হাদি হত্যাসহ চাঞ্চল্যকর ৪ ঘটনায় আসামি ধরতে ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

অত্যন্ত সুকৌশলে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া হয়েছিল ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাদি এখন বিদেশে চিকিৎসাধীন। অথচ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় এ যোদ্ধা হুমকির মধ্যে ছিলেন। হুমকির বিষয়টি জানত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও; কিন্তু হাদির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। শুধু কি তাই? হামলার পর আসামিরা সুকৌশলে পালিয়ে গেলেও মূল শুটারসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি থানা হেফাজত থেকে পালানো হত্যা মামলার আসামি ওসি শাহ আলমকেও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
চাঞ্চল্যকর এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু ব্যর্থতার পরিচয় দেয়নি; গ্রেপ্তার হওয়া ওসি থানা হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র ও কর্মকর্তারা বলছেন, চাঞ্চল্যকর এই তিন ঘটনার আসামিরা পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করেছেন অবৈধ সীমান্ত পথ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানে অবৈধ সীমান্ত পারাপারে কোন রুট ব্যবহৃত হয় এবং কারা সেখানে সহযোগিতা করে। তারপরও তাদের অবৈধ সীমান্ত পারাপার ও দেশ ত্যাগ ঠেকানো যায়নি।
গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে ঢাকার পল্টন এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে করে আসা দুই আততায়ীর একজন চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন হাদি। তার অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন।
সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে শরীফ ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে থাকা একজন হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যাচ্ছে। ফুটেজ দেখে গুলি ছোড়া ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ বলে শনাক্ত করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ওই সময় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন আলমগীর হোসেন ওরফে আলমগীর শেখ। গুলি করার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তারা ময়মনসিংহের ধোবাউড়া-হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান বলে জানা গেছে।
হাদির ওপর হামলাকারী সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম হাদির সঙ্গেই কিছুদিন ধরে নির্বাচনী প্রচার কাজে যুক্ত ছিলেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও তাকে সন্দেহভাজন হামলাকারী ধরে নিয়ে নাগরিকদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই ফয়সাল করিম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার নেতা ছিলেন।
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গত রোববার রাতে পল্টন থানায় মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। তাতে ফয়সালসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। পরে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় গোয়েন্দা বিভাগে।
হুমকিতে ছিলেন শরীফ ওসমান হাদি
গত মাসে (নভেম্বর) দেশি-বিদেশি ৩০টি নম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন শরীফ ওসমান হাদি। ১৪ নভেম্বর ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, তাকে হত্যা, তার বাড়িতে আগুন দেওয়া এবং তার মা, বোন ও স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
শরীফ ওসমান হাদি লিখেছিলেন, গত তিন ঘণ্টায় আমার নম্বরে আওয়ামী লীগের খুনিরা অন্তত ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে কল ও মেসেজ করেছে। যার সারসংক্ষেপ হলো— আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে আগুন দেবে, আমার পরিবারকে লাঞ্ছিত করবে এবং আমাকে হত্যা করবে।
এত হুমকির পরও নিরাপত্তা পাননি ওসমান হাদি।

পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতাদের খুঁজছে গোয়েন্দারা
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতাদের খুঁজছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে হাদি ওপরে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র্যাব। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও সুপরিকল্পিতভাবে হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা সন্দেহভাজন শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক আলমগীর হোসেন সুকৌশলে পালিয়ে ভারতে চলে গেছে।
গোয়েন্দাদের দাবি, গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের পালিয়ে যেতে ঘটনার আগে-পরে নানাভাবে সহায়তা করেছে।
সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান গত বুধবার চিকিৎসাধীন হাদিকে দেখতে হাসপাতালে যান। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে তিনি তার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। বালাকৃষ্ণান জানান, হাদির অবস্থা বর্তমানে ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’।
