মেট্রোরেল প্রকল্প, হাসপাতাল সেবা ও বিআরটিএতে অনিয়মের খোঁজ

মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্পে সম্ভাব্য অনিয়ম, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী হয়রানি এবং বিআরটিএ বরিশাল কার্যালয়ে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (১৬ নভেম্বর) দুদকের তিনটি অফিস থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, এনফোর্সমেন্ট ইউনিট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের ওপর পৃথক তিনটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেছে। মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্পে সম্ভাব্য অনিয়ম, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী হয়রানি এবং বিআরটিএ বরিশাল কার্যালয়ে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
দুদক জানায়, ঢাকা মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে জানা যায়, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯.৮৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল মেট্রোরেল লাইন ও ১২টি পাতাল স্টেশন বিশিষ্ট বিমানবন্দর রুট এবং নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত ১১.৩৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল মেট্রোরেল লাইন, সাথে ৭টি উড়াল ও ২টি পাতাল স্টেশন বিশিষ্ট পূর্বাচল রুট, সমন্বয়ে মোট ৩১.২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজ গত ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়েছে। এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটি মোট ১২টি কনট্রাক্ট প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এর মধ্যে কনট্রাক্ট প্যাকেজ CP–01 এর আওতায় নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পিতলগঞ্জ মৌজায় প্রায় ৯০ একর ভূমিতে ডিপোর ভূমি উন্নয়ন কাজ সম্পাদিত হয়েছে। এ কাজ ২০২৩ সালের ১ মার্চ শুরু হয়ে চুক্তিতে নির্ধারিত সময় ২০২৫ সালের ৩১ আগস্টের পূর্বেই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। অভিযানকালে টিম কর্তৃক CP–01 প্যাকেজ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়। স্যান্ড এমব্যাংকমেন্ট ও ফিলিং-সংক্রান্ত কাজে সম্ভাব্য অনিয়মের বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের অংশ হিসেবে MRT Line–1 ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। রেকর্ডপত্র প্রাপ্তির পর তা বিশ্লেষণের পর বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে।
রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিতে হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অনিয়মের অভিযোগে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুড়িগ্রাম একটি গোপন অভিযান চালায়। ছদ্মবেশে সেবা নেওয়ার চেষ্টায় দুদক টিম দেখতে পায় অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন। অ্যাম্বুলেন্সের লগবুকসহ বিভিন্ন নথিতে অনিয়ম ধরা পড়ে। প্যাথলজি বিভাগে রশিদ ছাড়া টাকা আদায়, বেশ কয়েকটি ওয়াশরুম বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়, হাসপাতালে ১০–১২ জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে এক প্রতিনিধি নিয়মবহির্ভূত প্রবেশের কথা স্বীকার করে অঙ্গীকারনামা দেন।
এদিকে, বিআরটিএ বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে ঘুষের বিনিময়ে রুট পারমিট বিক্রি, সেবা হয়রানি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বরিশাল অভিযান চালায়। এসময় টিম দেখতে পায়, ২০২৩ সালে আগস্ট মাসে বিআরটিএ ১৭৩টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন–ফিটনেস–ট্যাক্স টোকেন ইস্যু করেছে। যাত্রী–পণ্য পরিবহন কমিটির অনুমোদনে ৫৭১টি থ্রি–হুইলারের মধ্যে ৫১১টির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। একই বিষয়ে আগে দুদক মামলা করেছে, যার তদন্ত চলমান। অবৈধ সম্পদ সংশ্লিষ্ট নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের পর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশনকে জানানো হবে।
আরএম/এসএসএইচ