কিছু দুষ্ট লোক নিষেধাজ্ঞার সময় অসহায় জেলেদের নদীতে নামাচ্ছে

কিছু দুষ্ট লোক তাদের অসাধু পরিকল্পনা ও চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়ন করার জন্য দরিদ্র-অসহায় জেলেদের নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে নামাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
রোববার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে 'মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২১' বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ইলিশের স্বাদ পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
রেজাউল করিম বলেন, আমাদের সবচেয়ে সুস্বাদু ও ভালো মাছ হচ্ছে ইলিশ। ইলিশ মাছ সংরক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধি, এর নিরাপদ আশ্রয় ও নিরাপদ প্রজননের জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। মা ইলিশ রক্ষা, ইলিশের অভয়াশ্রম সৃষ্টি করা, ইলিশ গবেষণা, জাটকা সংরক্ষণসহ বিভিন্নভাবে আমরা কাজ করছি। ইলিশের পরিসর বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সব ধরনের আগ্রহ রয়েছে, পরিকল্পনা রয়েছে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতরের কর্মকর্তারা মিলে ভূমিকা পালন করতে হবে, যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। আমরা চাইব আগামীতে ইলিশ উৎপাদন আরো বাড়ুক। ইলিশের উৎপাদন এমন একটা জায়গায় আসুক যাতে গ্রাম-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব মানুষ সুস্বাদু ইলিশের স্বাদ নিতে পারেন। পরিপূর্ণতার সঙ্গে পরিবার-পরিজন নিয়ে ইলিশ খেতে পারেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে সবচেয়ে সুস্বাদু ও সর্বোচ্চ ইলিশ মাছ আহরণে আমাদের স্বত্বাধিকার রয়েছে। সেজন্য ইলিশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপকহারে যাতে ইলিশ রফতানি না হয় সে পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু প্রতিকূলতা লক্ষ্য করেছি। কিছু দুষ্ট লোক তাদের অসাধু পরিকল্পনা ও চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়ন করার জন্য দরিদ্র-অসহায় জেলেদের নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে নামাচ্ছে। যারা নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্য আহরণে যায় তাদের বিশাল অংশ অন্যের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শতভাগ সফল করতে নতুন নতুন সৃজনশীল কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যজীবী বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকা আরো বেশি কীভাবে রাখা যায়, সেজন্য নীতি নির্ধারণ করতে হবে। মা ইলিশ সংরক্ষণে এবারের অভিযানের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আরো ভালোভাবে ভবিষ্যতে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে এবছর যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।
মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, সুবোল বোস মনি, মো. তৌফিকুল আরিফ ও এস এম ফেরদৌস আলমসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মৎস্য অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় দেশের ৮ বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য দফতরের উপ-পরিচালক সংশ্লিষ্ট বিভাগের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের কার্যক্রম তুলে ধরেন। কর্মশালায় জানানো হয়, এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের অংশ হিসেবে ৪ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯২টি মোবাইল কোর্ট ও ১৫ হাজার ৩৮৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং প্রায় ৮৮৪ লাখ মিটার অবৈধ জাল আটক করা হয়।
একে/জেডএস