বিমানবন্দরে প্রবাসীদের টার্গেট করে ছিনতাই-অপহরণ

স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশে আসা বিদেশি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের টার্গেট করা হয় বিমানবন্দরে নামার পরপর। গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা প্রবাসীদের সহযোগিতার নামে গাড়িতে তুলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। আবার কখনো প্রথমে সখ্যতা গড়ে তোলা হয়, পরে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে ঢাকার বাইরে ফেলে দেয়া হয়। লুট করা হয় সঙ্গে থাকা সব মালামাল।

রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় সম্প্রতি সংঘটিত দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পায় ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ। গ্রেফতার করা হয় চক্রের তিন সদস্যকে।

রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- মো. মাসুদুল হক আপেল, আমির হোসেন হাওলাদার ও মো. শামীম। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মীরবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫টি পাসপোর্ট, দুটি এনআইডি কার্ড, দুটি এটিএম কার্ড, একটি আইপ্যাড, একটি ওয়ার্ক পারমিট কার্ড, একটি বিএমইটি কার্ড, একটি অফিস আইডি কার্ড, একটি স্টিলের চাকু ও নগদ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

ডিবি বলছে, প্রবাসীদের টার্গেট করে গত এক বছরে বিমানবন্দর এলাকায় অর্ধশতাধিক ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে মাত্র সাতটি।

হাফিজ আক্তার জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর মো. লিটন সরকার নামে এক প্রবাসী মিসর থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বাংলাদেশে আসেন। তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে গোলচত্বরে ফুটওভার ব্রিজের নিচে এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন।

এ সময় অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন লোক ধারালো চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজ ছিনতাই করে নিয়ে যায়। হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজে থাকা তার একটি পাসপোর্ট, মিসরের ভিসা, বিমানের টিকিট, আট আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, দুটি মোবাইল সেট, একটি স্মার্ট কার্ডসহ নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

পরবর্তীতে ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে একটি বাসে তুলে নেয় এবং ঘটনার বিষয়ে কাউকে কোনো কিছু না জানানোর জন্য ভয়-ভীতি দেখায়। এই ঘটনায় গত ১৫ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়।

অন্যদিকে ৫ অক্টোবর ব্রিটেন থেকে ঢাকায় নামেন ওমর শরিফ নামে এক ব্যক্তি। নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে অপহৃত হন তিনি। তাকে ঢাকার বাইরে নামিয়ে দেওয়া হলেও তার পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় সব মালামাল লুট করা হয়।

পৃথক এ দুই ঘটনায় মামলা হলে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ। গোয়েন্দা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় সম্পৃক্ত চক্রের ওই তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রবাসীরা ঠিক কী কী কারণে ছিনতাইকারী চক্রের টার্গেট হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বিমানবন্দর এলাকায় তারা গত এক বছরে অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের মূলহোতা মাসুদুলের বিরুদ্ধেই রয়েছে সাতটি মামলা।

হাফিজ আক্তার বলেন, প্রবাসীদের টার্গেট করে চক্রটি ৫০ থেকে ৬০টি ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের পর মালামাল লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে মাত্র সাতটি। দ্রুত বিদেশ ফিরে যাওয়ার তাড়া থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা ঝামেলা মনে করে মামলা করছেন না। আবার ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিদেশিরাও দ্রুত পাসপোর্ট তুলে ফিরে যাচ্ছেন। যে কারণে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা কম হচ্ছে। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা আসছেন। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করে এসব করা হচ্ছে। চক্রের সদস্যরা কাদের গাড়ি ভাড়া নিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

জেইউ/এনএফ/জেএস