বাংলাদেশের সিনেমা : সংকট ও সম্ভাবনা

সংস্কৃতি সেক্টরে চলচ্চিত্র একটি দেশের প্রধান শিল্প, সেটা ইন্ডাস্ট্রি অর্থে তো বটেই। চলচ্চিত্র বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমেরও বিকাশ ঘটে। কারণ চলচ্চিত্র সাহিত্যের মতো একক বা স্বনির্ভর শিল্পমাধ্যম না। এর সঙ্গে সংগীত, সাহিত্য, অভিনয়শিল্প, চিত্রকলা, নৃত্যকলা, অডিও-ভিজ্যুয়াল শিল্প প্রভৃতি শিল্পমাধ্যম যুক্ত আছে। যুক্ত আছে মেকআপ, কোরিওগ্রাফি, ডিজাইনার থেকে শুরু করে অনেক সাপোর্টিভ পেশা।
আর্টিস্টের কথা বাদ দিলাম, শুটিং ইউনিট থেকে সিনেমাহল পর্যন্ত অসংখ্য লোকের জীবনজীবিকা এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এটা গেল অর্থনৈতিক দিক, সমন্বিত শিল্পফর্ম হিসেবে সংস্কৃতির সামগ্রিক উন্নয়নে চলচ্চিত্রের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে সেই দেশের চলচ্চিত্র। তাই চলচ্চিত্র ছাড়া আমাদের সংস্কৃতির বৈশ্বিক পরিচিতি অর্জনও সম্ভব নয়। কিন্তু আফসোসের বিষয়, নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই চলচ্চিত্র-শিল্প (আর্ট এবং ইন্ডাস্ট্রি দুই অর্থেই) আমাদের দেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।
বিশেষত মাঝে এক প্রায় দুই দশক খুব খারাপ সময় গেছে। এই ইন্ডাস্ট্রি কোমায় বেঁচে থাকার মতো কোনোমতে টিকে ছিল সরকারি অনুদানের ওপর। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব পরিচালক অনুদানের আশায় বসে থাকতেন। আমি একবার লিখেছিলাম, “শিল্পীরা চান পুঁজিপতিরা সিনেমায় চ্যারিটি করুক, সরকার অনুদান দিক; অথচ অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি সে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে। কোনো কোনো দেশের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সর্বোচ্চ আয় হয় বিনোদন মাধ্যম থেকে। বাংলাদেশে এটা অনুদান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। সিনেমা যখন সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা/অনুদান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হবে তখনই ধরে নিতে হবে ওটা মরে গেছে। অথচ এ দেশেই সত্তর-আশি-নব্বই দশকের দিকে সিনেমা নিজের শক্তিতেই টিকে ছিল। এ জন্য সরকারি অনুদানেরও প্রয়োজন হয়নি। সিনেমা লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ছিল।”
এখন কি সেই সম্ভাবনা কমে গেছে? আমার তো মনে হয় নতুন সম্ভাবনা যুক্ত হয়েছে। সত্য যে সিনেমাহল কমে গেছে, আবার এও সত্য ওটিটি প্লাটফর্ম এসেছে। শুধু দেশে না বিদেশ থেকেও আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি তুলনামূলক ‘ছোট্ট একটা’ ইন্ডাস্ট্রির উদাহরণ দেই। আয়তনের দিক দিয়ে ভারতের ১৪তম প্রদেশ হলো কেরালা। এই প্রদেশে মাত্র সাড়ে ৩ কোটি মতো মানুষের বাস।
মালায়লাম ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যাও এর কাছাকাছি। যে ভাষায় চার কোটির বেশি মানুষ কথা বলে না সে ভাষায় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও স্বাভাবিকভাবেই খুব বড় হওয়ার কথা না। অন্তত বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ, কেরালার মতো প্রদেশ না এবং বাংলা ভাষায় ৩০ কোটি মতো মানুষের ভাষা হিসেবে চিন্তা করলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে পিছিয়ে থাকার কথা। কিন্তু ২০২৪ সালের প্রথম ৬ মাসে ১ হাজার কোটির বেশি আয় করেছে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আয় করেছে প্রায় ৪০০ কোটি রুপি। এই ইন্ডাস্ট্রির মূলশক্তি হলো সিনেমার গল্প। গল্পে বৈচিত্র্য। গল্পের মৌলিকতা। যে কারণে মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রি কারও সিনেমা কপি করে না। বরং ওদের সিনেমার রিমেক হয় বলিউডে, আরও বড় ইন্ডাস্ট্রিতে।
