নিত্যপণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিন

জনগণের ভাগ্য বদলানোর উপায়টা কী? কারও কি জানা আছে? এই দেশে ধনী আরও ধনী হওয়ার পথ খুঁজে বেড়ায়। গরিব সে তো না চাইতেই আরও গরিব হওয়ার পথ খুঁজে নেয়। অন্যদিকে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সে ততটুকু দুর্নীতি করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কী বিচিত্র দেশ, কী বিচিত্র এ দেশের জনগণ!
আমরা সুযোগ পেলে পাথর খেয়ে ফেলি, পাহাড় খেয়ে ফেলি, খাল-বিল-নদী খেয়ে ফেলি। আর ব্যবসায়ীরা সারা বছর রুটিন করে জনগণকে ভোগায়। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, আটা, চিনির দাম সারা বছরই শিডিউল করে বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। রমজান মাসে ইফতারে ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা তো আমরা সবসময় দেখছি।
দেশের ব্যবসায়ীরা শুধু সুযোগ খুঁজে বেড়ায় কখন, কোন জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করা যায়! আমাদের কৃষকরা সারা বছর সবজি চাষ করে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে গ্রামীণ কৃষকরা তাদের চাষ করা পণ্যের সঠিক মূল্য পায় না। কয়েক হাত ঘুরে যেকোনো পণ্য ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যার সঙ্গে নিত্যদিনের বাজেট মেলাতে সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস ওঠে।
আরও পড়ুন
আমরা সাধারণ জনগণ শুধু হিসাব মেলাতেই ব্যস্ত থাকি। রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুদিন পর পর শুধু মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাব দিয়ে চলেছে। কিন্তু এ হিসাবের বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ। মানুষের যে পরিমাণ আয় বেড়েছে তার থেকে অনেক বেশি বেড়েছে দেশের মূল্যস্ফীতি। রাষ্ট্রের কর্তা-ব্যক্তিদের বলব, দয়া করে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরুন, নতুবা অর্থনৈতিক রোলার কোস্টার থমকে যাবে যেকোনো সময়।
একসময় দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে বলা হয়েছে, কিন্তু সেই সময়েই আবার পাচার হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। দেশকে সিঙ্গাপুর বানানোর জন্য প্রতিবছর পাল্লা দিয়ে বাজেট বৃদ্ধির মহারণে নেমেছিল বিগত দিনের সরকার। কালো টাকা সাদা করার পাঁয়তারায় ব্যস্ত ছিল তারা। কিন্তু কালো টাকার উৎপত্তি কোথায় ছিল, তার উৎস কী, সেসব খোঁজার চেষ্টা করেনি কেউ।
এখন আর সাধারণ জনগণ গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু দেখার সুযোগ পায় না। আমিষ-প্রোটিন দূরের কথা, সাধারণ জনগণ শাকসবজি খেয়ে বেঁচে থাকবে সেখানেও যেন কাঁটা তারের বেড়া। তাকে ডিঙিয়ে খেতে চাওয়াও দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনের পর দেশের জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা রেখেছিল। মানুষের আশা ছিল- পাল্টাবে অনেক কিছু। কিন্তু সেই আশা-প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ হয়েছে? বাজারে সবজির দামের আগুন বলছে আশা বরং নিরাশা হয়ে বিঁধছে সাধারণ মানুষকে।
দেশের ব্যবসায়ী শ্রেণি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব, বাজার ব্যবস্থাপনায় আরেকটু নজর দিন। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সবাই মিলে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিন। সিন্ডিকেট ভেঙে দিন। দেশের আপামর জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটান।
