গণমাধ্যমকে মুক্ত করাসহ স্ফুলিঙ্গের ৮ দফা দাবি

নারীর বিরুদ্ধে মোরাল পুলিশিং, আইন ও বিচার বিভাগের পক্ষপাতিত্ব বন্ধ, গণমাধ্যমকে মুক্ত এবং স্বাধীন করাসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে নারীদের প্লাটফর্ম ‘স্ফুলিঙ্গ’।
শনিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভা থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হচ্ছে : আইনের অপব্যবহার করে নাগরিকের ব্যক্তি পরিসরে ঢুকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন বন্ধ করা; প্রতিটি গণমাধ্যম এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে নারীর বিরুদ্ধে অসংবেদনশীল আচরণ, শব্দচয়ন এবং ছবি ব্যবহার বন্ধ করা; গণমাধ্যমে নারীর বিরুদ্ধে অসংবেদনশীল সংবাদ পরিবেশন, শব্দচয়ন এবং ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করা; প্রত্যেক সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের উল্লেখিত নীতিমালা বিষয়ে অবগত করতে হবে এবং জেন্ডার সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ দেওয়া; নারীর বিরুদ্ধে সমাজের প্রচলিত মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকা; নারীর সহিংসতা সংক্রান্ত অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে হবে। এসব অভিযোগ তদন্ত না করে অভিযুক্তকে আইনি প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ করা।
গোলটেবিল বৈঠকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ আইন আদালত বলে কিছু নেই। তাই ক্রসফায়ার, গুমের মতো ঘটনা আমরা দেখতে পাই। যেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী যাকে গুলি করতে চায়, তাকেই মেরে ফেলতে পারে। ক্রসফায়ারের পর এসব রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিবৃতি যে মিথ্যা তা সমাজের সবাই জানে। গণমাধ্যম নারী বিদ্বেষী সংবাদ পরিবেশন করে মূলত জনমত তৈরি করতে। যা ইতোমধ্যে ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় নীতিমালা দিয়ে সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সানজিদা নীরা বলেন, গণমাধ্যম তাদের কাটতি বাড়াতে নারীদের নিয়ে অসংবেদনশীল সংবাদ পরিবেশন করে। নারীকে এভাবে উপস্থাপন না করেও যে গণমাধ্যম চলতে পারে এ ধারণায় আসতে হবে।
অন্যান্যরা বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, নারীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোরাল পুলিশিং এবং গণমাধ্যমে নারীর ব্যক্তিগত জীবনকে উন্মুক্ত করে সংবাদ প্রচার করে সমাজের প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক জনমতকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। তাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রভাবশালীদের অপরাধকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়। এর পাশাপাশি বিচার বিভাগের বিশেষ ক্ষমতাশীল গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আইনের অপব্যবহার করে নারীদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার বিষয়টি প্রায়ই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি রাষ্ট্র এবং তার প্রতিষ্ঠানসমূহের দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক এবং পুরুষতান্ত্রিক চর্চাই নারীর বিরুদ্ধে এ অন্যায্যতা তৈরি করছে।
বৈঠকে আরও যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, আইনজীবী সুলতানা আক্তার রুবি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী এবং বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের সদস্য জান্নাতুল মাওয়া, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য লুনা নুর, নারী মুক্তি কেন্দ্রের ঢাকা নগরের সভাপতি তাসলিমা বিউটি, বিপ্লবী নারী ফোরাম ঢাকা নগরের সদস্য আমেনা আক্তার, আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহাইয়া আল আমিন প্রমুখ।
এমএইচএন/এসকেডি