পরিচালক নিজে স্ক্রিপ্ট লিখতেই পারেন, সত্যজিৎ থেকে আসগর ফরহাদির মতো বিশ্বখ্যাত নির্মাতারা সেটা করেছেনও। আবার প্রয়োজনে তারা সাহিত্যের কাছে ফিরে গেছেন। পরিচালককেই বুঝতে হবে তার কাহিনি ও চিত্রনাট্য দুর্বল কিনা। তিনি হয়তো বছরে একটা সিনেমা বানাবেন, সেটা তিনি নিজের গল্পেই বানাবেন নাকি অন্যের ভালো গল্প নিয়ে বানাবেন সেই সিদ্ধান্ত একান্তই তার।
আমাদের সিনেমার প্রধান দুর্বলতা গল্পে। কেন ‘তাণ্ডব (২০২৫)’ দেখে মনে হবে ‘জাওয়ান (২০২৩)’-এর দরিদ্র ভার্সন দেখলাম? কেন কোনো থ্রিলার সিনেমা দেখে বিদেশি কোনো সিনেমার সঙ্গে মিল খুঁজে পাবো? বা কাহিনি মৌলিক হলে সেটা আরও দুর্বল হবে? মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রির অনেক সিনেমার গল্প সাহিত্য থেকে নেওয়া। জনপ্রিয় গল্প উপন্যাসগুলো পর্দায় রিমেক করা হয়। অ্যাডাপটেশন সেই অর্থে আমাদের হয় না বললেই চলে।
অনেকদিন পর অ্যাডাপটেশন থেকে ভালো একটি সিনেমা দেখলাম—তানিম নূর পরিচালিত ‘উৎসব (২০২৫)’। ক্রিসমাস ক্যারলের অতি উত্তম অ্যাডাপটেশন। গুড আর্ট ঘুরেফিরে আসে, নতুনভাবে, নতুন সম্ভাবনা নিয়ে। তার জন্য প্রয়োজন হয় গুড আর্টিস্টের। রিক্রিয়েশন ইজ সামটাইমস মোর ডিফিকাল্ট দ্যান নিউ ক্রিয়েশন। এইখানে সার্থকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি।
তিনি এতটাই কটেক্সুয়ালাইজড করেছেন যে বোঝার উপায় নেই নাটকটি মার্কিন নাট্যকার Irwin Shaw রচিত ‘Bury the Dead (1936)’-এর অ্যাডাপটেশন। কবর সম্পূর্ণ আমাদের নাটক। সিনেমার ক্ষেত্রে শেক্সপিয়রের ‘দ্য কমেডি অফ এররস (The Comedy of Errors)’-এর অ্যাডাপটেশন ভ্রান্তিবিলাস (বিদ্যাসাগরের অনুবাদ থেকে)। উত্তম আর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ে গল্পটা দেখে কেউ বলবে শেক্সপিয়ারের গল্প সেটা! যারা এই কাজগুলো করেছেন প্রত্যেকে মাস্টার আর্টিস্ট।
সিনেমায় কোন গল্প বলা যাবে? এই প্রশ্নের বিপরীতে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, কোন গল্প বলা যাবে না? সিনেমায় সব গল্প বলা যাবে, সেটা জনরা/জেনার-এর বিচারে থ্রিলার হতে পারে, অ্যাকশন হতে পারে, ড্রামা হতে পারে, কমেডি হতে পারে, রোমান্টিক হতে পারে, ফ্যান্টাসি বা হরর হতে পারে।
এক থ্রিলারের আবার অনেক সাব জনরা/জেনার আছে, সাইকো থ্রিলার, অ্যাকশন থ্রিলার, ক্রাইম থ্রিলার, হরর থ্রিলার ইত্যাদি। তার মানে গল্প নানাভাবে বলা যায়, নানা ধরনের গল্প বলা যায়, কিন্তু শর্ত একটাই, গল্পটা হতে হবে নতুন, অথবা নতুন ভাবে বলতে হবে। আমাদের সিনেমায় নতুন ধরনের গল্প মাঝে মধ্যে দেখা গেলেও ন্যারেটিভ টেকনিকে নতুনত্ব খুব বেশি চোখে পড়ে না। আরেকটা দুর্বলতা খুব চোখে পড়ে ডায়লগে।
আমি এক দশকে মুক্তি পাওয়া উল্লেখযোগ্য অনেকগুলো সিনেমা দেখেছি, দুয়েকটি বাদ দিয়ে অধিকাংশ সিনেমার ডায়ালগ বা সংলাপ দুর্বল। কাহিনি ভালো, কিন্তু মনে রাখার মতো কোনো শার্প ডায়ালগ বা সংলাপ নেই। এর কারণ সিনেমা সাহিত্য থেকে আলাদা হয়ে পথচলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পরিচালক নিজে স্ক্রিপ্ট লিখতেই পারেন, সত্যজিৎ থেকে আসগর ফরহাদির মতো বিশ্বখ্যাত নির্মাতারা সেটা করেছেনও। আবার প্রয়োজনে তারা সাহিত্যের কাছে ফিরে গেছেন। পরিচালককেই বুঝতে হবে তার কাহিনি ও চিত্রনাট্য দুর্বল কিনা। তিনি হয়তো বছরে একটা সিনেমা বানাবেন, সেটা তিনি নিজের গল্পেই বানাবেন নাকি অন্যের ভালো গল্প নিয়ে বানাবেন সেই সিদ্ধান্ত একান্তই তার।