প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন।
হাদিকে হত্যাচেষ্টার নেপথ্যের কুশীলবদের খোঁজা হচ্ছে
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছে, তা বের করার চেষ্টা চলছে। পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও অস্ত্র সরবরাহকারীদের খোঁজা হচ্ছে।
নাসিরুল ইসলাম আরও বলেন, হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তে যখন যার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সর্বশেষ ফয়সালকে প্রাইভেটকার ঠিক করে দেওয়া মো. নুরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ১১, মোটরসাইকেল ও অস্ত্র উদ্ধার
শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত আটজন হলেন— প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির, মা হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, সহযোগী মো. কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবির, মো. ফয়সাল ও গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নান।
এছাড়া, সীমান্তে অবৈধভাবে লোক পারাপারে (মানবপাচার) জড়িত সঞ্জয় চিসিম ও সিবিয়ন দিও এবং ফয়সালকে পালাতে সহায়তা করা মো. নুরুজ্জামান নোমানীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও অস্ত্রসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বনলতা আবাসিক এলাকা থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। একই অভিযানে ভুয়া নম্বরপ্লেট ও হেলমেট উদ্ধার করা হয়।
র্যাব গত মঙ্গলবার নরসিংদী সদরের তরুয়া বিল থেকে উদ্ধার করে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ৪১ রাউন্ড গুলি ও একটি খেলনা পিস্তল। একই দিনে আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে ফয়সালের বাসা ও পাশের ভবনের ফাঁকা স্থান থেকে দুটি ম্যাগাজিন, ১১ রাউন্ড গুলি ও একটি চাকু উদ্ধার করে র্যাব। এছাড়া, র্যাব বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫টি চেকবই, চেকের ৩৮টি পাতা, বিভিন্ন কোম্পানির পাঁচটি চেক, ছয়টি পাসপোর্ট, দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করেছে।
এ প্রসঙ্গে যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া জানান, হাদির ওপর হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ জনসম্মুখে আসার পর শুটার কৌশলী ও সাবধান হয়ে যায়। তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয় এবং একাধিক যানবাহন বদলে ঢাকা ত্যাগ করে।
বছরের শুরুতেই দুই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় বিপাকে পড়ে পুলিশ
বছরের শুরুতে ১০ দিনের ব্যবধানে দুটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার ভিডিও ফাঁসে বিপাকে পড়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আলোচিত ঘটনা দুটি হচ্ছে— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ পোড়ানো এবং প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পারভেজ হত্যা।

ডিএমপি বলছে, এই দুই ঘটনায় গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও পরিচয় প্রচার এবং ভিডিও ফাঁস হওয়ায় আসামিরা লাপাত্তা হয়ে গেছে। সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ পোড়ানো সেই যুবককে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পারভেজ হত্যার ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিসহ মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও মূল দুজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ১২ এপ্রিল ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ উপলক্ষে বানানো আলোচিত মোটিফ ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’সহ ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফের একাংশ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতিতে’ আগুন দেওয়ার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে মাস্ক পরা যে যুবককে দেখা গেছে, তিনি আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ কর্মী বলে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধারণা।
শাহবাগ থানা পুলিশ জানায়, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি ওয়ারী বিভাগ। তবে প্রাণান্ত চেষ্টা সত্ত্বেও লাপাত্তা ওই যুবককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এখনো কোনো সুখবর মেলেনি।
কথা দিয়েও রাখেননি ডিএমপি কমিশনার
গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা শুরুর আগেই সেই যুবককে গ্রেপ্তারের সুখবর দিতে চেয়েছিল ডিএমপি।
১৩ এপ্রিল নববর্ষের আগের দিন নিরাপত্তা ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছিলেন, আমরা কোনো মামলা তদন্তের আগে কথা বলি না। তবে এ ঘটনায় আমরা অত্যন্ত কাছাকাছি আছি। মামলাটি তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্তের খুব নিকটে পৌঁছে গেছি। আশা করছি শোভাযাত্রা শুরুর আগেই সন্তোষজনকভাবে মামলাটি শনাক্ত করতে পারব। এর মধ্যে আমরা যথাসম্ভব জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।
