অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক পরিবেশ-জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে

রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারে দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা, মাটির উর্বরতা, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে। তাই কৃষি প্রতিবেশ সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে জৈব কৃষি সম্প্রসারণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশে ফসলের উৎপাদন কমানো ছাড়াই নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব কৃষিতে রূপান্তর’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পল্লি কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের বলেন, কৃষকরা এখনও অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ওপর নির্ভর করছেন। কেবল প্রযুক্তিগত সহায়তা নয়, কৃষকদের সামাজিক আচরণ পরিবর্তনেও কাজ করতে হবে। জৈব কৃষিতে উৎপাদন কমে না বরং অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে যায়। তবে এর জন্য ধাপে ধাপে একটি রোডম্যাপ প্রয়োজন। যা একদিনে সম্ভব নয়।
প্রধান অতিথি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, রাসায়নিক সার দিয়ে ফলন বাড়ানোর যে ধারা শুরু হয়েছিল, তা ইতোমধ্যে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। কৃষিতে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধানে জৈব কৃষির বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে পিকেএসএফ–এর আওতাধীন কৃষকরা ল্যাবে সহজে মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ কার্ড পাচ্ছেন। এতে কৃষকরা সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগের নির্দেশনা পান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. শেখ তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কৃষি জমি ও পরিবেশকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। গত অর্থবছরে সরকারের কৃষি ভর্তুকি ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, যার ৭৫ শতাংশই ব্যয় হয়েছে রাসায়নিক সারে।
তিনি বলেন, জাতীয় কৃষি নীতি পুনর্বিবেচনা, জৈব কৃষি সম্প্রসারণের জন্য সমন্বিত নীতি কাঠামো প্রণয়ন এবং জৈব সার উৎপাদনে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যজনিত অপ্রদর্শিত ব্যয় দেশে মোট জিডিপির প্রায় ১৩ শতাংশ।
উন্মুক্ত আলোচনায় ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. শহীদ-উজ-জামান বলেন, ভূমি সংস্কার ছাড়া টেকসই জৈব কৃষি সম্প্রসারণ সম্ভব নয়।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, জৈব কৃষি বিস্তারে কৃষকদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নীতি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।
চুয়াডাঙ্গার কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, জৈব উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণের পর তার খামারে ব্যয় ২৫ শতাংশ কমেছে এবং উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। বক্তারা বাণিজ্যিক জৈব সার নিবন্ধন সহজ করা, জৈব সারে প্রণোদনা, কৃষি ডিজিটালাইজেশন এবং বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের ওপর জোর দেন।
সংলাপে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, পিকেএসএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকন্দ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা অংশ নেন।
আরএম/এসএম