রাস্তার পাশে কাঁপছিল দুই শিশু, উদ্ধার করে আশ্রয় দিল স্থানীয় পরিবার

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় শীতের কনকনে রাতে রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা দুই শিশুকে উদ্ধার করে আশ্রয় দিয়েছে স্থানীয়রা।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) উপজেলার ৬ নম্বর বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা এলাকায় রাতে এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধার হওয়া শিশুদের একজন চার বছর বয়সী আয়েশা আক্তার, অন্যজন তার ছোট ভাই দুই বছর বয়সী মোরশেদ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গভীর রাতে শীতের মধ্যে রাস্তার পাশে বসে থাকা শিশু দুটিকে দেখে লোকজন এগিয়ে আসেন।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে আনোয়ারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আনোয়ারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোমেন বলেন, ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। শিশু দুটির শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। ছোট শিশুটির জন্মগত রোগ রয়েছে বলে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন এবং বড় শিশুটির চর্মরোগ রয়েছে।
শিশু আয়েশা জানায়, তাদের মা শোলকাটা এলাকার রাস্তার পাশে তাকে ও তার ছোট ভাইকে ফেলে রেখে চলে যান। তাদের বাড়ি সাতকানিয়া থানার মৌলভী দোকানের পাশের এলাকায়।
সেদিন রাতে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে স্থানীয় বাসিন্দা মহিম উদ্দিন শিশু দুটিকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরও শিশু দুটিকে সড়কের পাশে কনকনে শীতে বসে থাকতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগে। আয়েশার সঙ্গে কথা বলে সব জানার পর তাদের বাসায় এনে গরম খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানাই।
মহিম উদ্দিনের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, শিশু দুটি খুব অসুস্থ ছিল। ছোট শিশুটি প্রতিবন্ধীও। রাতে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে খাবার খাওয়ানোর পর তারা একটু স্বাভাবিক হয়। আমাদের মনে হয়েছে, অসুস্থতার কারণে হয়ত তাদের মা-বাবা এমন নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রিজোয়ান আহমেদ জানান, শিশু দুটি বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসা শেষে তাদের আশ্রয়দাতার কাছে রাখা হবে এবং স্বজনদের খুঁজে বের করতে আশপাশের উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, শিশু দুটি নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা ও দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসন নিয়েছে। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শিশু দু’টির কোনো স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের পরিচয় ও পরিবারের খোঁজে প্রশাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এমআর/এমজে