আমাদের দর্শকেরও কিছু সমস্যা আছে। দর্শকরা হলিউডের সিনেমার ভায়োলেন্স উপভোগ করেন। কোরিয়ান ভেনজেন্স থ্রিলার ‘ওল্ডবয় (২০০৩)’ দেখার সময় বলেন ‘দুর্দান্ত সিনেমা’। তখন ‘অজাচার, বিকৃত যৌনাচার’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। কিন্তু দেশে কোনো সিনেমায় কিছু ভায়োলেন্স দেখলে, সামান্য যৌনদৃশ্য থাকলে মনে করেন যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। কোনো সিনেমায় নীতিশিক্ষা না থাকলে মনে করেন এই সিনেমা থিয়েটারে চলা উচিত না।
ব্যক্তিজীবনে নীতিহীন এই জাতি সিনেমা-হলকেও বাচ্চাদের স্কুল ভাবে। এটাও এক ধরনের সংকট। ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন (২০২৩)’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ‘হাওয়া (২০২২)’ সিনেমায় পাখি খাওয়ার জন্য মামলা ঠুকে দিয়েছিল অ্যানিমেল অ্যাক্টিভিস্টরা। তখন আমি লিখেছিলাম, ব্যক্তি অ্যাক্টিভিজম আর শিল্পের অ্যাক্টিভিজম আলাদা বিষয়। দর্শকের বোঝার অক্ষমতার দায় শিল্পকে বহন করতে হলে তো মুশকিল!
দর্শকের শিল্পের ভাষা বোঝার অক্ষমতা অনেক সময় শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে যায়। একই কথা খাটে নীতিনৈতিকতার প্রশ্নেও। সিনেমার প্রধান কাজ মানুষকে বিনোদন দেওয়া, সেটা সামাজিক গল্পের মাধ্যমে হোক আর অ্যাকশন থ্রিলার দিয়েই হোক। ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে হলে দরকার ভালো গল্পের সিনেমা এবং কমার্শিয়াল সিনেমা। আমরা আর্টফিল্ম বলে একটা খিচুড়িমার্কা টার্ম তৈরি করেছি। আর্ট বা কমার্শিয়াল আসলে বিষয় না। আমার বিবেচনায় সিনেমা দুই প্রকার—ভালো সিনেমা, দুর্বল সিনেমা। আমি গল্পের ওপর জোর দিচ্ছি এই কারণে যে, দুর্বল গল্প দিয়ে কখনোই ভালো সিনেমা হবে না।
ভালো সিনেমা কেউ জনরা/জেনার দিয়েও আলাদা করে না। ভালো সিনেমার স্পয়লারও বিষয় না। শুরুতে মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রির কথা বলেছিলাম। সেখান থেকে কয়েক বছরে ‘Kumbalangi Nights (2019)’, ‘Home (2021)’, ‘Ustad Hotel (2012)’—এর মতো ড্রামা সিনেমা; ‘Nayattu (2021)’, ‘Drishyam (2013)’, ‘Anjaam Pathiraa (2020)’—এর মতো থ্রিলার সিনেমা; ‘Ela Veezha Poonchira (2022)’—এর মতো ভেনজেন্স থ্রিলার; ‘Manjummel Boys (2024)’, ‘Aadujeevitham: The Goat Life (2024)’—এর মতো সার্ভাইভাল সিনেমা; ‘Bramayugam 2024’, ‘Romancham (2023)’—এর মতো হরর; Hridayam (2022), ‘Charlie (2015)’—এর মতো রোম্যান্টিক; ‘Lucifer (2019)’—এর মতো অ্যাকশন সিনেমা রিলিজ পেয়েছে।
বাংলাদেশের সিনেমার বাঁকবদল ঘটে গেছে এক দশকে। এখন যদি বাংলাদেশের সিনেমার দেশের বাইরেও দর্শকপ্রিয়তা অর্জনের কথা ভাবা হয়, তাহলে আমাদের আরও কিছু সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হবে। যে বিষয়টা সবচেয়ে জরুরি তা হলো মৌলিক গল্পে সিনেমা নির্মাণ। নিজস্ব ঢঙে গল্প বলা।
মৌলিক গল্পের অসাধারণ সব সিনেমা। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেও কয়েক বছরে ‘হাওয়া (২০২২)’ থেকে শুরু করে ‘পরাণ (২০২২)’, ‘গুণিন (২০২২)’, ‘ওমর (২০২৪)’, ‘সুড়ঙ্গ (২০২৩)’, ‘দেয়ালের দেশ (২০২৪)’, ‘শ্যামা কাব্য (২০২৩)’, ‘জংলি (২০২৫)’, ‘চক্কর ৩০২ (২০২৫)’, ‘উৎসব (২০২৫)’, ‘প্রিয় মালতী (২০২৪)’, ‘নকশীকাঁথার জমিন (২০২৪)’, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি (২০২১)’, ‘এশা মার্ডার (২০২৫)’ প্রভৃতি সিনেমা সম্ভাবনার আলো দেখিয়েছে।
