১০০ টাকায় মিলবে করোনারোধী ‘নাজাল স্প্রে’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিকেল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) তৈরি করা করোনা বিধ্বংসী ‘নাজাল স্প্রে’ মাত্র ১০০ টাকাতেই পাওয়া যাবে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে বিআরআইসিএম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মালা খান।
তিনি বলেন, কোনোভাবে নাকে ও মুখে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকলে সেখানে এ ‘নাজাল স্প্রে’ ব্যবহার করলে সেগুলো মরে যাবে। একবার স্প্রে করার পর নাক ও মুখ অন্তত তিন ঘণ্টা সুরক্ষিত থাকবে। উদ্ভাবিত স্প্রেটির নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গসেফ ওরো-নাজাল স্প্রে’। এর বাজার মূল্য ১০০ টাকা।
ড. মালা খান বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) সঙ্গে যৌথ গবেষণায় এ স্প্রে উদ্ভাবন করা হয়েছে। ঢামেকে করোনা আক্রান্ত ২০০ রোগীর ওপর এ স্প্রের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়েছে। ট্রায়ালে ‘খুবই আশাব্যঞ্জক’ ফলাফল পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, খুব দ্রুত সময়ে যেন এটি মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে পারি আমরা সেজন্য কাজ করছি। করোনারোধী এ স্প্রেটির অনুমোদন পেতে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) আগামী বৃহস্পতিবার সকল কাগজপত্র মজা দেওয়া হবে।
স্প্রের কার্যকারিতা সম্পর্কে মালা খান বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমাদের দেহে প্রবেশের পথ হলো নাক, মুখ ও চোখ। আমাদের স্প্রে নাক ও মুখে ব্যবহার উপযোগী। আমরা যদি কোনোভাবে নাক ও মুখে থাকা ভাইরাস কিল করতে পারি তাহলে এর সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারব। একবার স্প্রে করার পর তা ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে।’
কবে নাগাদ বাজারে এ স্প্রে পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমে বিএমআরসি এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের পর বাজারে স্প্রেটি পাওয়া যাবে। এটা কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। উৎপাদনের যা খরচ হবে সে মূল্য জনগণের কাছ থেকে নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে ১০০ টাকায় পাওয়া যাবে এটি।
বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এ ধরনের স্প্রে উৎপাদন করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আমরাই এ স্প্রে উদ্ভাবন করেছি। তবে অন্য কোনো রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের স্প্রে বাজারে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গবেষণাটির অন্যতম সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, চীনে সংক্রমণের পর ৮ মার্চ যখন করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ধরা পড়েছে, আমরা সবাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছি। তখন আমরা চিন্তা করছি আরও ভালোভাবে কি করা যায়। সে চিন্তা থেকেই আমরা একটা রিসার্চের পরিকল্পনা করেছি। যার ফলশ্রুতিতে কিছু কাজ করতে করতে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মে মাসে একটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করেছি। আমরা ২০০ জন করোনা রোগীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করেছি। এটাকে আমরা বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন আঙ্গিকে নাকে মুখে প্রয়োগ করেছি। এবং দেখেছি এতে কোনো ক্ষতিকর কিছু নেই।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সাধারণত নাক এবং মুখ দিয়ে প্রবেশ করে। প্রবেশের সময় তারা নাক ও মুখের পেছনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে। যদি ওই সময়টাতে আমরা সেখানে স্প্রে দিয়ে দেই, তাহলে সেই ভাইরাসগুলো ধ্বংস হয়। আমরা বলছি, নাক ও মুখের ছিদ্রে যে ভাইরাস জমা হচ্ছে, এ স্প্রের কারণে ভাইরাসের লোডটা কমে যাচ্ছে। এতে করে সেই মানুষটি ভাইরাসে আক্রান্ত থেকে মুক্তি পাচ্ছে।
ডা. রুমি বলেন, করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশের মাত্রই কিন্তু আমরা করোনা আক্রান্ত হয়ে যাই না, তখনও আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে। আমাদের রিসার্চের জন্য যে অনুমতি নিতে হয়, আমরা সব অনুমতি নিয়েই ট্রায়াল দিয়েছি এবং আমরা সফল হয়েছি।
স্প্রে ব্যবহারে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাক্তারের নিজেরাই এ স্প্রে ব্যবহার করেছেন। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এ স্প্রের অগ্রগতির কথা জানায় বিআরআইসিএম।
টিআই/এমএইচএস