কমছে পুলিশে ভরসা, আত্মরক্ষায় হাতে উঠছে হকিস্টিক-ইলেকট্রিক শকার

দেশের একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমে কর্মরত আজিজুল (ছদ্মনাম)। কাজের সূত্রে অনেক ক্ষেত্রে বাসায় ফিরতে তার রাত হয়। কিন্তু ফেরার পথে গত জুন মাসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের শিকার হন। সে সময় তিনি কোনোক্রমে প্রাণে রক্ষা পেলেও তাৎক্ষণিক পুলিশি সহায়তা পাননি। এরপর থেকে শঙ্কায় কাটে তার দিন। তাই তিনি পরিকল্পনা করেন, অন্তত বিপদ থেকে বাঁচতে তাৎক্ষণিকভাবে একটি ব্যবস্থা হিসেবে ‘সেলফ ডিফেন্স’ ডিভাইস ব্যবহার করবেন।
ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকা ছিনতাইয়ের জন্য পরিচিত। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই খারাপ। ঘটনার পর ভাইরাল না হলে বিচার পাওয়া দুষ্কর। পেশাগত কারণে আমাকে গভীর রাতেও ফিরতে হয়, তাই ঝুঁকি অনেক বেশি। ভাবছি নিজের নিরাপত্তার জন্য একটি ‘সেলফ ডিফেন্স স্টিক’ রাখব। অন্তত জখম হওয়ার আগে যেন আত্মরক্ষার্থে খানিকটা লড়াই করতে পারি।
একই শঙ্কায় দিন কাটছে বেসরকারি চাকুরিজীবী মো. মাহাবুবের (ছদ্মনাম)। তবে তিনি শুধু পরিকল্পনা করেই থেমে থাকেননি, রীতিমতো আত্মরক্ষার ডিভাইস সব সময় নিজের সঙ্গে রাখছেন।
মাহাবুব বলেন, সম্প্রতি অনলাইন থেকে কিছু সেলফ ডিফেন্স ডিভাইস কিনেছি। কিছুদিন আগে আমার এক সহকর্মী রাতে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন। তিনি ফোন-মানিব্যাগ হারানোর পাশাপাশি শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কিন্তু তাৎক্ষণিক পুলিশ বা আশপাশের কারও সাহায্য পাননি। এমন পরিস্থিতি জানার পর এবং ছিনতাইকারীদের কাছে যেহেতু অস্ত্র থাকে, তাই অস্ত্রের মুখে পড়লে যেন কোনোভাবে নিজেকে একটু সামলে সেখান থেকে সরিয়ে আনতে পারি, সেজন্য এগুলো কিনেছি। আপাতত সঙ্গেই রাখছি সারাক্ষণ।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাকে রাতে বাড়ি ফিরতে হয়, আমার পরিবার আছে, ছোট দুটি বাচ্চা আছে। যদি কোনো বিপদের মুখে পড়ি, তখন আমার ও আমার পরিবারের কী হবে?

