শক্তিশালী গার্মেন্টস শিল্প তৈরিতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের তাগিদ

সঠিক কৌশল, শ্রমিক কেন্দ্রিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করলে বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী প্রতিযোগিতামূলক এবং মানবিক গার্মেন্টস শিল্প তৈরি করতে সক্ষম হবে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এলায়েন্স কর্তৃক আয়োজিত এক সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন।
সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক কাজী রুহুল আমিন, সদস্য সচিব সুলতানা বেগম, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের সভাপতি আবুল হোসাইন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে সৃষ্ট মোট মুনাফা ও শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরির মধ্যে একটি স্পষ্ট বৈষম্য বিদ্যমান। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও শ্রমিকদের মজুরি এখনো জীবনযাত্রা উপযোগী পর্যায়ে পৌঁছেনি। উৎপাদন ব্যয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চাপ প্রায়ই শ্রমিকদের ওপর স্থানান্তরিত হয়, যার ফলে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে প্রায় ৩.৫ থেকে ৪ মিলিয়ন শ্রমিক এই খাতে কর্মরত, যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি নারী। নারী শ্রমিকদের শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় অর্জন হলেও নিরাপদ কর্মসংস্থান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত।
বক্তারা আরও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থার সংকট, রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা-সব মিলিয়ে শিল্পটি বর্তমানে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ২৫৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং এক লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত এবং বিদ্যমান শ্রম পরিস্থিতির দুর্বলতা এই শিল্পকে আরও জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। তাই এই তিনটি বিষয়কে আলাদা না দেখে সমন্বিতভাবে বিশ্লেষণ করা এখন সময়ের দাবি। বর্তমানে প্রয়োজন একটি সমন্বিত, বাস্তবসম্মত এবং শ্রমিক-কেন্দ্রিক কৌশল, যেখানে প্রযুক্তি, পরিবেশ এবং শ্রম-এই তিন ক্ষেত্রকে একইসঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সঠিক কৌশল, শ্রমিক কেন্দ্রিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করলে বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী প্রতিযোগিতামূলক এবং মানবিক গার্মেন্টস শিল্প তৈরি করতে সক্ষম হবে।
ওএফএ/এমএন