সংগ্রামী নারী ফাতেমাকে পুনাকের রিকশা উপহার

চোখের দেখায় ফাতেমার (২০) চেহারায় সংগ্রামের চিহ্ন স্পষ্ট। ছোটবেলায় লঞ্চডুবিতে বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর আর কোথাও তার ঠাঁই মেলেনি। জীবন কেটেছে পথে-ঘাটে। কখনো কাজ করেছে মানুষের বাসায়। একসময় পরিচয় সূত্রে এক গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে বিয়েও হয়। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় নির্যাতন। স্বামীর নির্যাতনে সন্তান সম্ভবা ফাতেমার সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।
মৃত মেয়ে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর নেমে আসে দুর্ভোগ। গত বছর করোনাকালে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। অন্যত্র বিয়ে করে সংসার গড়ে। ফাতেমা তখন পুনরায় সন্তান সম্ভবা।
নিজের কথা, অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে শুরু করে সংগ্রামী জীবন। সিদ্ধান্ত নেয় রিকশা চালানোর। প্রথমে কেউ রিকশা দিতে রাজি না হলেও দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা জমায় মহাজনের অনুমতি মেলে। রিকশার প্যাডেলে ফের সংগ্রামী জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা পেলে ফাতেমা।
সন্তান পেটে নিয়েও তাকে রিকশার প্যাডেল চাপতে হয়েছে। কিন্তু বিধি-বাম। আবারও মৃত ছেলের জন্ম দেয় ফাতেমা। মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙ্গে পড়ে সে। তার মানসিক কষ্ট সইতে না পেরে তার বোন নিজের মেয়েকে দিয়ে দেয় তাকে। এই মেয়েই এখন তার সব। মেয়ের জন্যই নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেছে ফাতিমা। পথে পথে রিকশা চালিয়ে জীবন ধারণের চেষ্টা করছে। এখন তার একটি রিকশা চাই।
বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা পরম মমতায় পাশে দাঁড়িয়েছে ফাতেমার। তিনি তাকে একটি রিকশা দিয়েছেন। আজকের দিনটি যেন ফাতেমার জীবনে এক বিশাল স্বপ্ন, বড় ধরনের প্রাপ্তির।
পুনাক সভানেত্রী জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এই নারীর হাতে তুলে দিয়েছেন ব্যাটারিচালিত একটি নতুন রিকশা। সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রমনায় পুনাকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ফাতেমার হাতে তুলে দেন নতুন রিকশাসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী।

পুনাক সভানেত্রীর হাত থেকে রিকশা ও অন্যান্য উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত ফাতেমা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুনাক সভানেত্রী ফাতেমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তখন ফাতেমা বলেন, ‘জীবনে কখনো এত আদর কেউ করেনি। আজ আমি ভালোবাসা পেয়েছি, নতুন মা পেয়েছি।’
উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছিল, ফাতেমা ও তার মেয়ের জন্য পোশাক, হিজাব, রেইনকোট, চাল, ডাল, তেল, চিনি ও লবণ ইত্যাদি।
জেইউ/ওএফ