প্রতি মাসে গড়ে ৪১টি ছিনতাই মামলা, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নগরবাসীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে রাজধানীতে অপরাধের পরিমাণ বেড়েছে। তবে ছিনতাই নিয়ে উদ্বেগের প্রধান কারণ হলো, বারবার ছিনতাই মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার একই অপরাধে জড়াচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে ঢাকার আদালত থেকে ছিনতাই মামলার মোট এক হাজার ১০৮ জন আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, যারা ডিএমপির ৫০টি থানার এক হাজার ৫৮টি মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এছাড়া, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে ঢাকা মহানগরের ৫০ থানায় ৩৩টি ডাকাতি, ২৪৮টি ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে পাঁচটি ডাকাতি ও ৪১টি ছিনতাই মামলা রেকর্ড হয়েছে।
পুলিশের ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত হওয়া মামলার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৪৭ হাজারের বেশি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ছিনতাইয়ের মামলা বেড়েছে। ১৯ সালে ছিল ৬ হাজার ৮৮০, ২০২০ সালে ৭ হাজার ২০০, ২০২১ সালে ৮ হাজার ৪৯৮, ২০২২ সালে ৯ হাজার ৫৯১, ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৪৭৫ এবং ২০২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৮৩টি ঘটনা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জ এলাকায় ১৫ হাজার ৪১৯টি। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জে ৭ হাজার ৭৪৬টি।
বিশেষ করে সন্ধ্যা, রাত ও ভোরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েদাবাদ, ফার্মগেট, হাতিরঝিল, গুলশান, মুগদা এবং পুরান ঢাকাসহ বহু এলাকায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তি হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন না। ফলে প্রকৃত ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশের খাতায় থাকা রেকর্ডের চেয়েও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনলাইনে বাড়ছে সেলফ ডিফেন্স ডিভাইসের বিক্রি, বৈধতা-নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আজিজুল, মাহাবুবের মতো নানা পেশাজীবী মানুষের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কার্যকারিতা নিয়ে বেশ হতাশা দেখা দিয়েছে। ফলে, নাগরিকেরা বাধ্য হয়ে নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। কেউ সঙ্গে রাখছেন হকিস্টিক বা বেসবল ব্যাট, আবার কেউ ঝুঁকছেন ইলেকট্রনিক সেলফ ডিফেন্স ডিভাইসের দিকে। স্টান গান, ইলেকট্রিক শকার, টেজার এবং পেপার স্প্রের মতো আত্মরক্ষার সরঞ্জামের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে এসব সেফটি টুলস বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। তবে এর বৈধতা, সঠিক ব্যবহার এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অনলাইন শপিং সাইট ও ক্লাসিফাইড প্ল্যাটফর্মগুলো ঘুরে দেখা গেছে, স্টান-গান, ইলেকট্রিক শকার লাইট, টর্চ-স্টিক ও পেপার-স্প্রের মতো আইটেমের বিক্রি বহু গুণে বেড়েছে। ডিভাইসগুলো কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং দেশের যেকোনো প্রান্তে ডেলিভারি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
অনলাইন ক্রেতাদের দাবি, বিপদে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশি সহায়তা পাওয়া সবসময় সম্ভব হয় না। বিশেষ করে রাতে কাজ শেষে ফেরার পথে অনেকেই আতঙ্কে ভোগেন। এই পরিস্থিতিতে বিপদের মুখে আত্মরক্ষার শেষ সম্বল হিসেবে তারা এসব ডিভাইস সঙ্গে রাখতে চান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অনলাইন বিক্রেতা বলেন, আমরা সেলফ-ডিফেন্স ডিভাইস অনেক দিন ধরে বিক্রি করছি। তবে এখন বিক্রি বেড়েছে। গত বছর জুলাইয়ের পর থেকে মূলত চাহিদা বেশি। বিশেষ করে গত কয়েক মাসে টেজার, পেপার স্প্রে ও ইলেকট্রিক স্টিক বেশি বিক্রি হয়েছে।
পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এগুলো ভালো মানের পণ্য। কাস্টমার রিভিউ সাইটেই আছে, বেশিরভাগ ক্রেতা সন্তুষ্ট। যারা কিনছেন, তাদের মধ্যে অনেক নারীও আছেন। রাতে কাজ শেষে বা হোস্টেলে ফেরার সময় নিরাপত্তার জন্য তারা এগুলো নিচ্ছেন।