তবে গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা, অভিযান ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সন্দিগ্ধ ওই যুবক।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, আমরা তো ওই যুবককে নজরদারিতে রেখেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে আগুন দেওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ওই যুবক আর নেই। নেই মানে তার মোবাইল ফোন বন্ধ, আর চালু করেননি।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ তার অবস্থান (লোকেশন) পেয়েছিলাম গোপালগঞ্জে। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দেশের বাইরে পালিয়েছেন। আমরা ওই যুবকের আগুন দেওয়ার ঘটনার ভিডিও ফাঁস করিনি; বরং বিষয়টি যাতে প্রকাশ না পায়, সেই চেষ্টা করা হয়েছিল।
এখনো অধরা পারভেজ হত্যার দুই মাস্টারমাইন্ড
গত ১৯ এপ্রিল মিডটার্ম পরীক্ষা শেষে বিকেল ৩টায় পারভেজসহ তার বন্ধু তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে র্যানকন বিল্ডিংয়ের সামনে একটি পুরি-শিঙাড়ার দোকানে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলেন ও হাসাহাসি করছিলেন। তাদের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুজন ছাত্রী। পারভেজদের হাসাহাসির কারণ জানতে আসে মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি পিয়াস (২০) ও মাহাথির হাসান (২০) নামের তিনজন। তাদের মধ্যে শুরু হওয়া তর্কবিতর্কের বিষয়টি শিক্ষক ও প্রক্টর অফিস পর্যন্ত গড়ায়।
শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পরও সন্ধ্যায় হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে ছুরিকাঘাতে মারা যান প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৪)।
এ ঘটনায় ১৯ এপ্রিল রাতে নিহতের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে বনানী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। আসামিরা হলেন— মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি পিয়াস (২০), মো. মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজি (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছিল, খুনের ঘটনায় মূল আসামিসহ ইন্ধনদাতা হিসেবে কথিত প্রেমিকাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে খুনের ঘটনার ভিডিও ফাঁসের পর ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সে পড়া ওই কথিত প্রেমিকাসহ লাপাত্তা মূল আসামিরা।
বনানী থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) এ কে এম মঈন উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। আল কামাল শেখ ও আলভী হোসেন জোনায়েদ নামে তদন্তে প্রাপ্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও পারভেজ হত্যায় মূল মাস্টারমাইন্ড আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও তার বান্ধবী ফাতেমা তাহসিন ঐশী এখনো অধরা।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারের পর ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিহা হক টিনা রিমান্ডে পুলিশকে পিয়াস ও ঐশীর ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে এবং মামলার তদন্ত কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
ধরা পড়েনি থানা থেকে পালানো ওসি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দায়েরকৃত একটি মামলায় উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি শাহ আলমকে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে আনার পর রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা হেফাজতে রাখা হয়। গত ৯ জানুয়ারি দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছিল। তবে ওই দিন সকালে তিনি উত্তরা পূর্ব থানার ওসির কক্ষ থেকে পালিয়ে যান।
অভিযোগ ওঠে, হত্যা মামলার আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে হাজতখানায় না রেখে ওসির কক্ষে রাখা হয়েছিল। পুলিশ সদস্যদের অবহেলায় তিনি পালাতে সক্ষম হন। এরপর পলাতক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সব ইউনিট কাজ শুরু করে। তবে সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। যদিও তাকে পুনরায় গ্রেপ্তারে সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল পুলিশ।
এ ঘটনায় অবহেলার কারণে দায়িত্বরত একজন সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার তৎকালীন ওসি মহিবুল্লাহকে প্রত্যাহার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, সাবেক ওসিকে পুলিশ ছেড়ে দেয়নি, দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাকে যদি পুলিশ ছাড়তই, তবে কুষ্টিয়াতেই ছেড়ে দিত; ঢাকায় আনার পর নয়। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলাজনিত কারণে সংশ্লিষ্ট দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কমিশনার আরও বলেন, আমরা তাকে ধরার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে আমার ধারণা তিনি হয়তো এ দেশে আর নেই, ভারত বা অন্য কোথাও পালিয়ে গেছেন।
জেইউ/এমজে
