আগ্রাবাদের ঘটনায় সিডিএর অবহেলাকে দায়ী করলেন চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অবহেলার কারণেই আগ্রাবাদের নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশেনর মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, নালার পাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না। যে কোন উন্নয়ন কাজ করতে গেলে মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হবে। 

মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বাদমতলী এলাকায় নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মারা যাওয়ার স্থান পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এগুলো সিটি করপোরেশনের আওতায় নেই৷ কাজের সময় সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের।

তিনি বলেন, অবহেলার জন্য, অসতর্কতার জন্য এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। নালার পাশে ফেন্সিং (নিরাপত্তা বেষ্টনী) থাকলে দুর্ঘটনা ঘটত না। সিটি করপোরেশনের রেলিং ছিল নালার ওপরে। স্ল্যাব ছিল। সিডিএ কাজ করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। কিন্তু পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি। তাই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সিডিএর কাজের কারণে সমস্ত ময়লা গিয়ে নালায় পড়ছে। তাই নালায় ময়লা ছিল।

তিনি বলেন, যেসব সংস্থা উন্নয়ন কাজ করছে তাদের উচিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া। আগ্রাবাদের নালায় যদি সেফটি ব্যবস্থা থাকত তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনা হতো না।  

রেজাউল করিম বলেন, যেখানে যে সংস্থার কাজ চলে সেখানে সে সংস্থা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। মানুষের জন্যই তো উন্নয়ন। মানুষকে রক্ষা করতে না পারলে উন্নয়ন কীভাবে হবে? 

তিনি আরও বলেন, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে স্ল্যাব বসানোর এখন কোনো সুযোগ নেই। এসব স্থানে সিটি কর্পোরেশনের স্ল্যাব ছিল। কিন্তু সিডিএ ফুটপাত কেটে ফেলেছে। ফটুপাত ছিল ছয়ফুটের মতো। কিন্তু কেটে সিডিএ দুই ফুট আড়াই ফুট করে ফেলেছে। এখানে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি। নালায় কোনো ধরনের স্লাবও দেয়নি।  

দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা বেহাল। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে সিটি কর্পোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, দুদিন আগেও কথা হয়েছে। তাদের বলেছি দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মানুষ চলাচল করতে পারছে না। রাস্তাটা সংস্কার করে দেন। তারা ইটের সুরকি ফেলার কথা বলছে। 
 
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাদমতলী এলাকায় নালায় পড়ে যান সেহরিন মাহমুদ সাদিয়া নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। পরে রাত ২টা ৫০ মিনিটে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। 

জানা গেছে, সাদিয়া আগ্রাবাদ এলাকা থেকে চশমা কিনে মামা ও নানার সঙ্গে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। ফুটপাতের একপাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা পিছলে নালায় পড়ে যান তিনি। সাদিয়া পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মামা ও নানাও নালায় ঝাঁপ দেন। কিন্তু স্রোতের কারণে তাকে উদ্ধার করতে পারেননি তারা। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

নিহত সাদিয়া (২০) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। তার বাড়ি নগরীর হালিশহর থানার বড়পুল মইন্যা পাড়ায়।

জানা যায়, আগ্রাবাদ এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। আগ্রাবাদ মোড় থেকে রবি অফিসের সামনে এবং মাইজারগেট পর্যন্ত কোনো সড়কবাতি নেই। সন্ধ্যার পর এ এলাকা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে এবং হালকা বৃষ্টির কারণে ফুটপাত পিচ্ছিল হওয়ায় সাদিয়া পা পিছলে পড়ে যান। 

সাদিয়ার মামা জাকির হোসেন বলেন, ‘কীসের উন্নয়ন এসব? যে উন্নয়নে কয়েক দিন পরপর মানুষের মৃত্যু হয়। নালার যদি বেড়া দেওয়া থাকত তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।’

এ বিষয়ে জানার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে গিয়ে রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং নালার কাজ করছে সিডিএ ।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে মুরাদপুর এলাকায় নালায় পড়ে তলিয়ে যান সালেহ আহমদ নামে এক সবজি ব্যবসায়ী। যার হদিস এখনো মেলেনি। চলতি বছরের ৩০ জুনও ষোলোশহর চশমা হিল এলাকায় খালের পাশের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় খালে পড়ে যায় একটি অটোরিকশা। স্রোত থাকায় খালে তলিয়ে মারা যান চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগম (৬৫)।

কেএম/এসএম/জেএস