আইনে নেই সুস্পষ্ট বিধান, প্রতিরোধে প্রয়োজনের বেশি বল প্রয়োগে হবে অপরাধ
বাংলাদেশের প্রচলিত আর্মস অ্যাক্ট, ১৮৭৮ অনুযায়ী যেকোনো ধরনের অস্ত্র, বিস্ফোরক বা এর ব্যবহার ও বিক্রি নির্দিষ্ট অনুমতি ছাড়া বৈধ নয়। তবে পেপার স্প্রে বা আত্মরক্ষার হালকা ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রে আইন কিছুটা অস্পষ্ট। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী রিয়াজুর রহমান রায়হান বলেন, বাংলাদেশে আত্মরক্ষা নিয়ে আলাদা কোনো আইন না থাকলেও দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা সেলফ ডিফেন্সের সীমা ও প্রয়োগ সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনে সেলফ ডিফেন্স নিয়ে আলাদা করে কোনো অ্যাক্ট রেজিস্টার নেই। হ্যাঁ, তবে আমাদের যে প্রচলিত আইন আছে পেনাল কোড, সেই পেনাল কোডের মধ্যে ৯৬ ধারা, ১০৬ ধারা পর্যন্ত বেসিক্যালি একটা মানুষ কীভাবে সেলফ ডিফেন্স নিতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে সেলফ ডিফেন্স ইউজ করতে পারে, সেই বিষয়গুলো বর্ণনা করা আছে... এটা (পেপার স্প্রে, হকি স্টিক, শকার) সঙ্গে রাখা যাবে কি যাবে না, এই সংক্রান্ত কোনো আইন নেই।
ব্যবহারের সীমা নিয়ে রিয়াজুর রহমান রায়হান বলেন, আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার মূল বিষয়টি হলো “প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিরোধ” অর্থাৎ, কেউ আক্রমণ করলে, আপনি শুধু সেই পরিমাণ বল প্রয়োগ করতে পারবেন যা আত্মরক্ষার জন্য অপরিহার্য, তার বেশি নয়। কেউ আপনাকে একটা থাপ্পড় মারলো... তার এগেইনস্টে আপনি পেপার স্প্রে ইউজ করতে পারবেন না। সেলফ ডিফেন্সটা হচ্ছে আমাদের আইন অনুযায়ী যে আপনাকে যে পরিমাণ বা যেভাবে আঘাত করার চেষ্টা করে, আপনি ঠিক সেভাবে সেটাকে ডিফেন্স করতে পারবেন। কেউ আপনাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে গেল, আপনি তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারবেন না।
ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, সেলফ-ডিফেন্স ডিভাইস সঙ্গে রাখা আইনি দৃষ্টিতে পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়। তবে এটি অন্যের ক্ষতির কারণও হতে পারে। এই অস্পষ্টতা একটি বড় ঘাটতি। এই পেপার স্প্রে বা হকিস্টিক এগুলো নিয়ে... আপনি যদি সঙ্গে করে ঘুরেন, এটা অন্য কারো জন্য হার্মফুলও তো হতে পারে, তাই না? আপনি শুধুমাত্র এটা সেলফ ডিফেন্সের জন্য ইউজ করবেন, তার গ্যারান্টি কে দেবে?
অ্যাডভোকেট রিয়াজুর রহমান আরও বলেন, এসব ডিভাইস সঙ্গে রাখা বা ব্যবহার করার বিষয়ে ‘নিষেধাজ্ঞা’ না থাকলেও এর অপব্যবহার করলে তা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আপনি শুধু বলে বেড়ালেন যে আমার কাছে একটা ইলেকট্রিক শকার আছে, এটা সেলফ ডিফেন্সের জন্য ইউজ করব। কিন্তু আপনি তা না করে যে কাউকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেটা কিন্তু ফৌজদারি অপরাধ হবে। ধরুন আপনি এসব উপকরণ নিয়ে গুন্ডামি করছেন... তখন কিন্তু সেটা ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিস হবে।
ছিনতাই বাড়েনি, পরিস্থিতি স্থিতিশীল : ডিএমপি
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বর্তমানে অপরাধের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক কম। পুলিশের কাছে যে ঘটনাগুলো রিপোর্ট হয়, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে অফিশিয়াল ক্রাইম রেট নির্ধারিত হয়। তাই কোনো পরিসংখ্যানগত প্রমাণ ছাড়া ‘ছিনতাই বেড়েছে’, এমন ধারণাকে তিনি গ্রহণযোগ্য মানতে নারাজ।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরপর যে পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল— যেমন প্রকাশ্যে ছুরি বা চাপাতি নিয়ে ছিনতাই, এমন দৃশ্য আগের মতো দেখা যাচ্ছে না। আমাদের হাতে থাকা তথ্য বলছে, এসব অপরাধ এখন কমে এসেছে এবং পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় স্থিতিশীল। যদি মানুষ তার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার জন্য সেলফ ডিফেন্স ব্যবহার করে, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে কোনো কিছু অবৈধ বা যেটা আইনসিদ্ধ নয়, এরকম কোনো কিছু তো কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আপনি যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, আপনি প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন (এপ্লাই) করতে পারেন। সরকার যদি আপনাকে মনে করে যে আপনি অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন, সেক্ষেত্রে সরকার আপনাকে অনুমতি দেবে।
