেই এর প্রয়োগে ব্যবস্থাপনা মহড়া জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মানবদেহে টিকা প্রয়োগ পদ্ধতি, সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং ভলান্টিয়ারদের কাজের ধরন সহজ করতে ওই মহড়ায় গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।
ফেব্রুয়ারিতেই সেরামের টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, শুরুতে সেরামের সঙ্গে টিকা নিয়ে জটিলতা তৈরি হলেও আপাতত তা আর দেখছি না।
তিনি বলেন, টিকাটি অনুমোদনের পূর্বে অনেক ট্রায়াল হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে কার্যকারিতা প্রমাণ করেই এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। তাই বাংলাদেশে এনে আর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন নেই। তবে টিকা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আগেই স্বল্প পরিসরে একটি টেকনিক্যাল ট্রায়াল হতে পারে।
সেরাম ইনষ্টিটিউটে ইতিমধ্যে অক্সফোর্ডের টিকার পাঁচ কোটি ডোজ প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, আশা করছি, বাংলাদেশ দ্রুতই ৫০ লক্ষ ডোজ পেতে যাচ্ছে।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিকল্পনামাফিক টিকাদান বাস্তবায়নে একটা মক ট্রায়াল দেওয়ার এখনই সময়। পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে একটা মক ট্রায়াল জরুরি।
টিকা আসার আগেই আমাদের একটি প্রস্তুতি মহড়া করার পরিকল্পনা আছে। তবে সেটা খুব বেশি বড় পরিসরের হবে না। আমাদের যত ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন সব নিয়ে রাখবো। যাতে টিকা আসার পর তা প্রয়োগে খুব বেশি দেরি না হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা
ডা. মেহেদী আকরাম বলেন, টেকনিক্যাল ট্রায়াল বলতে টিকার ট্রায়াল বুঝানো হচ্ছে না। টিকাটি যে ব্যবস্থাপনায় মানুষ দেওয়া হবে তার ট্রায়াল। যেসব সেন্টারে টিকা দেওয়া হবে সেরকম ৩-৪টি সেন্টারে ৫০-৬০ জন ভলান্টিয়ারের ওপর টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা প্রয়োগ করা যেতে পারে। সবকিছু সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা দেখা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ টেনে এই গবেষক বলেন, দেশটি প্রস্তুতিমূলক ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। যাকে তারা বলেছে ‘ড্রাই ট্রায়াল’। এটা কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না। একটা মক ট্রায়াল করতে এক দিন সময় লাগে।
অক্সফোর্ডের টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই টিকা নিলে সিভিয়ার কোভিডে কেউ আক্রান্ত হয় না। এমনকি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয় না। এটাই এ টিকার মূল ভরসা। এর কার্যকারিতা ৬০ শতাংশ নাকি ৯০ শতাংশ তা ভেবে তেমন লাভ নেই।
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা প্রাপ্তি নিয়ে আর কোনো জটিলতা না থাকার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরাও।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশা করছি, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই টিকা আসবে। সেটা হতে পারে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই।
ট্রায়াল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিকা আসার আগেই আমাদের একটি প্রস্তুতি মহড়া করার পরিকল্পনা আছে। তবে সেটা খুব বেশি বড় পরিসরের হবে না। আমাদের যত ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন সব নিয়ে রাখবো। যাতে টিকা আসার পর তা প্রয়োগে খুব বেশি দেরি না হয়।
তিনি জানান, টিকা সংরক্ষণ ও প্রয়োগে স্বাস্থ্যকর্মীদের শেষ পর্যায়ের প্রস্তৃতি প্রশিক্ষণ চলছে। হামের টিকা দেওয়া শেষ হলেই জেলা-উপজেলার সংরক্ষণাগারে কোভিড টিকা রাখা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই করে অনলাইনে টিকার জন্য নিবন্ধন হবে। টিকাদান কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১৫ ধরনের প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রচলিত টিকাদান কেন্দ্রগুলোও ব্যবহার হবে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য।
গত ৩ জানুয়ারি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদার পুনাওয়ালার বক্তব্য ঘিরে বাংলাদেশের টিকা প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরে ৫ জানুয়ারি এক টুইটে সেরাম প্রধান জানান, সব দেশে টিকা রপ্তানির অনুমোদন আছে। মূলত এখন পর্যন্ত সেরামের হাতেই বাংলাদেশের করোনা টিকার ভবিষ্যৎ। যদিও টিকা পেতে ভারতের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে করোনা টিকার প্রয়োগ শুরু হতে পারে। দেশটিতে এরইমধ্যে গণহারে টিকাদান কর্মসূচির মহড়া শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, টিকাদানের পরিকাঠামো শেষবারের মতো দেখে নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউটে (এসআইআই) প্রস্তুত হচ্ছে করোনার টিকা ‘কোভিশিল্ড’।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে আর্জেন্টিনাতেও এ টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
টিআই/এসআরএস
