তথ্য প্রকাশে এনজিও’র চেয়ে এগিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান

তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বতঃপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশের অগ্রগতি যথেষ্ট সন্তোষজনক নয়। আইনি বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ ও প্রদান করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারি ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের স্কোর সন্তোষজনক হলেও কোনো এনজিও-ই সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। আর প্রায় ৯৫ শতাংশ এনজিও’র স্কোর উদ্বেগজনক।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত ‘তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বতঃপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ চর্চার মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
টিআইবি’র সিনিয়র ফেলো (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) শাহজাদা এম আকরাম প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এ সময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
এ বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে প্রবেশগম্যতা সন্তোষজনক হলেও ব্যাপ্তি ও উপযোগিতায় সন্তোষজনক নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বেসরকারি সংস্থার তুলনায় উত্তম। ৬৭ শতাংশের বেশি স্কোর পেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো করলেও আরও উন্নতির সম্ভব। অন্যদিকে এনজিও’র ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানই সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। প্রায় ৯৫ শতাংশ এনজিও’র স্কোর হতাশাজনক। কেন তারা পিছিয়ে রয়েছে, বিষয়টি খুবই বিব্রতকর।
গবেষণায় সরকারি ১৫৩টি প্রতিষ্ঠান ও ৩৯টি এনজিওসহ মোট ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ওপর তথ্য-নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ২৪ শতাংশ এনজিও।
নমুনা সংগ্রহ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি। আর প্রায় ৩৭ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্কোর সন্তোষজনক। যারা ৬৭ শতাংশের ওপরে স্কোর পেয়েছে। প্রায় ৮.৫ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্কোর উদ্বেগজনক। অন্যদিকে কোনো এনজিও-ই সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। ৯৪.৯ শতাংশ এনজিও’র স্কোর উদ্বেগজনক।
স্কোরের ভিত্তিতে প্রথম দশে অবস্থান করা ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত স্কোর ৩৩ থেকে ৪২ এর মধ্যে ছিল। ৪২ স্কোর পেয়ে যুগ্মভাবে প্রথম অবস্থানে রয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের স্কোরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পেয়েছে ২০, স্বাস্থ্য অধিদফতর ১৫, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ পেয়েছে ৩২, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ২০, ডাকা ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্কোর ৩১, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৬, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৯, তথ্য কমিশন ৩৫, নির্বাচন কমিশন ১৩ ও পরিকল্পনা কমিশন ১৬ স্কোর পেয়েছে।
২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে তথ্য-উপাত্ত আমলে নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত তিনটি ক্ষেত্রের মোট ২৫টি নির্দেশককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে তথ্যের ব্যাপ্তিতে ১৯টি, প্রবেশগম্যতায় ৪টি ও উপযোগিতায় ২টি নির্দেশক।
প্রসঙ্গত, উদ্বেগজনক গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ধরা হয়েছে ৮। অপর্যাপ্ত গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ২৭ এবং সন্তোষজনক গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ধরা হয়েছে ৩৭।
গবেষণায় বলা হয়েছে, তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রায়ই পরিপূর্ণ অবগত থাকেন না। ফলে স্বতঃপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ, প্রচারসহ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আইনি বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ ও প্রদান করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তার নিজস্ব পদের দায়িত্ব বেশি থাকায় ওয়েবসাইটের গুণগতমান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া বা সে বিষয়ে চিন্তা করার অবকাশ পান না।
আরএম/জেডএস