বিএনপিসহ সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান শিবির সভাপতির

ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে ভূমিকা পালনকারী সব সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বিভক্তি আর বিভাজনের রাজনীতি লক্ষ করছি। বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি বা দলের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যদি জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়, তবে তাদের জাতির বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রশিবিরের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালি পরবর্তী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, কারো ভূমিকার কারণে যদি ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তবে ছাত্রসমাজ অতীতে ফ্যাসিবাদের যে পরিণতি করেছে, ভবিষ্যতে আপনাদেরও সেই একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। তাই ছাত্রদল-বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে ভূমিকা পালনকারী সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাই।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, বাংলার এ পবিত্র ভূমি ইসলামী ভাবধারা ও জাতিসত্তার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু একাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের নামে ইসলামকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়। ইসলাম ও একাত্তরকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। সংবিধানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইসলাম-বিমুখ ও ইসলামবিদ্বেষী রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র হয়। বিভিন্ন স্থানে ইসলামি চিহ্ন মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চালানো হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষাঙ্গনকে ইসলামের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়।
শিবির সভাপতি বলেন, আমরা দেখেছি, রক্ষী বাহিনী ও লাল বাহিনীর নামে এ দেশে গুম, খুন ও হত্যার রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শেখ মুজিব বাকশাল কায়েম করেছিলেন। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় ছিল ভয়াবহ সংকটময়; ছাত্রসমাজ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে, শিক্ষাঙ্গনগুলো অস্ত্রের ঝনঝনানি, হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। নীতিহীন ছাত্ররাজনীতির কারণে দিশেহারা তরুণসমাজ তখন মুক্তির পথ খুঁজছিল। এ বাস্তবতায় ইসলামের আলোয় তরুণ সমাজকে আলোকিত করার ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আবির্ভাব ঘটে।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মেধা এবং নৈতিকতার চর্চার মধ্য দিয়ে ছাত্রবান্ধব ও গঠনমূলক ইতিবাচক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু ছাত্রসংগঠন ছাত্ররাজনীতির নামে পুনরায় অপরাজনীতি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে আতঙ্কিত করে তুলছে। তারা বার বার সেই পুরোনো ফ্যাসিবাদী রাজনীতির জায়গায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ক্যাম্পাসগুলোতে আবারও হত্যার রাজনীতি শুরু করার চেষ্টা করছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে ট্যাগিং ও অপবাদের রাজনীতি পুনরায় ফিরিয়ে এনে একটি মহল ছাত্রশিবিরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রাকে কোনো শক্তি থামিয়ে দিতে পারেনি, আগামীতেও পারবে না ইনশাআল্লাহ। ছাত্রশিবির গড়তে এসেছে, ধ্বংস করতে আসেনি। এ সংগঠন গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে ছাত্রজনতার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। সুতরাং মানুষের হৃদয় থেকে ছাত্রশিবিরে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রথম সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি ও সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে র্যালিতে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, ছাত্রশিবির সংগীতের রচয়িতা ডাক্তার মোহাম্মদ মোরশেদ আলী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ও কার্যকরী পরিষদের সদস্যরাসহ ঢাকা মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখাগুলোর দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন।
টিআই/এসএসএইচ