ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জরিপ : ভোট পাবে না সহিংস রাজনৈতিক দল

দেশে জননিরাপত্তার অবনতি ও বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল এবং গবেষণা অঙ্গনের প্রতিনিধিরা। বক্তারা বলেন, নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে একক দলীয় উদ্যোগের পরিবর্তে জাতীয় ঐক্য, রাজনৈতিক জবাবদিহিতা এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘নিরাপত্তা ও অধিকার: কী চাই, কী পাচ্ছি?’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে উপস্থাপিত ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের একটি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৯২.৩ শতাংশ উত্তরদাতা সহিংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। এছাড়া ৫৪.৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, দেশ ভুল পথে এগোচ্ছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করেছেন।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, গত ২৪ বছর ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা বিরোধীদের দমনে ব্যবহৃত হলেও এতে সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হয়নি। সহিংসতার রাজনীতি জননিরাপত্তাকে দুর্বল করেছে এবং আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির বাইরে এসে মৌলিক নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রতিশোধের রাজনীতি বন্ধ না হলে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাব ও দুর্নীতি কমাতে একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী সুশীল সমাজ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সুশীল সমাজের উন্নয়নে সরকারের কাঠামোগত সহায়তা আরও জোরদার করা উচিত।
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশি হয়রানি এখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে এবং একজন নাগরিক আজ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন না। নিরপরাধ মানুষের হেনস্তা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা আক্তার বলেন, নিরাপত্তাহীনতার ভয় এখন নারীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরের ভেতর ও বাইরে- উভয় ক্ষেত্রেই নারীরা উদ্বিগ্ন থাকেন এবং রাষ্ট্রের নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ধরনের ফাঁক রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন অভিযোগ করে বলেন, মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা কেবল নির্বাচনকালেই সীমাবদ্ধ থাকে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বা চুক্তিতে জনগণের মতামতের প্রতিফলন না ঘটায় আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে।
সংলাপে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ক্যাথরিন সিসিল জানান, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের একটি নতুন জরিপ ৫ থেকে ৩০ নভেম্বর পরিচালিত হয়, যা ওসমান হাদীকে গুলি করার ঘটনার আগেই সম্পন্ন করা হয়েছিল। জরিপে দেখা গেছে, ৯২.৩ শতাংশ উত্তরদাতা সহিংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। পাশাপাশি প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা মনে করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সহিংসতা কমাতে রাজনৈতিক দলগুলো পর্যাপ্ত কাজ করছে না।
তিনি আরও জানান, নভেম্বর মাসে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে ৫৪.৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বাংলাদেশ ভুল পথে এগোচ্ছে, যা জুন ও জুলাইয়ের জরিপের তুলনায় বিপরীত প্রবণতা নির্দেশ করে। নভেম্বরের উত্তরদাতারা ভুল পথে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথাই উল্লেখ করেছেন।
ক্যাথরিন সিসিল বলেন, সাম্প্রতিক তথ্য ইঙ্গিত দেয়- এসব সমস্যার সমাধানে নাগরিকদের প্রত্যাশা অত্যন্ত তীব্র। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে উত্তরদাতারা নতুন সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের কথা বলেছেন। তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখায়, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার সমস্যা সমাধানে নাগরিকরা আগ্রহী ও উদগ্রীব। এ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা শোনা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এসআর/এআরবি