সাড়ে ২২ কোটি টাকার চার্জশিটে আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল পরিবার

সাড়ে ২২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও প্রায় সাড়ে ৮৭ কোটি টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানদের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির উপপরিচালক মো আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ, অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান ও মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানের নামে পৃথক চার মামলা করে দুদক। একই দিন কামালের এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র আসাদুজ্জামান খান কামালের মামলার চার্জশিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ওই মামলার বাদী ছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, চার্জশিটে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রধান আসামি এবং তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান ও মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানকে সহযোগী বা সহায়তাকারী আসামি করা হয়েছে।
মামলায় কামালের বিরুদ্ধে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে চার্জশিটে অবৈধ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। চার্জশিটে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ২২ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ১৬২ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া তার ৯ ব্যাংক হিসাবে ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৩ টাকার সন্দেহভাজন লেনেদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তে আগত আসামীদের বিরুদ্ধে বাড়ি নির্মাণে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫১ টাকার অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করতে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় চার্জশীট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর আসাদুজ্জামান খান পরিবারের বিরুদ্ধে চার মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৮টি ব্যাংক হিসাবে ৫৫ লাখ ৯২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৬ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
দ্বিতীয় মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খানের সঙ্গে স্বামীকেও আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- স্বামীর দুর্নীতির টাকায় সম্পদশালী হয়েছেন তাহমিনা। তাহমিনার ১০টি ব্যাংক হিসাবে ৪৩ কোটি ৭৭ হাজার ৭৪৫ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার বাদী দুদক উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন।
তৃতীয় মামলার আসামি কামাল ও তার ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান। তাদের বিরুদ্ধে ১৯ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫০২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। শাফি তার নামে ব্যাংক হিসাব খুলে সেখানে ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭২ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। এ মামলার বাদী সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
চতুর্থ মামলার আসামির কামাল ও তার মেয়ে শাফিয়া তাসনিম। তাদের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। শাফিয়ার ব্যাংক হিসাবে ২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে। এ মামলার বাদী হয়েছেন সহকারী পরিচালক মো. জিন্নাতুল ইসলাম।
আর পঞ্চম মামলায় আসামি কামালের এপিএস মনির হোসেন। তার বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৫৬ হাজার ১৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ব্যাংক হিসাবে ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৪ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পেয়েছে দুদক। মামলার বাদী ছিলেন সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হুসাইন। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
আরএম/এমএসএ