বাংলাদেশের সিনেমার বাঁকবদল ঘটে গেছে এক দশকে। এখন যদি বাংলাদেশের সিনেমার দেশের বাইরেও দর্শকপ্রিয়তা অর্জনের কথা ভাবা হয়, তাহলে আমাদের আরও কিছু সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হবে। যে বিষয়টা সবচেয়ে জরুরি তা হলো মৌলিক গল্পে সিনেমা নির্মাণ। নিজস্ব ঢঙে গল্প বলা।
বলিউড-হলিউডের দুর্বল অনুকরণ দেখার জন্য কেউ এই নেটফ্লিক্স যুগে বসে থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। আশি বা নব্বই দশকে অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা বলিউড সিনেমার অনুকরণে নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এখন সেই একই কাজ করে দর্শক ধরে রাখা যাবে না। তখন বাংলা সিনেমার দর্শকের বড় অংশ, জেলা থেকে থানা পর্যায়ের মানুষ ছিল শ্রমজীবী। কিন্তু এখন শহুরে মধ্যবিত্তরা সিনেমাহলে যায়। বিশেষত সিনেপ্লেক্সে যারা যায় তারা দশটা সিনেমার ‘কোলাজসিনেমা’ দেখতে যায় না। তারা গল্পনির্ভর সিনেমা দেখতে চায় এবং সেই সিনেমা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়, আড্ডায় আলোচনাও করতে চায়। ‘মনপুরা (২০০৯)’ থেকে ‘উৎসব (২০২৫)’ তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। যারা গল্পনির্ভর সিনেমা বানাতে চান, তাদের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়।
হলিউড, বলিউড, কোরিয়া, চীন, জাপান, তামিল-তেলেগু-মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার কথা হচ্ছে না। কারণ আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য এমন ইন্ডাস্ট্রি এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি যে মাসে মাসে বিশ্বমানের সিনেমা তৈরি হবে এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে। অনেক সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে। কিন্তু এও তো ঠিক, এই সীমাবদ্ধতা নিয়েই ইরান তো দুর্দান্ত সিনেমা বানাচ্ছে।
জাফর পানাহি, আসগর ফরহাদি, আব্বাস কিয়ারোস্তামির মতো বিশ্বমানের নির্মাতারা সেখানে আছেন। লিমিটেড রিসোর্চ দিয়েই তারা বিশ্বকে তারা অসাধারণ সব সিনেমা বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন। বিশ্ব বলছি কারণ তাদের সিনেমা ইরানি গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৯৭ সালে মাজিদ মাজিদির ‘চিলড্রেন অফ হ্যাভেন (১৯৯৭)’ অস্কারে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল। ইতালিয়ান মাস্টারপিস ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল (১৯৯৭)’-এর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যাওয়াও এক ধরনের বিজয়।
এরপর ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্যেই আমেরিকার মাটিতে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতে নেয় আসগর ফরহাদির ‘এ সেপারেশন (২০১১)’। ২০১৭ সালে ‘দ্য সেলসম্যান (২০১৬)’-এর জন্যও তিনি অস্কার পান, কান ফেস্টিভ্যালেও সেরা গল্পের সিনেমা হয় এটি। ভালো গল্প থাকলে সবই সম্ভব, হলভর্তি দর্শক কিংবা দেশিবিদেশি স্বীকৃতি।
আরও পড়ুন
সাহিত্যের কর্মী হিসেবে আগ বাড়িয়ে চলচ্চিত্র নিয়ে কিছু কথা বলার কারণ একটাই, চলচ্চিত্র ছাড়া একটা দেশের অন্যান্য শিল্পমাধ্যম এগোতে পারবে না। এটা প্রধান শিল্প। সবারই বাংলাদেশের সিনেমার নবযাত্রায় অংশ নিতে হবে, সত্যিকার অর্থেই যদি সিনেমাকে এগিয়ে নিতে হয়। তাই নিতান্তই সিনেমার দর্শক হিসেবে কিছু ভাবনা-চিন্তা প্রকাশ করে গেলাম।
মোজাফ্ফর হোসেন : কথাসাহিত্যিক
