জাতীয় কাউন্সিলে অবশ্যই চমক থাকে

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। দলের অন্যতম সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতা তিনি। তৃণমূল থেকে উঠে আসা আপাদমস্তক এই রাজনীতিবিদ খুব কাছ থেকে যেমন দেখেছেন আওয়ামী লীগের সুসময়, তেমনি দুঃসময়ের সাক্ষীও তিনি। আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল, দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম
ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে কী নিদের্শনা থাকতে পারে?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের লক্ষ্যই হলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণ। ২৪ ডিসেম্বরের কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, সফল রাষ্ট্রনায়ক, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এই সম্মেলন ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা থাকবেই। কারণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনও দোরগোড়ায়। আর এক বছর পরই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে অবশ্যই আর্থসামাজিক পরিস্থিতির বিষয়ে দিক-নিদের্শনা থাকবে, সামগ্রিকভাবে অপশক্তির বিরুদ্ধে দিক-নিদের্শনা থাকবে, লড়াইয়ের আহ্বান নিয়ে এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা পোস্ট : এবারের কাউন্সিলে কোনো চমক থাকছে?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে, জনগণ ক্ষমতায় বসানোর আগে যে কাউন্সিলটি হয়েছিল, সেই কাউন্সিলে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য স্থির করেছিলেন মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০৪১ সালকে সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় থাকছে এবারের সম্মেলনে। আর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল মানেই কিছু নতুনত্ব, কিছু চমক অবশ্যই থাকে।
আরও পড়ুন : বিএনপির রূপরেখা : ‘ইতিবাচক’ হলেও ‘সন্দিহান’ তারা
ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলকে ও সরকার থেকে আলাদা করার প্রচেষ্টা থাকে, এবারও তা অব্যহত থাকবে?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : নেত্রী সব সময় সরকার ও দলকে আলাদা করার জন্য ঐকান্তিকভাবেই চেষ্টা করেছেন। আসলে সরকারের দল নয়, দলের সরকার। দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দলকে ভিন্ন আঙ্গিকেই সব সময় ভেবেছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ৪২ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতির গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের আমরা যারা পুরোনো আছি, দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি, আমরা আসলে উনার (শেখ হাসিনা) কাছে হার মেনে যাই। উনি যে বাংলাদেশকে চেনেন, উনি যে বাংলাদেশের আনাচ-কানাচ চেনেন, উনি যে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চেনেন, এটি অবিস্মরণীয়। উনিই (শেখ হাসিনা) আওয়ামী লীগের ভালো-মন্দ নির্ধারণ করবেন।
ঢাকা পোস্ট : বিএনপির ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ ২৭ দফা রূপরেখা কীভাবে দেখছেন?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ২৭ দফা দিয়েছে। তারা যেসব ফর্মুলা দিয়েছে তা দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হয়েছি। কারণ, তারা পেছনের কথাগুলো ভুলে গেছে। বিএনপি দীর্ঘসময় ক্ষমতায় ছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিএনপি নামক দলটিকে আবিষ্কার করেছেন। দীর্ঘ সময় তাদের দুঃশাসন ও অনাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি-জামায়াতের আমলে রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। সে সময় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সেই রাষ্ট্রকে মেরামতের কথা যারা বলছেন, এটা ভূতের মুখে রাম-নাম ছাড়া কিছুই না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুবারের বেশি থাকতে পারবেন না, এটা সাংবিধানিক কথা হতে পারে না। এমন কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে না। কথাগুলো কী লক্ষ্য নিয়ে বলা হয়েছে, সেটা চিন্তার বিষয়।
তাদের মূল লক্ষ্য কী, আমরা জানি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিন দফায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখন ক্যান্টনমেন্টে কোনো গুলির শব্দ পাওয়া যায় না। পুলিশের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশ ছাপিয়ে বিশ্বের মধ্যে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তখন তাদের টার্গেট যে শেখ হাসিনাই হবেন, এটি বাস্তবতা, এটিই সত্য কথা। এই ২৭ দফা নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশ নিক, তারা দেখুক ২৭ দফার পক্ষে জনগণ রায় দেয়, নাকি দেয় না।
ঢাকা পোস্ট : সামনের পরিস্থিতি কি নির্বাচনের দিকে যাবে নাকি সংঘাতের দিকে যাবে?
অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক : সংঘাতের দিকে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ গত ১৪ বছরে যে সুখ-শান্তির মধ্যে রয়েছে, যে উন্নয়ন অগ্রগতি দেখেছে, সেই উন্নয়নের ধারায়, শান্তির বাতাসে কোনো অশান্তি মানুষ চায় না। বিএনপি সব ধরনের চেষ্টা করেছে, ধ্বংসের মধ্যে গিয়ে দেখেছে। মানুষের যে চাহিদা, মানুষের যে প্রয়োজন, সেই প্রয়োজন শেখ হাসিনা মিটিয়েছেন, শেখ হাসিনা মেটাচ্ছেন। জনগণকে কোনো আন্দোলনের সঙ্গে, কোনো দাবির পক্ষে যদি সম্পৃক্ত করতে না পারা যায় তাহলে সেটা কোনোদিনই গণআন্দোলনে রূপ লাভ করবে না। গণআন্দোলনে রূপ লাভ না করলে আন্দোলন ফানুসের মতো হয়ে যায়।
ঢাকা পোস্ট : এবারের কাউন্সিলে কাদের দাওয়াত দেওয়া হবে?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক দলকে আমরা দাওয়াত দেবো। আমরা সব সময় বিএনপিকেও দাওয়াত দিয়ে থাকি। এখনও দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তবে দাওয়াত দেওয়া হবে। এবার আমরা পরিমিতভাবে করছি। অত্যন্ত সাদামাটাভাবে করছি। দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের বন্ধুপ্রতীম রাজনৈতিক দল আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের গভীর সর্ম্পক রয়েছে। তাদেরও দাওয়াত দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা তাদের দাওয়াত দিচ্ছি না। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল কূটনৈতিকরা দাওয়াত পাবেন।
আরও পড়ুন : নির্বাচন আর সম্মেলনেই বছর পার
ঢাকা পোস্ট : আগামীতে তরুণ ও নারী নেতৃত্ব বাড়বে কি?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : নারীর ক্ষমতায়ন করেছেন শেখ হাসিনা। স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত সমস্ত জায়গাতে নারীর অবস্থানকে নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা। নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিয়ে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান শেখ হাসিনার। দলের মধ্যে নারী কোটা পূরণের চেষ্টা করা হবে।
ঢাকা পোস্ট : ছাত্রলীগের অসংখ্য সাবেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে রয়েছেন। তাদের বিষয়ে আপনার মতামত কী?
জাহাঙ্গীর কবির নানক : ছাত্রলীগ থেকে আসা রাজনীতিতে পরিপক্ক যারা রয়েছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত করার পক্ষে।
এমএসআই/এনএফ