টহল প্রসঙ্গে ডিসি তালেবুর রহমান দাবি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের টহল কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। নিয়মিত টহল ও বিশেষ নজরদারি এখন আগের চেয়ে আরও সক্রিয়, যার ফলে রাজধানীতে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
আইনের শাসনই একমাত্র সমাধান, খাতা-কলমের টহল নয় মাঠে নামতে হবে
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ঘাটতি, বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতা প্রমাণ করে যে নাগরিকরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিরাপত্তা পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি কোনো অপরাধের শিকার হলে... সেক্ষেত্রে যে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে উদ্ধার করা বা সেই ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছে, তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই হলো সবচেয়ে বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি কিংবা ব্যক্তি নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার পূর্ব অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, যখন ভুক্তভোগী দেখবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তখন সে নিজের নিরাপত্তার প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন বা শাস্তির কথা না ভেবে এসব প্রতিরোধ উপকরণ বহন করবে। এটি চলমান ব্যবস্থার প্রতি স্পষ্ট ‘আস্থাহীনতা’। একই সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপকরণগুলো ক্রয় করে নিজের কাছে রাখাও তো রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করা এবং এটি ওই ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ।
শঙ্কা প্রকাশ করে এ অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, এই উপকরণগুলো তো ব্যক্তি ইচ্ছা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাউকে আক্রমণের জন্য ব্যবহার হতে পারে, তখন কে এটা নিয়ন্ত্রণ করবে? যারা আত্মরক্ষার জন্য কিনছে, তারা যদি ব্যক্তিগত বিরোধ বা স্বার্থে এগুলো অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে, তখন জননিরাপত্তা আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ ও ভঙ্গুর হয়ে পড়বে এবং জনআতঙ্ক তৈরি হবে।
সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে আইনের শাসন নিশ্চিত করা উল্লেখ করে ড. তৌহিদুল হক বলেন, এসব ঘটনায় প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না— বিভিন্ন সময় ওঠা এই অভিযোগটি খতিয়ে দেখা জরুরি। পাশাপাশি টহল কার্যক্রমগুলোও বাড়াতে হবে।
প্রশাসনিক ঘাটতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খাতা-কলমে থানাগুলোতে টহল আছে, কিন্তু বাস্তবে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সেটি পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ আছে। সুতরাং, টহল কার্যক্রম যথাযথভাবে বাড়ানো প্রয়োজন। শুধু খাতা-কলমের টহল দিয়ে আসলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ঢাকার অনেক স্থানে সিটি কর্পোরেশনের বাতি না জ্বলা, অন্ধকার স্থান এবং সেসব জায়গায় পুলিশের উপস্থিতির ঘাটতিও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বর্তমানে মাঠে থাকা সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীর সমন্বিত পদক্ষেপে দ্রুত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। এটি যত দ্রুত করা যাবে, তত মানুষের নিরাপত্তা সংক্রান্ত শঙ্কা কেটে যাবে। অন্যথায়, নাগরিকরা নিজেদের রক্ষার উপায় নিজেরাই খুঁজতে থাকবে।
এমজে/এমএআর/
